১ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:৫০

অবরোধে রাজধানী বিচ্ছিন্ন

মহাসড়ক যানবাহনশূন্য, বাসে আগুন, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, নিহত ৩

 

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে গতকাল ঢাকা থেকে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। জামায়াত নেতাকর্মীরা রেলপথ অবরোধ করলেও কিছু ট্রেন চলাচল করেছে। তবে যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই কম। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মিছিল, অবস্থান ও সংঘর্ষের কারণে আতঙ্কে সাধারণ মানুষের চলাচল ছিল খুবই কম। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসার বাইরে বের হয়নি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। পল্টনে দুপুরে আল রাজী কমপ্লেক্সে সরকারপন্থীদের একটি অংশ হামলা-ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। সকালে মাতুয়াইল ও চাঁনখার পুলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে অনেক নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্য আহত হয়। সেখান থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। ভোরে গাবতলীতে অবরোধ কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে টেকনিক্যাল মোড় থেকে জামায়াতের মিরপুর থানা আমির আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ। অপর দিকে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় শিবিরের তিন কর্মী আহত হয়। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অবরোধে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কার্যালয় ও মোড়ে মোড়ে লাঠি হাতে অবস্থান নেয়।

 

গতকাল অবরোধের প্রথম দিনে পুরো ঢাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানবাহনের সংখ্যা খুব একটা দেখা যায়নি, ছিল না চিরচেনা যানজটও। ঢাকার মহাখালী, বনানী, গুলশান, মিরপুর, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গ্রিন রোড, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, নাবিস্কো, পান্থপথ, কলাবাগান, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, সংসদ ভবনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সীমিত সংখ্যক বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে মুগদা বিশ্বরোড এলাকায় দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় খুব কম যান চলাচল করছে। প্রতি দিন এই সময়ে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে গাড়ির জটলা দেখা দিলেও তেমনটি দেখা যায়নি আজ। দীর্ঘ সময় পর পর আসছিল গাড়িগুলো। মুগদা মেডিক্যালের সামনে এক যাত্রী বলেন, অবরোধে একটু তো আতঙ্ক থাকবেই। পল্টনে একটা জরুরি কাজ আছে। কাগজ জমা দিতে হবে। এ জন্য আতঙ্ক থাকলেও যাচ্ছি। একই এলাকার আরেক যাত্রী বলেন, মতিঝিলে অফিস। বেসরকারি চাকরি। হারতাল-অবরোধ যাই হোক। উপায় নেই। যেতেই হবে। আজকে রাস্তায় জ্যাম নেই। তার পরেও ভয় লাগে। যদি কেউ আইসা মাইরা দেয়। এ দিকে সড়কে মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খা বাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে। দফায় দফায় র‌্যাবের টহল দেখা গেছে এই সড়কে।
গাবতলী, মহাখালি ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। টার্মিনালগুলোতে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে রাখা হয়। দুপুরে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা যায় দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়ছে না। ফলে দূর-দূরান্তের কোনো যাত্রী বাড়ি যেতে পারছেন না মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে। একই অবস্থা দেখা যায় গাবতলী ও সায়েদাবাদে।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে খুবই কম লঞ্চ ছেড়ে গেছে। যেগুলো ছাড়া হয় তাতেও যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই কম। সকালে সদরঘাট লঞ্চঘাটে দেখা যায় বেশির ভাগ লঞ্চই নোঙর করা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দু-একটি লঞ্চ চলাচল করলেও বেলা গড়ানোর পর যাত্রী মিলছে না সদরঘাটে। ফলে লঞ্চগুলো শিডিউল ভেঙে দেরি করে ছাড়ছে। অন্য দিকে ঘাটে যেসব যাত্রী রয়েছেন তারা দীর্ঘ অপেক্ষা করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ দিকে চাঁদপুরগামী লঞ্চঘাটের সব লঞ্চ সরিয়ে রাখা হয়েছে। ঘাটে এমভি ঈগল নামে শুধু একটি লঞ্চ রয়েছে। সেই লঞ্চেও যাত্রীর দেখা নেই। অন্য দিকে ভোলাগামী এমভি ওয়ালিদ লঞ্চ বিকেল ৪টায় ছাড়ার কথা ছিল। সে লঞ্চেও আশানুরূপ যাত্রী হয়নি বলে জানিয়েছেন লঞ্চের কর্মচারীরা। ফলে এটিও নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যায়নি। চাঁদপুরগামী যাত্রী আকতার হোসেন বলেন, ঘাটে এসেছি বেলা ১১টায়। কিন্তু দুপুর সাড়ে ৩টায় এমভি ঈগল-৯ নামে একটি লঞ্চ ঘাটে আছে। এটায় উঠেছি। তবুও এক ঘণ্টা বসে থাকতে হবে। লঞ্চঘাটের শ্রমিক ফয়সাল বলেন, হরতালের দিনেও টুকটাক যাত্রী ছিল। কিন্তু আজ ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা তবুও যাত্রী আসছে না। সকাল থেকে মাত্র দুটি লঞ্চ ছাড়ছে। এমভি ঈগল লঞ্চের কর্মচারী আরিফ হাসান বলেন, যাত্রীর আশায় বসে আছি। অবরোধের কারণে যাত্রী নেই। এখনো লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী হয়নি। টিকিটও বিক্রি হচ্ছে না। ৫০ হাজার টাকা লস দিতে হবে আজ। মানুষ ভয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে না। লঞ্চ থেকে নেমে বাসায় কিভাবে যাবে সেই ভয়ে আছে। এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, একটা লঞ্চ কমপক্ষে ৩৫০-৫০০ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। সেখানে আজ ২০০ যাত্রী হতে কষ্ট হচ্ছে। এত টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে তো কেউ লঞ্চ চালাবে না। অন্য দিকে অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেও ট্রেন চলাচল করেছে। তবে ছিল যাত্রী সঙ্কট। কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে ট্রেন চলাচল। তবে যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় স্টেশনেও যাত্রী কিছুটা কম দেখা গেছে। অনেক আসন খালি রেখেই ট্রেন ছেড়েছে। এক যাত্রী বলেন, যেহেতু হরতাল-অবরোধ চলতেছে। আতঙ্ক তো কিছুটা থাকবেই। তার পরও জরুরি প্রয়োজনে যেতে হচ্ছে।

