১ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ৩:০২

প্রমাণ করতে হবে স্বাধীনতা-অধিকার আছে

-সালাহউদ্দিন বাবর

বাংলাদেশের ৯১ শতাংশ মানুষ গণতন্ত্র, মানবিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা মনে করেন রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা একটি বড় শক্তি। এ দেশেরই ৬০ শতাংশের মতো মানুষ একটি গণতান্ত্রিক সরকার কাঠামোকে সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা হিসেবে মনে করেন। তাদের উল্লিখিত অভিমতগুলো থেকে যে ধরনের প্রশাসনিক বিষয়টি স্পষ্ট হয়। দুর্ভাগ্য হলো, বাংলাদেশের জনগণ ঠিক তার বিপরীত পরিবেশ পরিস্থিতির ভেতর এখন আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে আছেন। তারা যে গণতান্ত্রিক রীতি-পদ্ধতি ও সুশাসন চান। দীর্ঘদিন থেকে তাদের সে চাওয়া। সোনার হরিণ হয়ে বন-বাদাড়ে ছুটোছুটি করছে। সেজন্য মানুষের আফসোসের কোনো শেষ নেই। এই নিবন্ধে যে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। সে সমস্তই যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত একটি জরিপ প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন থেকে সংগৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি এই জরিপ পরিচালিত হয়। গণতন্ত্রের প্রকৃত-চর্চা, অনুশীলন হয় মূলত নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এই অনুশীলন তথা ভোট যতটা সুষ্ঠু স্বচ্ছ অবাধ অংশ গ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে।

গণতন্ত্র ঠিক ততটা সংহত সঠিক এবং ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছতে শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হবে। এমন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ইসি দায়িত্ব পালনের স্বাধীন থাকবেন। এই ক্ষমতা বলে ইসি জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন উপহার দেবেন- এটি সবার কাম্য। এমন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় একটি সুষ্ঠু অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের তথা সরকারের। সেজন্য দেশের সর্বোচ্চ আইনগ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’ অর্থাৎ ইসি ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যৌথভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ব্যাপারে দায়বদ্ধ। যাতে প্রশ্নমুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে।

উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসরণ করে কতটা ভালো নির্বাচন হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অনেকেরই কমবেশি ভূমিকা রয়েছে। যেমন ইসি রাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা, দেশী-বিদেশী সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা এবং ইসি কর্তৃক স্বীকৃত নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। তাদের হাতে নির্বাচন ভালো-মন্দের ব্যারোমিটার থাকে। তাই এসব স্টেকহোল্ডারদের গুরুত্ব অনেকখানি। ইতঃমধ্যে দেশবাসী জেনে গেছেন। ইসি দেশের ৬৬টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু ইসি শুরুতেই গলদ করেছেন। এ নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে। এই ৬৬টি প্রতিষ্ঠানের সব কয়টি কেবল নামসর্বস্ব ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে অতীব ঘনিষ্ঠ। তাদের মধ্যে অনেকের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার বিধি-বিধানও জানা নেই। নেই তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তি পর্যন্ত। এমন সব নিধিরাম সরদারদের দিয়ে কী ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন হবে? এখন এমন সন্দেহ দানা বাঁধছে যে, এরা সবাই সমস্বরে কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাইবেন। এদের দিয়ে তাহলে কেমন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ হবে। ৬৬টি সংগঠনের পক্ষে তাহলে শুধু ইসির মনোতুষ্টির একটা প্রতিবেদন রচিত হতে পারে মাত্র। এদের সেই প্রতিবেদন শাসকদলের প্রার্থীরা যথেষ্ট লাভবান হবেন। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচনে শাসক দলের যত অপকর্ম সব ধুয়ে দিবে এসব পর্যবেক্ষক টিম। সরকার ঘনিষ্ঠ এই সব সংগঠন কল্পনার মাধুরী মিশিয়ে প্রাপ্ত সব তথ্য উপাত্তকে উল্টে পাল্টে পরিবেশন করবে মাত্র। যে প্রতিবেদন নিছক সরকারকে তথা সরকারি দলের প্রশান্তি এনে দেবে মাত্র। এসব প্রতিবেদন দিয়ে ক্ষমতাসীন দল পশ্চিমের চোখে ধুলো দেয়ারও চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু তাদের এমন দুর্বল চিন্তাকে নিছক তামাশা বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ। মোদ্দাকথা ইসি ও রাজনৈতিক প্রশাসন, যৌথ প্রযোজনায় এমন একটি প্রহসনই মঞ্চায়িত করতেই বদ্ধপরিকর। কিন্তু তার ফলাফল মাকাল ফলেরই মতো হতে বাধ্য। কিন্তু ইসি ও রাজনৈতিক প্রশাসনের এমন স্বপ্নের ‘গুড়ে বালি’ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সম্প্রতি তারা বলেছে, বাংলাদেশে এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ বজায় নেই। তাই তারা কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না। এ যেন ইসির মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত। যদি তারা উপলব্ধি করে থাকে। ইসি কীভাবে ব্যাঙ্গাচির মতো সব পর্যবেক্ষক দল দিয়ে নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক বলয় থেকে ‘মানসম্পন্ন’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্টিফিকেট আদায় করবে? আসলে এখন এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এদেশে এ মুহূর্তে আর পুতুল খেলার মতো একটি নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

