১৩ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার, ২:৪০

তত্ত্বাবধায়ক হলেও আওয়ামীলীগ যা চাইবে

-ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

এখন তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চারদিকে তুমুল আলোচনা। দেশে তো বটেই, সারা পৃথিবী এখন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলছে। পশ্চিমারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র চায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, মানবাধিকার নিশ্চিত করতে চায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চায়, মানুষের মৌলিক অধিকার চায়। তারা আরও অনেক কিছু চায়। কিন্তু সরকার একেবারে অনড়। তারা জনগণকে এ ধরনের কোনো অধিকারই দিতে চাইছে না। তাদের লক্ষ্য বিদেশিরা যে যাই বলুক ক্ষমতা তাদের চাই-ই চাই। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন ইলেকশান যেন তেন যাই-ই হোক তার চাই ক্ষমতা, এপসোলিউট পাওয়ার এবং ছলে বলে কলে কৌশলে সে পাওয়ার তিনি হাতিয়ে নিয়েছিলেন।

ক্ষমতার একটা নিজস্ব মজা আছে। কুন বললেই হাতের কাছে সব হাজির। তিনি যখন রাজনীতিতে এলেন তখন বিবিসির সিরাজুর রহমান তার এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তাতে সিরাজুর রহমানকে তিনি বলেছিলেন আমি রাজনীতিকে ঘৃণা করি। তা হলে রাজনীতিতে এলেন কেন? এ প্রশ্নের জওয়াবে তিনি বলেছিলেন পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিতে। এ রকম একটি লক্ষ্য নিয়ে কেউ রাজনীতি করে সেটা ছিলো জনাব রহমানের কাছে অকল্পনীয়।

দিনের পর দিন হরতাল আহ্বান করতেন শেখ হাসিনা। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো এতে জনগণের কষ্ট হয় না? তিনি বলেছিলেন, যে জাতি বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করেনি তাদের কষ্ট হওয়াই উচিত।

তিনি তার দলীয় লোকজনকেও কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন আওয়ামী লিগারদের আমার চেনা আছে। বঙ্গবন্ধুর লাশ দু’দিন সিঁড়িতে পড়ে ছিলো কেউ এগিয়ে আসেনি। সত্যি সত্যি এটা বেদনাদায়ক ঘটনা। এটাও সত্য যে, শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পরে বেশির ভাগ আওয়ামী লিগার খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়েছিলো। সে সময় আওয়ামী লিগের শীর্ষস্থানীয় অন্যতম নেতা আবদুল মালেক উকিল ছিলেন লন্ডনে। সেখানে তিনি বলেন, দেশ ফেরাউনের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন যে, আমি অনেককে ফরগিভ করেছি, কিন্তু ফরগেট করিনি। করবার কথাও নয়। এরকম একটা জটিল অন্তর্দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে কেটেছে শেখ হাসিনার সময়।

ফলে যা তাকে ক্ষমতার বলয় থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তার সব কিছুকেই তিনি ঘৃণা করতে শুরু করেন। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে ভাল ব্যাপার হলো এই যে, এখানে কেউ সত্য মিথ্যার ধার ধারে না। এক শেয়াল যে রা করে সব আওয়ামী লীগার একই রব তোলে। তারাও যুক্তি ফুক্তির ধার ধারে না। তা সে টেকনাফেই থাকুক কিংবা তেতুলিয়াতে থাকুক।

আওয়ামী লীগের অবিরাম জ্বালাও পোড়াও, রেল লাইন উপরাও, মানুষ হত্যা করো, ৬ অক্টোবরের নৃশংসতা তৈরি করে-সব কিছু জায়েজ। ক্ষমতা চাই যেভাবে তিনি ক্ষমতা চান সমস্ত ঘটনা সেভাবেই যেনো ঘটে। তার সামান্য ব্যতিক্রমও তিনি সহ্য করতে পারেন না। ২০০০ সালে ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা পরবর্তী নির্বাচনের জন্য পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ সব একেবারে গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তুু বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি শেখ হাসিনার সাজানো ছক একেবারে উল্টে দেন। সেটা তিনি করেছিলেন নির্বাচন নিরপেক্ষ করার প্রয়োজনেই। আর যায় কোথা। সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনা বিচারপতি লতিফুর রহমানের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে বসেন। তার বক্তব্য ছিলো ক’দিনের জন্য ক্ষমতায় এসে লতিফুর রহমান কেন তা তছনছ করে দিলেন। বিচারপতি লতিফুর রহমানের যুক্তি ছিলো নির্বাচনের ফলাফল পক্ষে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায় সরকারের দায়িত্ব ছিলো নির্বাচন নিরপেক্ষ করা। তিনি সেই দায়িত্বই শুধু পালন করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের এই মনোভঙ্গিতে এখানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। মাসখানেক আগে আওয়ামী নীতি নির্ধারক পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে টক শোতে গিয়েছিলাম। আলোচনা হচ্ছিলো বিদেশীদের ভূমিকা নিয়ে। তিনি চট করে লতিফুর রহমানের প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। বললেন এটা কেমন কথা, লতিফুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই কেন প্রশাসনিক অদল বদল শুরু করে দিলেন। আমি বল্লাম এই কারণে যে আপনারা যাতে নির্বাচন নিয়ে নটি ঘটি না করতে পারেন। আমার এ জবাবে বড় অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন ঐ নেতা।

https://www.dailysangram.info/post/537882