৩১ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:০৫

এনবিআরের প্রতিবেদন

ডলার সংকটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয়

 

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে সরকার। কিন্তু ডলার সংকটের ফলে ঋণাত্মক আমদানিসহ চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এমনকি অর্থনীতিতে এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতেও কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আহরণ কঠিন হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চ্যালেঞ্জিং এ সময়ে গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে এনবিআরকে।

এনবিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর থেকে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাত থেকে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভ্যাট অফিসগুলোর তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর এ খাতে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ হতে পারে। সে হিসাবে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসতে পারে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণে কর্মপরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

বাড়তি পরিকল্পনার আওতায় তামাকজাত পণ্যে সংশোধিত করনীতি প্রয়োগের মাধ্যমে রাজস্বে অতিরিক্ত ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা যোগ হতে পারে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন, পলিপ্রোপিলিন ফাইবার, সফটওয়্যার, এলপিজি সিলিন্ডারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ভ্যাট ছাড় তুলে দেওয়া এবং সিগারেট, জর্দা, গুল, প্লাস্টিক পণ্য, অ্যালুমিনিয়াম এবং সানগ্লাসে নতুন করে কর আরোপ করায় বাড়তি ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব পাওয়া যেতে পারে। স্বচ্ছতার সঙ্গে ভ্যাট আদায়ে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি সিস্টেম বাস্তবায়নের ফলে বাড়তি ৪০০ কোটি টাকার রাজস্ব আসতে পারে। এসব খাত থেকে মোট ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আহরণ হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়তি রাজস্ব আহরণের বিষয়টি মূলত নানা ধরনের পূর্বশর্তের ওপর নির্ভরশীল। মোট ভ্যাটের ৪০ শতাংশই আসে উৎপাদন থেকে। ৫ শতাংশ বাণিজ্য খাত থেকে আসে। কাঁচামাল আমদানির সঙ্গে উৎপাদন খাত নির্ভরশীল। এ ছাড়া বাণিজ্য খাতের ভ্যাটও নির্ভর করে ভোগ্যপণ্য আমদানির পাশাপাশি পণ্য উৎপাদনের ওপর। কিন্তু চলতি অর্থবছর আমদানি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে তা রাজস্ব আহরণে বড় বাধা হতে পারে। তাই আমদানিতে স্থিতিশীলতা আনতে বিশেষ করে কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য আমদানি বাড়াতে বিদ্যমান জ্বালানি সংকট কমিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদন স্বাভাবিক করতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে আসে ভ্যাটের ৮ থেকে ১০ শতাংশ রাজস্ব। কিন্তু চলতি অর্থবছর সরকার এবং অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যে বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। ফলে এসব খাত থেকে রাজস্ব কমবে বলেই ধরা হচ্ছে। তাই চলতি অর্থবছরে ভ্যাট থেকে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে, যা সার্বিক রাজস্বে প্রভাব ফেলতে পারে। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৭৬ হাজার ৭৫১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা কম।

এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সমকালকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণ বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে এসব বলে দায় এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাজস্ব আদায়ে গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে বের হয়ে এনবিআরকে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। যেসব বিদেশি কর না দিয়েই অর্থ নিয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। সরকারি অন্তত ৪০ ধরনের সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে করদাতার সংখ্যা আরও বাড়বে। এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের সহায়তা নিয়ে ঢাকা শহরের প্রতিটি বাড়ির মালিককে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আয়করের আওতায় আনতে হবে। আদালতে মামলা থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে শুধু চিঠি দিলাম, উত্তর পেলাম না– এমন অবস্থায় থাকলে হবে না। প্রয়োজনে এ সংকটময় মুহূর্তে কয়েকটি টাস্কফোর্স গঠন করে এসব উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও আজ পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের প্রক্রিয়া অটোমেশন করা সম্ভব হয়নি। এখনও রাজস্ব প্রশাসনে জনবলে ঘাটতি রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে এনবিআর কেন পিছিয়ে তার জবাব জানা নেই।’

 

https://samakal.com/economics/article/2310204961