১ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:৫২

রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার

রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে গার্মেন্ট শিল্পের উত্তেজনা সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে শ্রমিক আন্দোলন। এই আন্দোলন দীর্ঘ এবং আরো সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা গোয়েন্দা সদস্যদের। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি কড়া নির্দেশনা জারি করা হয়েছে গার্মেন্ট শিল্পের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য। এ নিয়ে শিল্পমালিক এবং শ্রমিক নেতাদের সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দফায় দফায় বৈঠক চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে শ্রমিকনেতারা বলেছেন, চলমান পরিস্থিতিতে বেতনভাতা বৃদ্ধি ছাড়া তারা ঘরে ফিরবেন না।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত রোববার থেকে গাজীপুর, আশুলিয়া ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। সোমবার গাজীপুরে আন্দোলনরত গার্মেন্ট শ্রমিকদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ গুলি ও টিয়ার শেল ব্যবহার করে। ওই দিন দুপুরের দিকে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল রোড বন্ধ করে দেয়। এ সময় পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালালে রাসেল নামের এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাসেল মারা যান। এ ছাড়া আহত হয় আরো বহু শ্রমিক। এই ঘটনার পর শ্রমিকরা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী, গাজীপুর, টঙ্গী ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভে নামে। এসব স্থানে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ শত শত রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ দিকে আন্দোলনরত এসব শ্রমিকের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন রাজধানীর পুরানা পল্টন এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে। তারা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানান।

 

এ দিকে শ্রমিকদের আন্দোলন ক্রমেই বিস্তৃতি ঘটলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিষয়টির প্রতি কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরাও বিষয়টি নিয়ে জোরালোভাবে মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা মালিক এবং শ্রমিকনেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক শুরু করেছে।

এ দিকে জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেছেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের কোনো সংগঠন এই আন্দোলনের দায়িত্ব নিচ্ছে না। কিছু লোক ইন্ধন দিচ্ছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে তিনি বলেন, মজুরি বোর্ড বলছে মজুরি ঠিক হয়েছে। আসলে মজুরি যা নির্ধারণ হয়েছে তা ঠিক হয়নি। গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেছেন, শ্রমিকরা যে দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে তা ন্যায়সঙ্গত। স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রমিকরা মাঠে নেমেছে। এখানে গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনগুলোর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দ্রব্যমূল্য যেভাবে বাড়ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে তাতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের এই দাবি মেনে নেয়াটা মানবিক বিষয়।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, এই আন্দোলনের পেছনে কারো ইন্ধন আছে কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তাদের ধারণা এর পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের কোনো সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

শিল্প পুলিশ-১-এর পরিচালক সরোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, অধিকাংশ শ্রমিক শান্ত ও নিরীহ। কিছু শ্রমিক উচ্ছৃঙ্খলতা প্রদর্শন করছে। তাদেরকে বিভিন্ন মহল থেকে ইন্ধন দেয়া হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে কিছু মহলের পরিচয় নিশ্চিত করেছি।

 https://www.dailynayadiganta.com/first-page/788225