১৩ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার, ২:৪৭

বিনিময় ও ঋণের হারে আইএমএফের অসন্তোষ

ডলারের সাথে টাকার বিনিময় হার ও ঋণের হার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারা বলেছে, এখনো বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হয়নি। পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হয়নি ঋণের সুদহারও। এ দু’টি এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদল গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে এ অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ।

৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় দেয়া হবে কি না তা নির্ভর করছে আইএমএফের প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদনের ওপর। ঋণ পাওয়ার জন্য আইএমএফের বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালনের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলার রাখতে হবে। ব্যাংকঋণের সুদহার ও মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। রাজস্ব আদায় কাক্সিক্ষত পর্যায়ে আনতে হবে। এসব শর্ত পরিপালন করছে কি না তা জানতে আইএমএফের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে তারা বৈঠক করেছেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে বলেছিল আইএমএফ। একই সাথে ডলারের সাথে টাকার বিনিময় হারও বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে বলেছিল। এটার বর্তমান কী অবস্থা তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছিল। তাদের দাবি, এ দু’টি এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, দুটিই বাজারের ওপর প্রায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কারণ, ডলারের হার কয়েকটি পর্যায়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বলা চলে তা একক হার করা হয়েছে। আবার ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রেও একটি নতুন ফর্মুলা দেয়া হয়েছে। তবে বিনিময় হার যদি পুরোপুরি খোলাবাজারের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এবং অর্থনীতির অন্যান্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ব্যাংকঋণের সুদহার নিয়ে আইএমএফ মিশনকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, নতুন সুদের হারের ফর্মুলা ‘প্রায়’ বাজারভিত্তিক। এর আগে, ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রবর্তিত ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে চলতি বছরের জুনে কর প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কারণ এটি আইএমএফের ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সুদের হার ফর্মুলা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ‘ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড় হারের’ ওপর ৩ শতাংশ মার্জিন আরোপ করতে পারবে, যা স্মার্ট নামে পরিচিত। সেপ্টেম্বরের স্মার্ট ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, যা অক্টোবরে প্রযোজ্য হবে। আগস্টে ছিল ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। আইএমএফ মিশন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বলেন, অক্টোবরে সর্বোচ্চ ঋণের হার হবে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রকৃতপক্ষে এটিও একটি সুদের সীমা। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বছরের জুনে একটি নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে সমন্বিত ও বাজারভিত্তিক একক বিনিময় হার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। এটি খোলাবাজারকে টাকা ও মার্কিন ডলার বা অন্য কোনো বিদেশী মুদ্রার মধ্যে বিনিময় হার নির্ধারণের সুযোগ দেবে।

এরপর গত ৩১ আগস্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) একক বিনিময় হার নির্ধারণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছর থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন করে আসছিল এই দুই সংগঠন।

আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিনিময় হার যদি পুরোপুরি খোলাবাজারের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এবং অর্থনীতির অন্যান্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা আরো বলেন, এ ছাড়া পরবর্তীতে এই হার কমিয়ে আনা কঠিন হবে, এ কারণেই বাফেদা ও এবিবি পর্যায়ক্রমে টাকার অবমূল্যায়ন করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফ প্রতিনিধিদল খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা ও খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি নিয়েও জানতে চেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফ মিশন নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে চেয়েছিল, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বর্তমানে মরক্কোতে আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে আছেন। তাই তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত এটি পিছিয়ে দেয়া হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/783825