১২ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:৪০

আইএমএফ’র প্রতিবেদন

আয়ের তুলনায় দেশে ব্যয় ও ঋণ বাড়বে

বৈশ্বিকভাবে ঋণঝুঁকি বাড়ছে

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয়ের তুলনায় খরচ বেশি হবে। এতে সরকারের সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ বাড়বে। এ ঘাটতি মেটাতে বাড়তি ঋণ নিতে হবে। সরকারের ঋণ বাড়লেও তা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারের তুলনায় স্বাভাবিক রয়েছে বলে মনে করছে আইএমএফ।

বুধবার রাতে প্রকাশিত আইএমএফ-এর ‘ফিসক্যাল মনিটর, অক্টোবর ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সরকারের জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আয়, ব্যয়, ঘাটতি, ঋণ এবং বিভিন্ন খাতে সরকারের ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশে কর জিডিপির অনুপাত ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৪ শতাংশে উঠেছিল। এরপর থেকে এই হার কমছে। একদিকে জিডিপির আকার বাড়ছে, অন্যদিকে জিডিপি বৃদ্ধির তুলনায় রাজস্ব আদায় কমছে। এতে কর জিডিপির অনুপাত কমে যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থনৈতিক মন্দায় গত অর্থবছরে তা কমে ৮ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়ায়। চলতি অর্থবছরে এ হার বেড়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

এদিকে আইএমএফ গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে, এর অন্যতম একটি শর্ত ছিল প্রতিবছর জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ করে রাজস্ব বাড়ানো। পরে তা দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করা। এভাবে আগামী দুই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত ১০ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করা। সে লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব বাড়ছে না।

এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফ বুধবারের প্রতিবেদনে বলেছে, যেভাবে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় বাড়ানো হচ্ছে, তাতে কর জিডিপির অনুপাত ডাবল ডিজিটে বা ১০ শতাংশে নিতে আরও তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে কর জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশ হতে পারে। পরের বছর তা আরও কিছুটা বেড়ে ১০ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।

এদিকে আইএমএফ ঋণের শর্ত অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরেই কর জিডিপির অনুপাত ১০ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার কথা। কিন্তু অনেক শর্তের মতো এটিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের রাজস্ব আহরণ চলতি অর্থবছরে কিছুটা বাড়লেও খরচও বাড়বে। জিডিপির অনুপাতে সরকারের ব্যয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছিল সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপর থেকে তা কমছে। গত অর্থবছরে তা কমে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এটি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।

রাজস্ব চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে ঘাটতিতে পড়বে সরকার। চলতি অর্থবছরে এ ঘাটতি সাড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে। আগামী বছরও ঘাটতি সাড়ে ৪ শতাংশে সীমিত থাকবে। তবে এর পরের বছর ঘাটতি বেড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের গ্রস ঋণ এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। সাধারণত জিডিপির ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ হলে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। গত অর্থবছরে সরকারের ঋণ ছিল জিডিপির ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারের ঋণ আরও বেড়ে জিডিপির ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে হবে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ।

তবে আইএমএফ অন্য এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের ঝুঁকি নিুমানের। কারণ, জিডিপির তুলনায় দেশটির ঋণ অনেক কম।

সূত্র জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের কারণে দেশের ডলার বাজার বেশ চাপে রয়েছে। একই সঙ্গে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।
এদিকে প্রতিবেদনে বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে ঋণঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। করোনার সময় বৈশ্বিকভাবে সার্বিক ঋণ জিডিপির ২৫৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এ থেকে এখন ২০ শতাংশ কমেছে। এটি আরও কমাতে হবে। অনেক দেশ চলতি বছরে ঋণঝুঁকিতে পড়বে। আগের ঋণ পরিশোধে যেমন ঝুঁকি বাড়বে, তেমনই নতুন ঋণ প্রাপ্তিতেও ঝুঁকি থাকবে। ফলে নতুন ঋণ কম পেলে আগের ঋণ শোধ করা স্বল্প-আয়ের দেশগুলোর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/727844