১১ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার, ৩:১৯

গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বিরোধী নেতাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা

বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে থাকা পুরানো মামলাগুলোর দ্রুত রায় ঘোষণা ও চার্জ গঠনের পর তাদের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে কোনঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার এই কৌশল নিয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। যাতে চাপে পড়ে বিএনপিসহ জোটের অন্য নেতা-কর্মীরা আতঙ্কে থাকেন। কতিপয় নেতাকে গোপনে নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। সন্দেহভাজন কয়েকজন নেতাকে নির্বাচনে অংশ নিতে গোপনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যোগাযোগ চলছে বলেও একাধিক সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে পুরানো মামলার রায়ে যারা গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন তাদেরকে বাগে আনতে ক্ষমতাসীন দল ছাড়াও শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাও তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের মনবল ভাঙতে বিপুল অর্থ ব্যয় করার প্রজেক্ট রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক মাস ধরে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে থাকা পুরানো মামলার রায় ও কিছু মামলার চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত মাসে পুরানো মামলায় কয়েক ডজন নেতার বিরুদ্ধে সাজার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। গত সোমবারও প্রায় সাড়ে ৮ বছর আগের একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব ও শাহজাহানসহ ১৫ জনের চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই দিন প্রায় পাঁচ বছর আগের আরেকটি মামলায় শিমুল বিশ্বাস ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ বিএনপির ৯১ নেতাকর্মীর বিচার শুরু করা হয়।

এদিকে নাশকতা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকনসহ ১৫ জনের ৪ বছরের কারাদন্ডের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা আগেই বলেছি এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার নির্বাচনি মাঠ খালি রাখতেই এলাকায় জনপ্রিয় নেতাদের সাজানো মামলায় কারাদণ্ড দিয়ে জেলে ঢুকাচ্ছে। এসব ফরমায়েশি রায়।

তিনি বলেন, এতদিন রায় দিল না, অথচ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি মাঠ শূন্য রাখতে দিনরাত কোর্ট বসিয়ে একদিনে ১৫ থেকে ২০ জন সাক্ষী এনে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে নেতাদের জেলে ঢুকানো হচ্ছে। জেল-জুলুম দিয়ে, ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, একদলীয় নির্বাচন এ দেশে হতে দেবে না। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমার বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ে আমি বিচলিত নই। সারা দেশই একটি বন্দিশালা। আজকে খালেদা জিয়া অন্তরীণ, তারেক রহমানকে দেশান্তরীত করে রাখা হয়েছে। সবাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান হয়েই এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। আমি জেলে গেলেও লাখ লাখ হাবিব এ সরকারকে বিদায় করতে রাজপথে আছে এবং থাকবে। সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকন বলেন, যে ঘটনায় আমাকে কারাদ- দেওয়া হয়েছে সেদিন আমি আমার নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়ায় ছিলাম। উপরে আল্লাহ একজন আছেন। তিনি সব দেখছেন। তারপরও আমার জেল নয়, জীবনের বিনিময়েও যদি দেশের গণতন্ত্র মুক্তি পায়, খালেদা জিয়া মুক্তি পায়, দেশবাসী যদি বাকস্বাধীনতা ফিরে পায় তাহলে আমি হেসে হেসে শহিদ হয়ে যাব।

আট বছর আগে রাজধানীর ভাটারা থানায় করা নাশকতার মামলার রায়ে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুই বছর কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। এছাড়া অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতি সাধনের অভিযোগে আরও দুই বছরের কারাদ-, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। দুই ধারার সাজা এক সঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক। কারাদ-প্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন-বিএনপির গ্রাম সরকার বিষয়ক সহসম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ, সহ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ শামীমুর রহমান শামীম, তৌহিদুল ইসলাম, তুহিন, মনিরুল হক মনির, মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম, মাসুদ রানা, আব্দুর রাজ্জাক, জিয়াউল ইসলাম জুয়েল, মো. আরিফ, মোহাম্মদ নিশান মিয়া, মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান সুমন, মোজাম্মেল হক।

অপরদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার আসামীকে খালাস দেন আদালত। তারা হলেন মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন, দ্বীন ইসলাম, মোহাম্মদ মামুন ও আমিনুল ইসলাম। আসামীপক্ষের আইনজীবী শেখ শাকিল আহমেদ রিপন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আমিনুল ইসলাম। অপর কারাদ-প্রাপ্ত আসামীরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ সাজা পরোয়ানা জারি করেন আদালত। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ৩০-৪০ জন যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীতে প্রগতি সরণীতে জনসাধারণের চলাচলে গতিরোধ, পুলিশের কাজে বাধা ও বাসে অগ্নিসংযোগ করে।

অগ্নিসংযোগে এক লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় ভাটারা থানার সাব-ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা তদন্ত করে ওই বছরের ১২ মে হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন ভাটারা থানার সাব-ইন্সপেক্টর শাহ মো. সাজু মিয়া। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গাড়ি ভাঙচুর ও হত্যার উদ্দেশে পুলিশকে ইটপাটকেল ছোড়ার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ ৯১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। অভিযোগ গঠনের ফলে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হলো। সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুল হকের আদালত এ অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে আগামী ২২ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
বিএনপিকে জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, লাগাতার কেন্দ্রীয় নেতাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও আমাদের কেউ ন্যায্য আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনতে পারে নি। বিএনপিকে জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। বরং আওয়ামী লীগই বলে জেলে গিয়ে তারা বিশ্রাম নেবে।

সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। আলতাফ হোসেন বলেন, প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলন করে জেলের তালা ভেঙ্গে খন্দকার মোশাররফকে মুক্ত করে আনবো। বিএনপি সাংগঠনিক দিক দিয়ে কখনো দুর্বল ছিল না, এখেনো নেই। এসময় বিএনপির এই নেতা সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেক শক্ত হাতে মোকাবেলা করছে বলে দাবি করেন।

https://www.dailysangram.info/post/537752