৩১ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:২১

রিজার্ভ আবারো ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমছে

 

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আবারো এক বিলিয়ন ডলারের বেশি কমে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের দায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পরিশোধ করতে হবে আগামী সপ্তাহে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত মজুদ আরেক দফা কমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

 

ব্যাংকাররা জানান, ডলারের আন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বহিঃপ্রবাহ বেশি হচ্ছে। আবার রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশে গেলেও কাক্সিক্ষত হারে রেমিট্যান্স আসছে না। বরং রেমিট্যান্স প্রবাহ রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায় গত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৪ কোটি ডলার, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। শতকরা হিসাবে আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় গত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে পৌনে ১৩ শতাংশ। যেখানে আগের বছরে একই সময়ে এসেছিল ১৫৪ কোটি ডলার। এ দিকে সামগ্রিক আমদানি দায় কমছে না। বিশেষ করে আগের বকেয়া এলসি ও চলতি এলসির দায় মেটাতে হচ্ছে আন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বেশি হারে। এর ফলে প্রতি মাসেই কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২৫ অক্টোবর বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল দুই হাজার ৬৭০ কোটি ডলার। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল তিন হাজার ৫৮০ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ গত ২৫ অক্টোবরে ছিল দুই হাজার ৮৯ কোটি ডলার।
জানা গেছে, প্রতি দুই মাস পর পর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দায় পরিশোধ করতে হয়। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে এ আকুর দায় পরিশোধ করতে হয় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। আর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আকুর দায় পরিশোধ করতে হবে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের উপরে, যা আগামী সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ হিসাবে এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। প্রকৃত হিসাবে সামান্য কমতে বা বাড়তে পারে। আকুর দায় পরিশোধ করা হলে রিজার্ভ ১৯ বিলিয়নের ঘরে নেমে যাবে বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত মজুদ ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে রাখতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ডলার আহরণ করছে অনেক ব্যাংকই এলসি খুলেছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ। এর ফলে প্রতি মাসেই তারা আমদানির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে ঘাটতির মুখে পড়ছে। কিন্তু বাজার থেকে ডলার কিনতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুধু সরকারের অতি প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় বিশেষ করে বিপিসির জ্বালানি তেল, বিসিআইসির সার, বিএডিসির ভোগ্যপণ্যসহ অতি প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় দেখেশুনে ব্যাংকগুলোকে কিছু ডলার সরবরাহ করছে। এর পরেও বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ । অথচ আগের অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে হয়েছিল সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের মতো।

যে হারে প্রতি মাসে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরো চাপে পড়ে যাবে। তখন আপদকালীন দায় মেটানো কষ্টকর হবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির বিকল্প নেই।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/787972