অবরোধের প্রথম দিনে বিএনপির উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে মিছিল বের হয়। এ সময় দুটি স্থানে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও নৌ ও রেলপথ অবরোধ করে নেতাকর্মীরা। গাবতলীতে তাদের ৫ জন নেতাকর্মী আটক ও তিনজন আহত হয়। গতকাল রাতেও তারা যাত্রাবাড়িতে সড়ক অবরোধ করে। এ ছাড়া ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোটসহ বিভিন্ন দল অবরোধ পালনে মিছিল-সমাবেশ করে।

মাতুয়াইলে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, আটক ৩০ : ঢাকার মাতুয়াইলে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেশব্যাপী অবরোধের সমর্থনে বাদশা মিয়া রোডে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় দফায় দফায় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কিছু দেশীয় বোমা বিস্ফোরিত হয়। ডিএমপির ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস জানান, পরে তা’মীরুল মিল্লাত ও মিন্টু চত্বর এলাকা থেকে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চাঁনখারপুলে সংঘর্ষ : রাজধানীর চাঁনখারপুলে বিএনপির সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বেলা ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তিন কর্মকর্তা আহত হন। আহতরা হলেন- চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) আব্দুল হালিম (৩৮), ওসি (অপারেশনস) জাকির হোসেন (৪১) ও পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভঙ্কর রায় (৩৯)। তারা সবাই মুখে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাসে আগুন : রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভান। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন বলেন, প্রেস ক্লাবের সামনে একটি বাসে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে দুটি ইউনিট পাঠানো হয়। তবে কে বা কারা আগুন দিয়েছে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। আগুনে বাসটির ওপরের অংশ পুড়ে যায়।

