২ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার, ১২:৫৯

রেমিট্যান্স তলানিতে : ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এসেছে সেপ্টেম্বরে

কমছে রিজার্ভ, দায় শোধে বাড়ছে শঙ্কা

বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম প্রধান খাত প্রবাসী আয় তলানিতে নেমে গেছে। গত ৪১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে গত সেপ্টেম্বরে ১৩৪ কোটি ডলার। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় গত ২০২০ সালের মে মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫০ কোটি ডলার। ওই সময় থেকে গত ৪১ মাসের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৪ কোটি ডলার। এক দিকে ফি মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এতে এমনিতেই নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ভবিষ্যৎ আমদানি দায় পরিশোধে বাড়ছে শঙ্কা, এর মধ্যে রেমিট্যান্স-প্রবাহ ভয়াবহ কমে যাওয়ায় এ শঙ্কা আরো প্রকট আকার ধারণ করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সামনের মাসে অর্থাৎ নভেম্বরে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের আকুর দায় পরিশোধ করতে হবে। সামনের বছর ঋণনির্ভর বড় কিছু মেগা প্রকল্পের ব্যয় পরিশোধ শুরু হবে। পাশাপাশি চলমান আমদানি দায়ের বিল তো রয়েছেই। এমনি পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রাপ্রবাহের প্রধান প্রধান খাত সঙ্কোচিত হয়ে আসায় আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত কয়েক মাস যাবৎ রেমিট্যান্স-প্রবাহ কম আসছে। কিন্তু রেমিট্যান্স-প্রবাহ এত কমে যাবে যা অনেকে ধারণাও করতে পারেনি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গড়ে প্রায় দুই বিলিয়ন করে রেমিট্যান্স এসেছিল। গত জুলাই মাসেও দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯৭ কোটি ডলার। কিন্তু আগস্ট থেকে হঠাৎ করে রেমিট্যান্সের হোঁচট খায়। গত আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৬০ কোটি ডলার। ধারণা করা হচ্ছিল, গত মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরেও দেশে দেড় শ’ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসবে। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে পৌনে ১৩ শতাংশ কম।
রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে হুন্ডি-প্রবণতা বেড়ে গেছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ব্যাংকিং চ্যানেলে কম রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। কারণ এক দিকে সামনে নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অপর দিকে বেড়েছে ডলারের দাম। দেশে বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রতি ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। সেখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১১৫ টাকা দরেও রেমিট্যান্স আহরণ করতে হচ্ছে ব্যাংকারদের। এ দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা নিয়ে কঠোর অবস্থানে নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১০টি ব্যাংকের শোকজ করা হয়েছিল। বেশি দামে ডলার বিক্রির অভিযোগে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোও আর আগের মতো ঝুঁকি নিয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে না। সবমিলেই রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব পড়েছে। এ ধারা চলতে থাকলে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার দায় মেটানো কঠিন হয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা বিধিনিষেধের মধ্যে ইতোমধ্যে পণ্য আমদানি কমে গেছে। বিশেষ করে বিলাসজাত পণ্যের আমদানিতে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডলার সঙ্কটের কারণে উদ্যোক্তারা শিল্পের কাঁচামাল চাহিতা অনুযায়ী আমদানি করতে পারছে না। তারপরেও জুলাইতে আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৫ শতাংশ। বিপরীতে আগস্টে রফতানি আয় বেড়েছে ৩.৮০ শতাংশ। কিন্তু আমদানি কমলেও বকেয়া এলসির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। সবমিলেই গড়ে মাসে ছয় বিলিয়ন ডলারের ওপরে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। আগামী মাসে আকুর দায় পরিশোধ করতে হবে এক বিলিয়ন ডলারের উপরে। এমনিতেই চাপে পড়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে রাখতে হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে নিট রিজার্ভ কমে ২১ বিলিয়নে নেমে গেছে। এর ওপর রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে যাওয়ায় সামনে বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এবং বৈদেশিক মুদ্রাপাচার ঠেকাতে না পারলে সামনে সম্ভাব্য পরিস্থিতি এড়ানো কঠিন হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/781187