৩১ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:২৯

রাতেই কেন্দ্রে ব্যালট চায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

 

রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি হওয়ার বিতর্ক এড়াতে নির্বাচনের দিন সকালেই কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর বিষয়ে ভাবছে নির্বাচন কমিশন। তবে বিষয়টির সঙ্গে একমত নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পর্যাপ্ত জনবল সংকট থাকায় ভোটের দিন সকালে সকল ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছানো অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ জন্য আগের রাতেই ব্যালট পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গতকাল নির্বাচন কমিশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এমন পরামর্শ দেয়া হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আসেনি বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর পরিবেশ বুঝে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানিয়েছে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠক সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে আসলে তাদের এক ধরনের প্রস্তুতি থাকবে। আর না আসলে তারা এক ধরনের প্রস্তুতি নেবেন- এমনটা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন। 

এদিকে এর আগে ইসি’র সঙ্গে পুলিশ সুপারদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণেও সকালে ব্যালট পাঠানোর বিষয়ে আপত্তি তোলে পুলিশ। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতা রয়েছে। অনেক কেন্দ্র দুর্গম সেখানে সকালে ব্যালট কেন্দ্রে পৌঁছানো কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। 

সূত্র বলছে-গতকালের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন অনেক বেশি দক্ষ (ট্রেন্ড)। বিগত ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে যে নৈরাজ্য ও তাণ্ডব চালানো হয়েছিল এবার ওই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হলে তা কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম পুলিশ। ২০১৪ সাল আর ২০২৪ সাল এক নয় বলেও নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। তারা বলেছে, শুধু সংখ্যার দিক থেকে নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন টেকনোলজির দিক থেকেও অনেক বেশি ট্রেন্ডআপ। যেকোনো নাশকতামূলক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম। তফসিল ঘোষণায় কোনো সমস্যা নেই। বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় কমিশনকে আশ্বস্ত করে এসব মন্তব্য করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। এ ছাড়া ব্যক্তির নিরাপত্তার স্বার্থে এবার বৈধ অস্ত্র জমা না রাখা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো, নাশকতামূলক কোনো ঝুঁকি নেই বলেও জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

ওদিকে অতীতে সংসদ নির্বাচনগুলোতে কেন্দ্র পাহারায় একজন অস্ত্রধারী পুলিশের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করলেও এবার কেন্দ্র পাহারায় দু’জন অস্ত্রধারী সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে কেন্দ্র পাহারার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যা সভায় ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আনসার সদস্যের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর পক্ষ থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে, তাদের প্রধান কাজ সীমান্ত সুরক্ষিত রেখে বাকি কাজে মনোযোগ দেয়া। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তারা দায়িত্ব পালন করলেও সব বিজিবিকে নির্বাচনে কাজে লাগানো সম্ভব নয়। তবে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ৯০০ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করেছিল, এবার সংখ্যা বাড়িয়ে তা সর্বোচ্চ ১১০০ থেকে ১২০০ প্লাটুন দিতে পারবে। 

এদিকে বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন-পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, কোন পদ্ধতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়গুলো সভায় আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তথ্য উপস্থাপন করেছে, বিভিন্ন বাহিনী প্রধান তাদের সক্ষমতা কী আছে, অতীতে তাদের জনবলকে কীভাবে কেন্দ্রে ও অন্য কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে; দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে তা তুলে ধরা হয়েছে। ভোটের আগে আগে এ ধরনের আরও অনেক সভা হবে বলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব আলোচনার বিষয় তুলে ধরে বলেন, হরতালের পর একটি বড় রাজনৈতিক দল হরতাল শেষে সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন মতে এখন পর্যন্ত কমিশনের কাছে মনে হয়েছে এখন পর্যন্ত পরিবেশ সন্তোষজনক রয়েছে। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের যে প্রতিবেদন-এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনে বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। যেহেতু গতকাল হরতালের পর তিন দিনের অবরোধ দিয়েছে বিএনপি, সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছে যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি না ঘটে।

জাহাংগীর আলম বলেন, কমিশনাররা বক্তব্য শুনেছেন এবং কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এ আলোকে পরবর্তীতে পরিপত্র জারি, কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে মোতায়েন করা হবে, পরবর্তীতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের যেসব ধাপ রয়েছে, ভোটের তফসিল ঘোষণা থেকে প্রতীক বরাদ্দ, তফসিলের আগে-পরে, ভোটের তারিখ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার কবে পাঠানো হবে সকালে নাকি আগের রাতে তা নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে। এখনো অনেক সময় রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, মিটিং হবে, পরিপত্র জারি হবে, ওই সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

https://mzamin.com/news.php?news=81100