২৬ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:২৯

গণগ্রেফতার

রাজধানীতে এবার চিরুনি অভিযান

 

২৮ অক্টোবরকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের আটকে চলছে চিরুনি অভিযান। রাজধানীর বাসায় বাসায় তল্লাশির খবর পাওয়া গেছে। হোটেল, রেস্টহাউজ, গেস্টহাউজেও তল্লাশি চলছে ব্যাপকভাবে। গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শ’ নেতাকর্মী আটক হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গ্রেফতারের সংখ্যা এক শ’র মতো। মহানগর পুলিশের ডিসি মিডিয়া বলেছে, মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে।

বিএনপি বলেছে, রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো: আলমগীর হোসেন, ৫৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো: দুলাল, শাহবাগ থানার ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো: শাহাদাত হোসেন, মো: আফসু মিয়া, ওয়ারী থানাধীন ৩৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি সদস্য তানভীর আহম্মেদ ওয়াসিম, শাহবাগ থানার ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো: নজরুল ইসলাম ঢালী, কলাবাগান থানাধীন ১৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সিরাজ, লিটন, মাঈনুদ্দিন লালু, রহমত উল্লাহ, লাভলু, সাইদুল, বিপুল, মুগদা থানাধীন ৭নং ওয়ার্ডের বালুর মাঠ ইউনিট বিএনপির সভাপতি মো: সোহাগ, স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা তারেক, নিউমার্কেট থানার সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, ১৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসাদ মাহমুদ পলাশ, গেণ্ডারিয়া থানাধীন ৪৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি নজরুল ইসলাম কাশু, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো: ববি, সদস্য মো: কালাম ও মো: গোলাপ, কাফরুল থানার ৪ নং ওয়ার্ড কৃষকদলের সদস্যসচিব মিজানুর রহমান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালামকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


ঢাকার বাইরেও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলাধীন ৬ নং মাগুরাঘোনা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মো: আশরাফুল ইসলাম শেখ গতকাল স্থানীয় আঠারো মাইল বাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করার সময় জনসমক্ষে টেনে হেচড়ে নিয়ে যায়। এ ছাড়া তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবুল কালাম লস্কর, বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো: আকতার শেখ, দিঘলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আহম্মেদ, কয়রা থানা যুবদলের আহ্বায়ক মো: শরিফুল আলম, তেরখাদা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোল্লা হুমায়ন কবির, বটিয়াঘাটা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহরিয়ার বাপ্পি ও রূপসা উপজেলা যুবদল নেতা এস এম বোরহান উদ্দিনকে গতরাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি জসিম উদ্দীন খান বাবুলকে রাজধানীর ঝিগাতলার বাসার সামনে থেকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করার পর এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান না পাওয়ায় তার পরিবার-পরিজন গভীরভাবে উৎকণ্ঠিত। কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিখিল চন্দ্র শ্রাবণকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীতে চলছে চিরুনি অভিযান। বিএনপি নেতাকর্মীরা কোথায় কোথায় অবস্থান করতে পারে সেই তথ্য নিয়ে চালানো হচ্ছে অভিযান। ব্যবহার করা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। যেসব নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান দিয়ে ঢাকায় আসছেন তাদের বেশির ভাগই গ্রেফতার হয়ে যাচ্ছেন। হয় পথে না হয় ঢাকায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করছে। গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে এমন ১৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়া এলাকার এক বিএনপি কর্মী জানিয়েছেন, পুলিশ ওই এলাকায় মঙ্গলবার রাতে বাসায় বাসায় তল্লাশি চালায়। কামারপাড়া এলাকা থেকে অন্তত ১৫ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। ওই কর্মী বলেন, নেতাদের বেশির ভাগ আত্মগোপনে চলে গেছেন। এখন কর্মীদের আটক করা হচ্ছে।


জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দকে উত্তরার বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে।

এ দিকে এই গ্রেফতার অভিযান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক শুরু হয়েছে। একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত তারা আত্মীয়স্বজনকে পর্যন্ত বাসায় রাখতে ভয় পাচ্ছেন। যে কারণে অনেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আত্মীয়স্বজনকে বাসায় আসতে নিষেধ করেছেন।


এ দিকে গ্রেফতার অভিযানের বিষয়ে মহানগর পুলিশের ডিসি মিডিয়া বলেছেন, ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে কোনো গ্রেফতার বা অভিযান চলছে না। নিয়মিত অভিযান চলছে। মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/786816