১১ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার, ৩:২২

কৃচ্ছ্রনীতি সত্ত্বেও কেনা হচ্ছে ২৬১টি নতুন জিপ

ব্যয় হবে ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা

সরকার আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে। এ জন্য গত দুই বছর ধরে সরকারের পক্ষ থেকে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এর ফলে সব সরকারি যানবাহন কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে ৩৮২ কোটি টাকার ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব দিয়ে বসেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কোনো দরপত্র ছাড়াই অর্থাৎ, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এসব জিপ সরবরাহ করবে। আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে গাড়ি কেনার প্রস্তাবটি প্রথমে নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেলে এটি পরবর্তী বৈঠকে তথা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা; মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সরকারি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে এসব গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখতে যেসব গাড়ির আয়ুষ্কাল ১৪ বছর বা তদূর্ধ্ব এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে; তার প্রতিস্থাপক হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য ২৬১টি জিপ গাড়ি ক্রয় করা হবে।

সূত্র মতে, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে ২৬১টি জিপ ক্রয়ের জন্য ইতোমধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং ২৬১টি জিপ (অনূর্ধ্ব ২৭০০ সিসি) ক্রয়ের জন্য (ট্যাক্স, ভ্যাট ও রেজিস্ট্রেশনসহ) বাজেট থেকে ৩৮০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, পরবর্তীতে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী জিপ গাড়িগুলোর কারিগরি মান যাচাইয়ের লক্ষ্যে কারিগরি টিম কর্তৃক প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই)-এর জন্য গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ সফর, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মেকানিকদের ট্রেনিং ও গাড়ি মেরামতের জন্য ১০টি স্ক্যানারসহ গাড়িগুলো সরবরাহের সময়সীমা এবং জিপের মেইক, মডেল, তৈরির সাল উল্লেখ করে দরপ্রস্তাব দাখিলের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাট্রিজ লিমিটেডের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

জানা গেছে, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২৬১টি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ গাড়ির (২৪৭৭ সিসি) দাম (ট্যাক্স, ভ্যাট ও এক্সেসরিজসহ) ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি (সার্ভিস চার্জসহ) প্রতিটি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৫০ টাকাসহ মোট ৩৮৫ কোটি ৭১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ টাকা অফার করে। অফারে কার্যাদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ৬১টি জিপ এবং অবশিষ্ট ২০০টি জিপ ১৮০ দিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সরবরাহের এবং জিপ গাড়িগুলোর কারিগরি মান যাচাইয়ের জন্য কারিগরি টিম কর্তৃক ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপট্যান্স টেস্ট (এফএটি) গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ সফরের ব্যবস্থা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মেকানিকদের ট্রেনিং প্রদান এবং গাড়ি মেরামতের জন্য ৫টি স্ক্যানার সরবরাহের কথা উল্লেখ করে।

সূত্র জানায়, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দাখিল করা অফার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে প্রতিটি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ গাড়ির প্রতিটির মূল্য (ট্যাক্স, ভ্যাট ও এক্সেসরিজসহ এবং রেজিস্ট্রেশন ফি ব্যতীত) ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা দরে ২৬১টি জিপ গাড়ি ক্রয়ের বিষয়ে সুপারিশ করেছে।

উল্লেখ্য, দেশের সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিধি-নিষেধ রয়েছে। বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিগত দুই বছর সরকারি যানবাহন অধিদফতর কোনো প্রকার যানবাহন ক্রয় করেনি বলে জানা যায়।
এর আগে চলতি অর্থবছরের ২ জুলাই অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কতিপয় ব্যয় স্থগিত/হ্রাসকরণ ও বিদেশ ভ্রমণ সীমিতকরণ’ শীর্ষক পরিপত্রে বলা হয়েছে, পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০১), জলযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০২) ও আকাশযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০৩) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। অন্য দিকে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের যানবাহন (মোটরযান, জলযান ও আকাশযান) ক্রয় বন্ধ থাকবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/783340