পল্টনে আল রাজী কমপ্লেক্সে ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ : রাজধানীর পল্টন এলাকার আল রাজী কমপ্লেক্সে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে তারা ককটেল ফোটায় এবং ভবনের সামনে রাখা একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। বেলা দেড়টার দিকে কমপ্লেক্সটিতে অর্ধশতাধিক যুবক ভাঙচুর চালায়। পরে তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখান থেকে পিছু হটে। তাদের সবার হাতে লাঠি এবং মাথায় হেলমেট ছিল বলে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, ভাঙচুরকারীরা সরকারদলীয় কর্মী। ভবনটি জামায়াতের এমন অভিযোগে সেই ভবনে হামলা চালানো হয়।

কুলিয়ারচরে ২ বিএনপি নেতা নিহত
কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে বিল্লাল হোসেন (৪০) ও রেফায়েত উল্লাহ তনয় (২৩) নামে দুইজন বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। হামলায় কুলিয়ারচর থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফাসহ কমপক্ষে ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

নিহত বিল্লাল হোসেন স্থানীয় ছয়সূতী ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি ও মাধবদী গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে। ইউনিয়ন যুবদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ তনয় বড় ছয়সূতী চকবাজার এলাকার কাউসারের ছেলে। তিনি ঘটনাস্থলেই গুলিতে মারা যান। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রেফায়েত উল্লাহ তনয়ের চাচা মো: আবুল কালাম ও ভগ্নিপতি ফয়সাল মিয়া বলেন, পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের সময় রেফায়েত উল্লাহ গুলিতে আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি। ঘটনার পর একদল দুর্বৃত্ত ছয়সূতী কাঁঠালতলী এলাকায় ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে একটি ওষুধের পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

চট্টগ্রামে দুই বাসে আগুন, অর্ধশত গ্রেফতার
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ভোরে বাসে আগুন এবং বিক্ষিপ্তভাবে অবরোধকারীদের ওপর পুলিশি হামলা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। দূরপাল্লার কোনো বাস নগর ছেড়ে যায়নি। সরকার বিরোধীদের অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও শাসকদলের মারমুখী অবস্থানের কারণে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ অতিপ্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। ফলে অনেকটাই ফাঁকা নগরে অভ্যন্তরীণ রুটের কিছু গণপরিবহন সড়কে নামলেও যাত্রী সঙ্কটে পড়ে তারা। অবরোধকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপির ৩৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি করেছে দলটি। এ ছাড়া পিকেটিংরত অবস্থায় জামায়াতের ১৩ জনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে দলটি।

নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর রাস্তায় মাঝে মধ্যে কিছু গণপরিবহন চলছে। কিন্তু এসব যানবাহনের অধিকাংশ আসন খালি। গতকাল নগরীর কোথাও নিত্যদিনের মতো যানজটের চিত্র চোখে পড়েনি। দূরপাল্লার কোনো বাস নগর ছেড়ে যায়নি। পণ্যবাহী গাড়িও চলেছে সীমিতসংখ্যক। আতঙ্কিত নগরবাসীর বেশির ভাগই নিজেদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাননি। ফলে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীও উপস্থিত হয়নি। ভোর থেকে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে মিছিল করে পৃথকভাবে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

এ দিকে মঙ্গলবার ভোরে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার বালুছড়া ট্যানারি বটতল এলাকায় এবং সকালে ইপিজেড থানার সি-মেনস হোস্টেল এলাকায় পৃথক দু’টি বাসে আগুন দেয়া হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে কারা এসব বাসে আগুন দিয়েছে তা পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া সকাল ১০টার দিকে নগরীর আকবর শাহ এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা দিলে পুলিশ সেখান থেকে ১৪ জনকে আটক করে। আটককৃতদের দেখানো মতে পুলিশ ৭টি ককটেল উদ্ধারের দাবি করলেও নগর বিএনপির পক্ষ হতে এ ঘটনাকে পুলিশের সাজানো নাটক বলে অভিহিত করা হয়েছে। পুলিশ সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে টিআর শেল ও গুলি ছুড়ে বলেও সংগঠনটি জানিয়েছে।

