১ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ৩:১৯

ইমরানুরের পেছনে এত বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন

হাংজুর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ঝলমলে আলোর মধ্যে কাল অনুষ্ঠিত হয়েছে গেমসের মূল আকর্ষণ ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। সেখানে জাতিকে হতাশ করেছেন ইমরানুর রহমান। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বৃটিশ কোচের অধীনে অনুশীলন করেও এশিয়ান গেমসে নিজের সেরা টাইমিং করতে পারেননি ইমরানুর। ১০.৪২ সেকেন্ড টাইমিং করে সেমিফাইনালে ১নং হিটে আট প্রতিযোগীর মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছেন তিনি। অথচ তার সেরা টাইমিং ১০.১১। ইংল্যান্ডের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কিছুদিন আগে এই টাইমিংয়ে দৌড়েছেন ইমরানুর। হাংজুতে তার সেরা টাইমিংয়ের কাছাকাছি দৌড়াতে পারলেও এশিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলার সুযোগ পেতো বাংলাদেশের কোনো স্প্রিন্টার। সেটা করতে না পারায় প্রশ্ন উঠেছে দেশের অ্যাথলেটদের উপেক্ষা করে প্রবাসী খেলোয়াড় ইমরানুরের পেছনে করা এতো বিনিয়োগ নিয়ে।

দু’বছর আগে দেশের অ্যাথলেটিক্সে আবির্ভাব লন্ডনে বসবাস করা ইমরানুর রহমানের। এরপর থেকেই এক প্রকার অবহেলিত দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার এবং সাবেক দ্রুততম মানব মো. ইসমাইলসহ অন্যরা। ইমরানুর মূলত ইনডোর গেমসের ৬০ মিটার স্প্রিন্টে খেলার জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করেছেন।

এ বছর কাজাখস্তানের রাজধানী আসতানায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৬.৫৯ সেকেন্ডে স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। কিন্তু ৬০ মিটারের জন্য প্রস্তুত হওয়া ইমরানুরকে নিয়ে ১০০ মিটারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। যার ফলে অন্যদের বঞ্চিত করে গত দুই বছরে লন্ডন প্রবাসী ৩০ বছর বয়সী এই অ্যাথলেটের পেছনে খরচ করা হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। ফলাফল কিছুই না। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ^ চ্যাম্পিয়নশিপের ১০০ মিটার স্প্রিন্টের শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিলেন তিনি। এ বছর হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত একই প্রতিযোগিতায় ১০.৪১ সেকেন্ড সময় নিয়ে হিটেই বিদায় নিয়েছেন। এ বছর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে ১০.৪০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেন ইমরানুর। গত বছর বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমসে ১০.৪৪ সেকেন্ডে দৌড়িয়ে হিটে বাদ পড়েন। আর হাংজুতে এসে সেই টাইমিংও করতে পারলেন না তিনি। হিটে ১০.৪৪ এবং সেমিফাইনালে ১০.৪২ সেকেন্ড। এসব আসরে কোচ বাদ দিয়ে ইমরানুরের সফরসঙ্গী হয়েছেন ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু। হাংজু এশিয়ান গেমসে অ্যাথলেটিক্সে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি ইমরানুর রহমান। আগের দিন সেমিফাইনালে ওঠায় ইমরানুরকে বাহবা দিতে মিক্সড জোনে চলে এসেছিলেন মন্টু। ইমরানুরের কৃতিত্বের আলোকচ্ছ্বটা নিজেদের গায়েও কিছুটা মেখে নিতে। গতকাল ইমরানুরের বিদায়ের দিনে তার দেখা মেলেনি। হয়তো প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া এড়াতেই তার এই কৌশল। যদিও এসব কিছু মনে করেন না ইমরানুর। মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে হতাশ এই স্প্রিন্টার বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি আমি আমার পারফরম্যান্সে খুশি নই। আমি এখানে ভালো করতে চেয়েছিলাম। কেন ভালো করতে পারিনি, তা আমি বিশ্লেষণ করবো।’ আগের দিন হিটে সমস্যা হয়েছিল ইমরানুরের। কাল সেমিফাইনালে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি টাইমিং ১০.২২ এর মধ্যে রাখতে চেয়েছিলাম, চেষ্টা করেছি পারিনি। কিছুদিন ধরেই অন্য আথলেটদের বাদ দিয়ে ইমরানুরে বুঁধ হয়ে আছে ফেডারেশন। অন্যদের কথা বিবেচনা না করে তাকেই আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে পাঠাচ্ছে তারা। তার ওপর অতিনির্ভরতা চাপে পরিণত হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে এই স্প্রিন্টার বলেন, ‘আমি জানি না কীভাবে খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়। আমি চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিতে; কিন্তু পারিনি।’ ৩০ বছর বয়সী ইমরানুরের ওপর অতিনির্ভরতা আর মাহফুজ ঋতুদের উপেক্ষা করে কতোদিন চলবে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্স, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

https://mzamin.com/news.php?news=76487