১২ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:৩২

১৫ ধরনের কেনাকাটায় ব্যয় হবে ১৯০৮ কোটি টাকা

আলোচিত পর্দা ও ২৬১টি জিপ গাড়ির কেনার প্রস্তাব অনুমোদন

অবশেষে রূপপুর প্রকল্পের আলোচিত পর্দা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সাথে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ২৬১টি বিলাসবহুল জিপ গাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাবও। দুটি প্রস্তাবই গতকাল খুব দ্রুততার সাথে প্রথমে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়। এর পর পরই প্রস্তাব দুটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাস করানো হয়। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভার শেষে অন্যান্যবার সাংবাদিককের ব্রিফ করা হলেও গতকাল তা করা হয়নি।
এ দিকে, গতকাল ১৫টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যবহারের জন্য ২৬১টি জিপ (অনূর্ধ্ব ২৭০০ সিসি) ক্রয়ের প্রস্তাবটি প্রথমে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। এর পরই এটি ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপন ও অনুমোদন দেয়া হয়।

সূত্র মতে, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে এসব জিপ কিনবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। সে হিসাবে ২৬১টি জিপ ক্রয়ে মোট (ট্যাক্স, ভ্যাট ও রেজিস্ট্রেশনসহ) ব্যয় হবে ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রিন সিটি আবাসিক কমপ্লেক্সে আসবাবপত্র সরবরাহ ও স্থাপন; হোম অ্যাপ্লায়েন্স সরবরাহ এবং পর্দা সরবরাহ ও স্থাপনে তিনটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রেসপনসিভ সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে আসবাবপত্র সরবরাহ ও স্থাপনের কাজটি পেয়েছে প্রাণ-আরএফএল। এতে ব্যয় হবে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে হোম অ্যাপ্লায়েন্স সরবরাহের কাজটি পেয়েছে একমাত্র রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে এ পি ট্রেডিং। এতে ব্যয় হবে ৪ কোটি ২৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

আর পর্দা সরবরাহ এবং স্থাপনের কাজটি পেয়েছে ইউরো এশিয়া ফেল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, অন্যান্যের মধ্যে বৈঠকে তিনটি পৃথক ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘মাতারবাড়ী কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবের মধ্যে প্যাকেজ নং-২.১-এর পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে যৌথভাবে- হাল্লা ও কাজী মীর আকতার হোসেন লিমিটেড।

প্যাকেজ নং-৩.৩ এর পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে যৌথভাবে- মীর আকতার হোসেন লিমিটেড ও ডব্লিউএমসিজি।

সূত্র জানায়, এ ছাড়া আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পের প্যাকেজ নং- ডব্লিইডি-১-এর পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবটি মূল আলোচ্য সূচির বাইরে টেবিলে উপস্থাপন ও অনুমোদন দেয়া হয়। এ কাজে ব্যয় বাড়ছে ৪৪৬ কোটি ১৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভায় ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক দুটি পৃথক প্রস্তাবে সাড়ে ১৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কিনতে ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রতি কেজি ডালের দাম পড়বে ১১১ টাকা ৮৫ পয়সা।

অপর প্রস্তাবে আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ভার্জিনিয়ার অ্যাকসেচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন (স্থানীয় এজেন্ট: ওএমসি লিমিটেড, ঢাকা) থেকে কেনা হবে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মসুর ডাল। প্রতি মেট্রিক টন ৮৬০ ডলার দরে এতে মোট ব্যয় হবে ১১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ৯৯ টাকা ৪৮ পয়সা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে টিসিবি কর্তৃক স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের আরেকটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুই লিটার পেটজাত বোতলে এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে বসুন্ধরা মাল্টি ফুডস প্রোডাক্টস লিমিটেড। প্রতি লিটার ১৫৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৭৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে পৃথক চারটি প্রস্তাবে মোট ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের সার আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক ইউরিয়া সার ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি, মরক্কো থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানি এবং চট্টগ্রামের কাফকো থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয় করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৬৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/783583