সিলেটে বিএনপি-পুলিশ পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, যুবদল নেতা নিহত
সিলেট ব্যুরো জানায়, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিনে সিলেটে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবদল নেতা নাম জিলু আহমদ দিলু (৪৫) গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইলাইগঞ্জ গ্রামের মৃত ইলিয়াস মিয়ার ছেলে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে বিএনপি দাবি করছে, লালাবাজারে পুলিশের ধাওয়ার পর গাড়ি চাপা দিয়ে যুবদল নেতা দিলু আহমদ জিলুকে হত্যা করা হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করে পুলিশ দেখে পালানোর সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে সকাল ৯টায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে মোটরসাইকেল নিয়ে যান দিলু আহমদ দিলু। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি ধাওয়া দিয়ে তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত হন দু’জন। পরে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। বেলা ২টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুর খবর আসে। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ জানান, জিলুকে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। এরপর তার মৃত্যুর খবর এসেছে। জিলুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আড়াইহাজারে রণক্ষেত্র, অর্ধশতাধিক আহত, বাস ভাঙচুর
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ও আড়াইহাজার সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাঁচরুখী এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার সময় আড়াইহাজার থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবির মোল্লা, এএসআই আবদুল মতিন ও কনস্টেবল নুরুল হকসহ অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য নুরুল হকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৪ বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাঁচরুখী এলাকায় অবরোধের সমর্থনে বিএনপি নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলি ছুড়ে। একপর্যায়ে পুলিশকে ঘিরে ফেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাস ভাঙচুর হয়। একপর্যায়ে যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটাসহ সংঘর্ষে যোগ দিলে তাদেরকেও ধাওয়া দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন যুবলীগ কর্মী আহত হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংঘর্ষ থামে।

অবরোধে স্থবির গাজীপুর
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানান, অবরোধের সমর্থনে মঙ্গলবার গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের হিজলতলী এলাকা থেকে বিএনপির একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি মহাসড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে কালিয়াকৈর বাজারে সমাবেশ করে। সদর মেট্রো থানার শিববাড়ি এলাকায় বিএনপি ও জজকোর্ট এলাকায় আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা বিএনপি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আলাদা বিক্ষোভ মিছিল করে। কালিয়াকৈর পৌর জামায়াত ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের চন্দ্রা এলাকায় বিক্ষোভ করে। এ ছাড়া গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী-কালীগঞ্জ-নরসিংদী সড়কের মিরের বাজার ও পূবাইলে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী কলেজ গেট ও বোর্ডবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও মহানগরবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। অবরোধ চলাকালে মাঝে মধ্যে দূর পাল্লার এনা ও আলম এশিয়া পরিবহনের কয়েকটি বাস ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দ্রুত গতিতে চলতে দেখা গেলেও ভেতরে কোনো যাত্রী ছিলো না। তবে গাজীপুর-ঢাকা রুটে খুবই সীমিত সংখ্যক বিআরটিসি দ্বিতল ও লোকাল মিনি বাস চলতে দেখা গেছে। এসব বাসে যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই কম। সড়ক মহাসড়কগুলোতে রিকশা চলাচলও সীমিত ছিল।