এদিকে, ইসি আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে স্পষ্ট এবং সতর্কতামূলক এক বার্তা পেয়েছেন। সম্প্রতি ইসি কর্তৃক বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি সংলাপের আয়োজন করেছিল। সেখানে ইসির ভাবমর্যাদা, কোন মানের নির্বাচন হওয়া জরুরি সেসব নিয়ে বিশিষ্টজনরা গুরুত্বপূর্ণ সব মতামত দিয়েছেন। সেখানে ইসি ভাবমর্যাদা নিয়ে বিশিষ্টজনদের একজন বলেছেন, আমরা মুখে বলি নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাবান। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নেই। সঙ্কট এত গভীর যে, সব দায় কমিশনের ওপর দিয়ে লাভ নেই। বাস্তবতা নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে নয়। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। একের পর এক এভাবে চলতে থাকলে ইসির কোনো মর্যাদা থাকবে না। আলোচনাকালে অপর এক বিশিষ্টজন বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। সামনে জাতীয় সংসদের নির্বাচন। এখন সেই একই ধরনের নির্বাচন করব কি না। সে প্রশ্ন রয়ে গেল। নির্বাচনে সব দল অংশ নিতে পারবে কি! সব ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি! সাবেক এক নির্বাচন কমিশনার সংলাপে অংশ নিয়ে বলেছেন, জামালপুরের ডিসি মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে, এই ডিসিকে দিয়েই আপনাদের নির্বাচন করতে হবে। আর এমন ডিসিদের দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেছেন, বড় একটি দল যদি নির্বাচনে না আসে। তবে যতই ভালো নির্বাচন হোক না কেন। সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ওই দলকে বাদ দিয়ে আরো তিন শ’ রাজনৈতিক দল নিয়ে নির্বাচন করলেও সেটিকে আপনি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে পারবেন না।

এখন প্রশ্ন হলো ইসি কি সুধীজনদের এমন বার্তাটা পাওয়ার পর তাদের সম্বিৎ কি ফিরে পেয়েছেন! কিন্তু তাদের দেহভঙ্গিমায় তা প্রতীয়মান হচ্ছে না। ইসি সেই গোড়া থেকে বলে আসছেন। আমরা গভীরভাবে নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করছি। তবে তাদের পর্যবেক্ষণের গভীরতা কতটুকু। তাদের ভাব-ভূমিকায় ও কথাবার্তায় তার কিছুমাত্র প্রকাশ নেই।

