৩০ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার, ৫:০৯

টিয়ার শেলে আহত সাংবাদিক নেতার মৃত্যু

 

রাজধানীর নয়াপল্টনে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের সময় পুলিশের টিয়ার শেলে রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে আহত সাংবাদিক নেতা রফিক ভূঁইয়া মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল দুপুরে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রফিকের লাশ রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত দুই ছেলে দেশে ফেরার পর তাকে দাফন করা হবে। তার মৃত্যুতে গতকাল রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। এতে হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। এর আগে শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ চলাকালীন পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ শুরু হলে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ অসংখ্য টিয়ার শেল ছুড়ে। এ সময় মাদারটেকের বাসা থেকে রিকশায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে যাওয়ার পথে সেগুনবাগিচায় তিনি পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলে রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে যান। এতে তার মাথায় আঘাত লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। তার মাথায় রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাকে বারডেম হাসপাতালে নিলে ডাক্তার জানান, মাথায় মারাত্মক আঘাতে ভেতরে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল তিনি মারা যান।

তিনি ডিইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ও বিএফইউজের প্রথম কমিটিতে নির্বাহী সদস্য ছিলেন। এক সময় তিনি অবিভক্ত চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রথম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তার মৃত্যুতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও নেতারা শোক জানিয়েছেন।

এদিকে সাংবাদিক নেতা রফিক ভূঁইয়ার মৃত্যুতে গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় ঘুরে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে আবার প্রেস ক্লাবে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল থেকে রফিক ভূঁইয়ার মৃত্যুর প্রতিবাদে ও সাংবাদিক হামলা বন্ধের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, বিএফইউজের সাবেক সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, সিনিয়র সাংবাদিক আবুল কালাম মানিক, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক ও যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, প্রচার সম্পাদক আবুল কালাম, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক রফিক লিটন, দফতর সম্পাদক ইকবাল মজুমদার তৌহিদ, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য নিজাম উদ্দিন দরবেশ, এম মোশাররফ হোসেন, গাজী আনোয়ারুল হক, আব্দুল্লাহ মজুমদার, তালুকদার রুমি, সাবেক নির্বাহী সদস্য এইচ এম আল আমিন, মো: আবু হানিফ, এম এ মোনায়েম কালবেলা ইউনিট চিফ গিয়াস উদ্দিন রাকিব, সদস্য সর্দার আব্দুল কাদের, সর্দার মতিন, ফয়জুল্লাহ ভূঁইয়া মানিক, এ এস এম রাসেল পাটোয়ারী, জিয়াউর রহমান প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশে ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, এই সরকারের কাছে আর কোনো দাবি নয়। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে সব দাবি আদায় করা হবে। সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়াসহ এ পর্যন্ত যে ৬০ জন সাংবাদিক এই সরকারের আমলে হত্যার শিকার হয়েছে তাদের হত্যার বিচার এদেশের মাটিতেই হবে।


সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বলেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত সাংবাদিকরা তাদের হামলার শিকার হয়েছে। তিনি নিহত সাংবাদিক নেতার হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান। প্রবীণ সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়ার জন্ম ফেনীর দাগনভূঁইয়ায় ১৯৫১ সালে। দুই ছেলেমেয়ে ছাড়াও তিনি অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন চট্টগ্রাম থেকে। সেখানে দৈনিক সমাচারের প্রতিনিধি ছিলেন। এরপর ঢাকায় এসেও বিভিন্ন সংবাদপত্রে কাজ করেছেন। নিজেও একাধিক সংবাদপত্র প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন কানাডা প্রবাসী থাকাকালীন সেখানেও সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। চট্টগ্রামে থাকাকালে রফিক ভূঁইয়া ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/787751