১৩ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার, ২:৪৯

সকালে কারাদণ্ড দুপুরে জামিন, বিকেলে সাজা স্থগিত

কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: সোহেল রানাকে আদালত অবমাননার অভিযোগে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি মো: বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই বিচারককে এক মাসের কারাদণ্ড দেন।

পরে বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টায় আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের চেম্বার জজ আদালত খাসকামরায় বসে ওই সাজার রায় আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করে আদেশ দেন। একই সাথে ২০ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার তিন ঘণ্টা পর আপিলের শর্তে তাকে ৩০ দিনের জামিন দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। গতকাল দুপুরে বিচারপতি মো: বদরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ মো: সোহেল রানাকে জামিন আদেশ দেন। এই জামিন আদেশের ফলে কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: সোহেল রানাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে না বলে জানান তার আইনজীবী।

চেম্বার জজ আদালতে বিচারক মো: সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ সকালে যে আদেশ দিয়েছিলেন তারপর দুপুর ২টায় আমরা গিয়েছিলাম তাঁর জামিনের জন্য। হাইকোর্টের একই বেঞ্চে সেখানে তার জামিন হয়েছে। তারপর আমরা রায়ের বিরুদ্ধে সিএমপি ফাইল করে চেম্বার বিচারপতির খাসকামরায় যাই। চেম্বার বিচারপতি আদেশটি দেখেছেন। দেখার পর ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সাজার রায় স্থগিত করেছেন। ২০ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে কার্যতালিকায় ২০ নম্বর আইটেমের পর থাকবে। সেই দিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার পর আমরা সিপি ফাইল করব। তিনি আরো বলেন, আমি চেম্বার আদালতে বলেছি সকালে যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা সঠিক হয়নি। তিনি আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। একজন বিচারক যখন আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তখন তিনি ক্ষমা পেতে পারেন।
সাজার রায়ের তিন ঘণ্টা পর জামিন হলো এবং তারও তিন ঘণ্টা পরে রায় স্থগিত করা হলো এটা সুপারসনিক গতিতে হলো। এটা আপনারা কেন মনে করলেন যে বিষয়টি তাড়াতাড়ি নেওয়া হলো। কোনো চাপ ছিল কি? এই প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আমি অনেক বড় বড় ম্মালা করেছি। এ ধরনের বহু অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। এটা আমার জন্য ফ্রাস্টেড অভিজ্ঞতা নয়। বহু মামলার দুপুরে রায় হয়েছে। বিকেলে চেম্বার জজ আদালতে স্থগিত করিয়েছি। তিনি আরো বলেন, যে সময় রায় হয়েছে তার তিন ঘণ্টার মধ্যে আমরা ফাইল রেডি করেছি। চেম্বার বিচারপতি রুমে ছিলেন। আমরা পারমিশন চাইলাম। তিনি বললেন, নিয়ে আসেন রেকর্ড। আমরা নিয়ে গেলাম এবং উনি স্থগিত করেছেন। এখানে সুপারসনিক কিছু হয়নি। যা হয়েছে একদম অ্যাজ ই্উজুয়াল হয়েছে।

এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় আদালত অবমাননার দায়ে কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: সোহেল রানাকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন বিচারপতি মো: বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সাথে তাকে সাত দিনের মধ্যে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। অপরদিকে তার পক্ষে জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর আড়াইটার দিকে ৩০ দিনের জামিন দেন আদালত। আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আর আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায়।

আদেশের পর সোহেল রানার আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধিতে আছে আপিল করার শর্তে যে আদালত সাজাপ্রদান করেছে সেই আদালত তাকে জামিন দিতে পারেন। আমরা সে অনুযায়ী জামিন আবেদন করেছি। বিচারক মো: সোহেল রানা হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করবেন। সেই আপিল ফাইল করার শর্তে উনাকে যেন জামিন প্রদান করা হয়। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আপিল করার শর্তে ৩০ দিনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমরা ৩০ দিনের মধ্যে উনার পক্ষে আপিল আবেদন করব। এ বিষয়ে আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায় বলেন, সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু তার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে তাকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আইনজীবীরা জানান, ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলাটির কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে তারা হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। এই স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে বিচার কাজ পরিচালনার বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মামুন।

পরে চলতি বছরের ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট সোহেল রানাকে তলব করে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ২১ আগস্ট হাজির হতে বলেন। ধার্য তারিখে সোহেল রানা হাইকোর্টে হাজির হন এবং পরবর্তীতে জবাব দাখিল করেন। তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি স্বপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে ৯ নভেম্বর সোহেল রানা সময়ের আর্জি জানান। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ রাখেন। এদিকে আদালত অবমাননার রুলের পর গত ৩১ আগস্ট সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করে নেন।
উল্লেখ্য, সোহেল রানা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে সংযুক্ত আছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/783813