নোয়াখালীতে গ্রেফতার ১৫
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রথম দিন গতকাল মঙ্গলবার শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। সকাল থেকে জেলার সোনাপুর বাস স্টেশন থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস স্টেশন ছেড়ে যায়নি। ট্রাক-পিকআপ চলাচল করেনি। জেলার ৯টি উপজেলার আভ্যন্তরীণ রুটে কিছু সংখ্যক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। সকালে জেলা শহর মাইজদী ও জেলার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীতে জামায়াত বিএনপির উদ্যোগে আলাদাভাবে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের হয়। এ সময় নোয়াখালী-ফেনী মহাসড়কের জমিদার হাট ও ছমির মুন্সির হাটে পিকেটাররা গাছের গুঁড়ি দিয়ে সড়ক অবরোধ করে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত ও বিএনপির ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

অচল বগুড়া, ১০টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, আহত ২০
বগুড়া অফিস জানায়, অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার বগুড়ার মহাসড়ক ও সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। ব্যস্ততম ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক, বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক, বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক যানবাহন শূন্য ছিল। মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ সময় বনানী, লিচুতলা, মাটিডালী, চারমাথা ও গোকুল, বাঘোপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, কমপক্ষে ১০টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে কমপক্ষে ২০ জন আহত এবং নাশকতা মামলায় চারজনকে আটক করা হয়। সকালে সদরের মাটিডালী বিমানমোড়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বগুড়া রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেন। সকালে মাটিডালী ও এরুলিয়া এলাকায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের তিনটি বাস ভাঙচুর করলে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন যাত্রী।

বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, অবরোধকারীরা শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের তিনটি বাস ভাঙচুর করেছে। বেলা আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার বাঘোপাড়া এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এজেআর নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এতে গাড়ির সামনের অংশ পুড়ে যায়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে সকাল থেকে শহর বিএনপির আটটি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা বনানী এলাকায় অবস্থান নেন। তারা মহাসড়কে মিছিল ও পিকেটিং করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের বনানী বাইপাস এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজিত জনতা তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়াসহ কয়েকটি ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন ভাঙচুর করে।

যশোরে সর্বাত্মক অবরোধ পালিত
যশোর অফিস জানায়, যশোরে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা রাজপথ অবরোধ সর্বাত্মকভাবে পালিত হচ্ছে। সকাল থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। যশোর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, মণিহার বাসস্ট্যান্ড, চাঁচড়া মোড়, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে কোথাও কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। মানুষ বিকল্প হিসেবে ইজিবাইক ও থ্রি হুইলারে নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। বিএনপি অবরোধের পক্ষে সকালে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে সকাল ৯টার পরে মিছিল হয়। এর আগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের নেতৃত্বে যশোর-মাগুরা সড়কে মিছিল করে বিএনপি। অন্য দিকে শহরে অবরোধ বিরোধী কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন। মোটরসাইকেলে করে তারা শহরের বিভিন্ন সড়কে মহড়া দেয়। মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে।
এ দিকে সোমবার রাতে পরিবহন সেক্টরের নেতাদের সাথে বৈঠক করে অবরোধে গাড়ি চালানোর দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। পরিবহন নেতারা ওই সময় গাড়ি চালাতে রাজি হন। আওয়ামী লীগ নেতারা তাদেরকে আশ্বস্ত করেন, অবরোধে গাড়ি চালাতে গিয়ে যদি কোনো রকম ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে তার ক্ষতিপূরণ তারা দেবেন। কিন্তু সকালে কোনো গাড়ি চলেনি।

রংপুরে হাতেগোনা গণপরিবহন, গ্রেফতার ৮
রংপুর অফিস জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক পাহারার মধ্য দিয়ে রংপুরে পালিত হচ্ছে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর অবরোধের প্রথম দিন। সড়ক মহাসড়কগুলোতে পরিবহন চললেও তা ছিল হাতেগোনা। যাত্রী সঙ্কটের কারণে বাস স্ট্যান্ডগুলো থেকে বাস ছাড়তে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। এ দিকে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত পিকেটিং ও মিছিল করেছে অবরোধকারীরা। গ্রেফতার করা হয়েছে আটজনকে।

কুুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্ছু মোল্লা ও জেলা যুবদলের সহসভাপতি মেজবাউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সৈয়দ আশিকুর রহমান জানান, তিনজনকে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তবে কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানাননি।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকারকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে পাবনা শহরের রাঘবপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী জানান, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানানো হবে। জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ মন্টু বলেন, চলমান আন্দোলন কর্মসূচি বানচালের জন্য সরকার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে; কিন্তু তাদের আশা পূরণ হবে না।

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, পাবনার ঈশ্বরদীতে মঙ্গলবার সকালে থেকেই মাঠে দেখা গেছে জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মীদের। জামায়াতে ইসলামী ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় বিক্ষোভ ও পিকেটিং করে। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে ঈশ্বরদী যুবদল।

মানিকগঞ্জে পুলিশের গুলি, ৩৫৯ জনের বিরুদ্ধে চার মামলা
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জে অবরোধের প্রথম দিনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি, বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত, পাঁচজন গ্রেফতার ও বিএনপির হরতাল চলাকালে যানবাহন পোড়ানোর অভিযোগে পৃথক থানায় চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা ও সাধারণ সম্পাদক এস এ কবির জিন্নাহসহ ৩৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে গতকাল মঙ্গলবার অবরোধের বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচজনের নামে নতুন করে কোনো মামলা হয়নি। তাদের আগের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি আব্দুর রউফ সরকার।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জেলা শহরের সেওতা থেকে জেলা বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি মানরা এলাকা দিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে উঠতে গেলে পুলিশ ধাওয়া করে। বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে বিএনপির ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে বিএনপি নেতা অ্যাভোকেট আরিফ হোসেন জানিয়েছেন। মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি আব্দুর রউফ সরকার বলেন, পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপি নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

ময়মনসিংহে বাসটার্মিনাল ফাঁকা, গ্রেফতার ৪৪
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় বিএনপির মিছিল বের হয়। মিছিলটি রেলক্রসিংয়ে পৌঁছলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। ওই সময় মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশের ধাওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় রাস্তার পাশে থাকা বিআরটিসি বাসসহ যানবাহনের গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে অবরোধকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, পুলিশের অবস্থান দেখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।

এ দিকে অবরোধের প্রথম দিনে নগরীর আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল ছিল প্রায় ফাঁকা। সকালে মাসকান্দা বাসটার্মিনাল থেকে হাতের গোনা কয়েকটি বাস তিন-চারজন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাস চলাচল সীমিত হয়ে যায়। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথসহ ময়মনসিংহ অঞ্চলের রেলপথে ট্রেন চলাচল করেছে। ময়মনসিংহে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।

ধামরাই (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, ঢাকার ধামরাইয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শ্রীরামপুর এলাকায় একটি স্কুলবাসসহ দু’টি বাসে ভাঙচুর হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তির নাম মোস্তফা। পুলিশ জানায়, সকাল ১০টার দিকে বিএনপি সমর্থকরা শ্রীরামপুর এলাকায় জড়ো হন। সে সময় দুর্বৃত্তরা একটি স্কুলবাস ও আরেকটি যাত্রীবাহী বাসে ভাঙচুর চালায়। তবে এতে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে গতকাল সকালে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া নাঙ্গলকোট-লাকসাম আঞ্চলিক সড়কের উপজেলার মক্রবপুর এলাকায় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। দুপুরে উপজেলার বাঙ্গড্ডা বাজারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করেছে। আটকৃতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছে। অবরোধের আগের রাত থেকেই মহাসড়ক ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে কঠোর অবস্থানে আছে বিজিবি ও পুলিশ। এ দিকে দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস তেমন দেখা যায়নি।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা বলেন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরিতে কোনো যানবাহন ছিল না। তবে দু-একটি প্রাইভেট কার ও স্থানীয় বালুভর্তি ট্রাক, রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল তৎপর। সার্বিক নিরাপত্তায় তৎপর ছিল পুলিশ বাহিনী। 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/788228