১২ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:২৯

এবার ইলিশের স্বাদ পাননি সাধারণ মানুষ

আজ থেকে আহরণ ও বিপণন বন্ধ

মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষ এ বছর জাতীয় মাছ ইলিশের স্বাদ পাননি। উচ্চ মূল্যের কারণে এমনকি ধনীরাও মন ভরে ইলিশ খেতে পারেননি। এ অবস্থায় আজ থেকে মা ইলিশ আহরণ ও বিপণন বন্ধ করে দিলো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২২ দিন (১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর) সারা দেশে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চালাবে মৎস্য অধিদফতর।

এ উপলক্ষে গতকাল সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়ন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মা ইলিশ রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং মা ইলিশ সংরক্ষণের সময়ে কোনো মাছ ধরা নৌযান যাতে নদী বা সাগরে যেতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, গত বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ২২ দিনে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। ফলে গত বছর প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম উৎপাদন হয়েছে, যা থেকে প্রায় ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ জলাশয়ে যুক্ত হয়েছে। বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮০ শতাংশের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। দেশে ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, গুণগত মানে সমৃদ্ধ করা, বড় আকারের ইলিশ উৎপাদনের সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রকম নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাটকা নিধন না করা এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ।

মৎস্যমন্ত্রী বলেন, মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, গুণগত মান বেড়েছে, বড় ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার এ বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করতে যাচ্ছে। এর উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জলপথে, স্থলপথে এমনকি আকাশ পথে মা ইলিশ রক্ষায় পর্যবেক্ষণ করবে। যারা এ সময় ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবে, তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার ভিজিএফ সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ইলিশসমৃদ্ধ ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলায় এ সহায়তা পৌঁছে গেছে। এর আওতায় মোট ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে মোট ১৩ হাজার ৮৭২.১৮ মেট্রিক টন খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

মন্ত্রী জানান, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে সরকার নানা সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশ আহরণ আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২.৯৮ লাখ মেট্রিক টন। সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫.৭১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শ ম রেজাউল করিম জানান, পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা জলবায়ুর কারণে ইলিশের বিচরণ ও গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়। অপরিকল্পিত ড্রেজিং, যানবাহন থেকে নির্গত পোড়া তেলের দূষণ, অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ আহরণসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরপরও সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট রয়েছে।

ইলিশ রফতানির বিষয়ে এ সময় মন্ত্রী বলেন, ইলিশ এখন কূটনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। পাশের দেশ ভারতে সীমিত পরিসরে ইলিশ রফতানি হয়ে থাকে, যা প্রতিবেশী দুই দেশের বাণিজ্যিকসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৪১ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানি করা হয়েছে, যা থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৪৩৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানির অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়েছে, যা থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৬২ লাখ মার্কিন ডলার।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/783586