২৭ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার, ৭:১৮

পেঁয়াজ-আলু কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা

আরও একবার বাড়ল আলু ও পেঁয়াজের দাম। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে আলুর কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। একইভাবে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ডালের দামও বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। সবচেয়ে বড় লাফ দেখা গেছে টমেটোর দামে। দু’দিনের ব্যবধানে সালাদের অন্যতম উপকরণটির দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। একইভাবে বাড়তির তালিকায় রয়েছে চাল ও আটা। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় দু-তিনটি সবজির দাম কমেছে ১০ টাকার মতো।

পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলেন, বেশির ভাগ দেশীয় পণ্যের মজুত ফুরিয়ে আসছে। আগের তুলনায় কমেছে আমদানিও। ফলে চাহিদার তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। নতুন ফসল ওঠার আগে বিশেষ করে আলু-পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয় কিনা– এ ভয়ে কেউ কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্য কম তুলছেন। গত বুধবারও ঢাকার খুচরা বাজারগুলোয় আলুর কেজি বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে খাদ্য পণ্যটির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও মগবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ খুচরা ব্যবসায়ী আলুর কেজি বিক্রি করছেন ৬০ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লার কোনো কোনো দোকানে এর চেয়ে ৫ টাকা বেশি দরেও বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আলুর মতোই দামে বড় লাফ দেখা গেছে পেঁয়াজের বাজারে। এক দিনের ব্যবধানে মসলাজাতীয় পণ্যটির কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। গত বুধবার দেশি পেঁয়াজের কেজি ৯৫ থেকে ১০০ এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। তবে গতকাল দাম বেড়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ মানভেদে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মো. বিল্লাল সমকালকে বলেন, মুন্সীগঞ্জ ও বিক্রমপুরের মোকামে থেকে আলু আনা হয়। সেখানে দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, নতুন আলু উঠতে এখনও অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। কিন্তু দেশের হিমাগারগুলোয় যে পরিমাণ আলু মজুত আছে তাতে দুই মাসের বেশি চলবে না। ফলে মাসখানেকের মতো সময় আলুর সংকট দেখা দিতে পারে– হিমাগারগুলোয় এ ধরনের আলোচনা রয়েছে। ফলে বড় ব্যবসায়ীদের যাদের তিন ট্রাক দরকার, তারা পাঁচ ট্রাক আলু কিনছেন। এতে মোকামে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে দামে।

একই বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন পাবনার মোকাম থেকে পেঁয়াজ এনে ঢাকায় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বছরের এ সময় দেশি পেঁয়াজের মজুত কমে আসে। এ ঘাটতি পূরণ করা হয় ভারতীয় পেঁয়াজ দিয়ে। কিন্তু ভারতে দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা কম আমদানি হচ্ছে। এ কারণে মোকামেই দাম বাড়তি। আগামী দু-তিন দিনে দাম আরও বাড়তে পারে।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডালের দামও বাড়তি। খুচরা বিক্রেতাদের ভাষ্য, প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) ডালে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে মোটা দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। আর ছোট দানার মসুর ডালের কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে। এভাবে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাঙ্কর ডাল ৬৫ থেকে ৭০, মুগ ডাল মানভেদে ১০০ থেকে ১৩৫, ছোলা বুট ৮৫ থেকে ৯০ এবং খেসারি ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

হাতিরপুল বাজারের ভাই ভাই স্টোরের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন বলেন, ‘এক এক করে গত এক মাসে অনেক জিনিসের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে আজ দাম এক রকম তো আগামীকাল আরেক রকম। এ জন্য খুচরা ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদেরও অনেক বকবক করতে হয়।’

এদিকে বেশ কয়েক মাস স্থির ছিল প্রধান দুই খাদ্যশস্য চাল ও আটার বাজার। সপ্তাহখানেক ধরে পণ্য দুটির দামও ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে বাজারে মাঝারি ও মোটা চালের চাহিদা বেশি থাকে। এ দুই ধরনের চালের কেজিতে দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। বিআর-২৮ জাতের চালের কেজি ৫৪ থেকে ৫৬ এবং মোটা চালের (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫০ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা আটার দামও কেজিতে ৪ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা দরে। কেজিতে ৫ টাকার মতো বেড়ে দুই কেজি ওজনের প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, এখন অনেকের কাছে মজুত থাকা ধান শেষ পর্যায়ে। সে কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহ দুয়েক পর আমন ধান উঠবে। তখন দাম কমে যাবে।

তবে গত সপ্তাহে অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া সবজির বাজারে দু-তিনটির দাম কেজিতে ১০ টাকার মতো কমেছে। যদিও উল্টো চিত্র দেখা গেছে টমেটোসহ কয়েকটির ক্ষেত্রে। দু’দিন আগে টমেটো বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার আশপাশে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। মাছ-মাংসের বাজারে পরিবর্তন দেখা যায়নি। আমিষ জাতীয় এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই চড়া দামে।

https://samakal.com/economics/article/2310204195