১ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ৩:০৭

নাব্যতা সংকট, অবৈধ দখলের কবলে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী

প্রতিবছর ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে পরিবেশবাদী চার সংগঠন। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায়, সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে নিজেরাই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আলোচকরা।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘দখলের গ্রাসে সুটকি নদীর ২৬ কিলোমিটার: ৫০ বছরের নদীলুট ঠেকাতে নাগরিক আহ্বান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়। আলোচনা সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন, নোঙর, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এবং ইনিশিয়েটিভ ফর দিস। হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন ও ইনিশিয়েটিভ ফর পিস এর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, প্রাণ প্রকৃতি-প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, নোঙর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সুমন শামস প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক করেন লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ।
আলোচকরা বলেন, সরকার নদী রক্ষায় নানা উদ্যোগের কথা বললেও আমরা তার বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। ফলে একের পর এক নদী মরে যাচ্ছে। নাব্যতা সংকট, অবৈধ দখলের কবলে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী। এ অবস্থায় সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৩ মে নদী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকার থেকে যেহেতু কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তাই নিজেরাই এটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হিয়েছে বলেও জানান বিশেষ্টজনেরা। এসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নদীর উপর একটা গবেষণা করার চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানান তারা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদীর পানি নিয়ে যারা কাজ করে তাদের নিয়ে কাজ করেছিলাম আমি। আমার সময় যদিও সুটকি নদীর বিষয়টি সামনে আসেনি। নদীকে পাবলিক প্রোপ্রার্টি ঘোষণা করে এর অভিভাবক কে সেটা কোর্ট ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নদী নিয়ে কিছু বুঝে না তাদেরকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। এর ফলে নদী রক্ষা হচ্ছে না। কিন্তু আগামী প্রজন্মের জন্য পরিবেশকে ভালো রাখতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। আর এজন্য নদী রক্ষা জরুরি।

সুটকি নদী দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইয়াহিয়া কে? তিনি কিভাবে একটা নদীকে নিজের করে নিলেন? পার্লামেন্ট এমন কোনো আইন করেনি, যেটা নদীর স্বার্থের পরিপন্থী। আমাদের লিমিটেশন আছে এটা সত্যি। তবে নদীর যে আইনগত অভিভাবক রয়েছে তাদেরকে এর দায়িত্ব নিতে হবে।

প্রাণ প্রকৃতি-প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, একেরপর এক নদী খুন হচ্ছে। মামলা করে টেকা যায় না। এখানে আদালত আর ক্ষমতার একটা ব্যাপার আছে। নদীকে সেভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত অসংখ্য সুটকি নদী খুন হচ্ছে। বরাইল নদীতে সাম্প্রতিক সময়ে ৩টি বাঁধ দেওয়ার কারণে সুটকি নদী মৃত প্রায়। অর্থাৎ উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে এমন হচ্ছে। এগুলার সাথে বিশেষজ্ঞরা, দখলদার যার সাথে ক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে তারা জড়িত। এরা সবাই মিলে নদীকে শেষ করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দখল-উচ্ছেদের প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা দরকার। এটি না করলে এসব উচ্ছেদ অভিযানে কোনো ফল আসবে না। নদীকে রক্ষা করার মানসিকতা থাকতে হবে। নয়তো সবই লোক দেখানো কর্যক্রম হয়ে থাকবে। এজন্যই আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান দেখছি কিন্তু নদী রক্ষা পাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি জেলায় নদী কেন্দ্রীক আন্দোলন হচ্ছে। অপরদিকে নদী রক্ষা কমিশনের সাথে আমাদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কারণ তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। সুটকি নদীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এই নদীর সাথে যদি অন্য নদীর সংযোগ থাকে, তবে উন্নয়ন কার্যক্রমের সমতা খেয়াল রাখতে হবে। এসময় ভূমি মন্ত্রণালয় এর সাথে বসে বদ্ধ জলাশয় থেকে উন্মুক্ত করা দাবি জানান। একইসঙ্গে সুটকি নদীর বিষয়ে স্থানীয় জেলা প্রশাসক এবং প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার কথা জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

https://www.dailysangram.info/post/536820