১ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ৩:২৩

ফের তালগোল পাকালো গুচ্ছ

শেখ মো. লিখন। গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ মেলার পর তাকে ঘুরতে হয়েছে দেশের চারপ্রান্তে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লিখন। তার পছন্দ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমে তিনি সুযোগ পান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর ফের মাইগ্রেশন করে তিনি যান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, একবার মাইগ্রেশন বন্ধ হলে আর ভর্তি হওয়া যাবে না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনই নীতি যে পরে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন খালি থাকলেও আর ভর্তি হওয়া যাবে না। এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছি। টাকা খরচ হচ্ছে আবার দুঃচিন্তার মধ্যেও থাকতে হচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একেকটি সিট যেন সোনার হরিণ সমতুল্য।

কিন্তু গুচ্ছভুক্ত হয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মিলছে না শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একত্র করে শুরু হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এরপর সুফল নিয়ে দ্বিমত শূন্যের কোটায় হলেও প্রতিবছরই কোনো না কোনো জটিলতায় পড়ছে। ব্যতিক্রম হয়নি এবছরও। প্রায় ২২০০ সিট ফাঁকা থাকলেও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত গুচ্ছ। অথচ কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য পরীক্ষার হলে বসেছিলেন। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় প্রথম পরীক্ষা।

গুচ্ছভুক্ত এই ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি শিক্ষার্থীদের আর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনের সুযোগ না রাখার সিদ্ধান্ত নেন নীতিনির্ধারকরা। গত ২৫শে তারিখ বৈঠকে বসে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সময় তারা বলেন, চারটি মেরিট দেয়া হয়েছে, মাইগ্রেশনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভর্তি না হলে কিছু করার নেই। এরপর জানানো হয়, কীভাবে ২১০০-২২০০ সিট পূরণ হবে তা জানানো হবে।

তথ্যানুযায়ী, ২১৭টি আসন ফাঁকা রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের, যাতে আসন রয়েছে দুই হাজার ৯৫টি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শাবিপ্রবি) ১৬২টি আসন শূন্য। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূন্য ১২টি। সব থেকে বেশি আসন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে আসন দুই হাজার ৭৬৫টি। যাতে আসন শূন্য প্রায় দেড়শ’। গুচ্ছভুক্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ও দেড় শতাধিক আসন ফাঁকা রেখে ভর্তি শেষ করতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়াও চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সংকট আরও বেশি। এমনকি শিক্ষার্থী শূন্যও রয়েছে অনেক বিভাগে।

গুচ্ছ ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ও শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা চাই না আসন ফাঁকা রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করুক। যেহেতু চারটি মাইগ্রেশন হয়ে গেছে সেহেতু আমরা এটিই বন্ধই থাকবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীর জন্য এখনো তালাশে থাকলেও শুরু হয়ে গেছে একাডেমিক কার্যক্রম। সাবরিনা ইয়াসমিন শেষ মাইগ্রেশনে ভর্তি হয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলায় হওয়ায় তার ইচ্ছা ছিল রংপুরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার। কিন্তু এর আগে তাকে খুলনা, কুমিল্লা ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হবার পর- তিনি বারবার ভর্তি করানোটাকে ব্যবসা বলে উল্লেখ করে বলেন, প্রাথমিক নিশ্চায়ন বাবদ আমাকে পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এরপর মাইগ্রেশনের জন্য আমার আট হাজার ৬০ টাকা লেগেছে। এরপর ফের মাইগ্রেশনে আমার পাঁচ হজার চারশ’ টাকা খরচ করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এদিকে ভর্তি কার্যক্রম শেষই হচ্ছে না। ক্লাস ঠিকই চলছে। আমি কীভাবে ক্লাস করবো, কোর্স সম্পন্ন করবো। এক ফি’তে মাইগ্রেশন সম্পন্ন হলে ভালো হতো। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়া-আসা, খাওয়া-দাওয়া মিলে চলে গেছে আরও কয়েক হাজার টাকা।

গুচ্ছভুক্ত এক বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বলেন, গুচ্ছ অবশ্যই ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই হয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এই ভোগান্তিগুলো হচ্ছে। যেভাবে চলছে তাতে আসন ফাঁকা থেকেই যাবে। তিনি বলেন, এভাবে আসন ফাঁকা থাকলে ভবিষ্যতে আমরা আর গুচ্ছে থাকবো কিনা তা নিয়ে ভেবে দেখতে হবে। গুচ্ছ পরীক্ষা আসলে কয়েকজন মিলে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। তাদের ইচ্ছাতেই চলছে। এটাকে তিনি স্বেচ্ছাচারী কমিটি বলেও উল্লেখ করেন। এর সমাধান হিসেবে তিনি এনটিএ (ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি) দ্রুততার সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে পরিচালনার কথা বলেন।

একই সুরে কথা বলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিভাগীয় প্রধান। তিনি বলেন, আমার বিভাগে শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য স্বপ্ন দেখেন, যুদ্ধ করেন। সেখানে আমি অপেক্ষায় থেকেও শিক্ষার্থী পাচ্ছি না। এভাবে চললে গুচ্ছে থেকে কী লাভ? সমাধান কীভাবে হতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকল শিক্ষার্থী অটো মেধাতালিকা দিলেই আর ভোগান্তি থাকে না। কিন্তু এভাবে চললে তো তাদের ব্যাগ ভরবে না।

সার্বিক বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, নতুন প্রক্রিয়া এলেই কিছুটা সংকট হতে পারে। শিক্ষার্থীরা তো এখন সব অনলাইনেই করতে পারছে। এনটিএ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেক্সটে যে মডেলই আসুক, তা যেন আগে দীর্ঘ সময় পাইলটিং প্রক্রিয়ার মতো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্তি দায়িত্বে) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ইউজিসির লক্ষ্য হলো- ভর্তি প্রক্রিয়া সহজতর করা। গুচ্ছ পদ্ধতি অনেকটা সেই পথে এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করি। ন্যাশনাল টেস্ট অথরিটি গঠনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি কাজ করে, সেখানে ইউজিসির যেটুকু ভূমিকা তা আমরা রাখবো।

https://mzamin.com/news.php?news=76471