এই ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অনেক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ও জাতীয় সংসদের অনেকগুলো শূন্য আসনের উপ-নির্বাচন করিয়েছেন। কিন্তু এসব নির্বাচনের সবগুলোতে যত অনিয়ম কারচুপি, শাসকদলের মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন, ভোটারদের অনুপস্থিতি সবই ইসি দেখেছেন। কিন্তু এসব নিয়ে তাদের গভীর পর্যবেক্ষণের ফলটা কী ছিল! তারা কি অনিয়মগুলোর কোনো প্রতিবিধান করেছে? ইসির কার্যালয় থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকা গুলশানে কিছুকাল আগে সংসদের একটি শূন্য আসনের যে উপনির্বাচন হয়েছিল, সেখানে যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছিল- ইসি নিশ্চয়ই সেটি পর্যবেক্ষণ করেছে। সেটি ঢাকাবাসী সে নির্বাচনের তরিকাটি ভালোভাবে দেখেছেন। আসলে ইসির সব কিছুই নিয়েই বাগাড়ম্বর করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আটলান্টিক কাউন্সিলের ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি সেন্টারের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ড্যান নেয়েগ্রা। সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তার দেয়া সাক্ষাৎকারটিতে তিনি যেহেতু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও উন্নয়ন ধারণা সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলেছেন। সেজন্য সেই সাক্ষাৎকারের প্রাসঙ্গিকতার সাথে এই নিবন্ধের অনেকখানি সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়। তাই সেই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হচ্ছে- তিনি বলেছেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, যে দেশগুলোর নিজেদের উন্নয়নের পথে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। তারা সবচেয়ে বেশি উন্নতি করতে পেরেছে। আমরা স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক, আইনি, রাজনৈতিক এই তিন ভাগে ভাগ করেছি। সমৃদ্ধি বলতে আমরা শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বোঝাতে চাইনি। একটি দেশের সার্বিক উন্নতিকে বোঝাতে চাই। আমাদের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি সূচকের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর তালিকায়, দেখবেন তারা অর্থনীতি ও স্বাধীনতা সব দিক থেকে এগিয়েছে। এই আলোকে যদি বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়। তবে দেখা যাবে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সর্বজনীন নয়। গুটি কতক লোক মাত্র সমৃদ্ধিতে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। কিন্তু বৃহৎ জনগোষ্ঠী চরম অর্থনৈতিক দৈন্য দশার মধ্যে দিন যাপন করছেন। গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা এখানে নেই; কথা বলার স্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র আর মানবাধিকার অনুপস্থিত। বাংলাদেশে দুঃসহ যাতনার মধ্যে মানুষ দিন যাপন করছেন।

অপর এক প্রশ্ন ছিল; আপনাদের সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ স্বাধীন পরিবেশে বাস করে। বাকিরা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার অধীনে আছেন। তাহলে নাগরিকদের সমৃদ্ধি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেয়ে কর্তৃত্ববাদ বেশি সফল নয় কি? উত্তরে ড্যান নেগ্রেয়া বলেন, আমাদের সামনে চীন ও রাশিয়ার উদাহরণ আছে। চীনের প্রসঙ্গে বলতে পারি, তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরের চিত্র দেখুন। প্রবৃদ্ধি কমছে। আবারো বলব অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি স্বাধীনতা না থাকলে উন্নয়ন টেকসই হয় না। সাময়িকভাবে মনে হতে পারে, কোনো দেশ গণতান্ত্রিক বা নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থেকেও সফল হচ্ছে। কিন্তু সেই সাফল্য বেশি দিন টেকে না। আমরা রাশিয়ার সাথে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়ার তুলনা করতে পারি। কারণ এই তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্রই একসময় সোভিয়েট ইউনিয়নের অংশ ছিল। বাল্টিক দেশগুলো স্বাধীনতাকে বেছে নিয়েছে। রাশিয়া নেয়নি। ফলে বাল্টিক অঞ্চল রাশিয়ার চেয়ে অনেক দ্রুত উন্নতি করেছে। তারা মধ্যম আয়ের দেশে আটকা পড়েনি।

চীনকে আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার ও তাইওয়ানের সাথে তুলনা করি। ১৯৬০ এর দশকে তারা একনায়কতন্ত্রের অধীনে ছিল। দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান স্বাধীনতাকে বেছে নিয়েছে। এখন তারা মধ্যম আয়ের ফাঁদ পেরিয়ে গেছেন এবং অনেক ভালো করছে। আমরা আমাদের গবেষণায় প্রমাণ করেছি, গণতন্ত্র-স্বাধীনতাই টেকসই উন্নয়নের পথ।

দৈনিকটির এক প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল বলা হয়। আবার বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকারের মান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের কিছু দেশের উদ্বেগও আছে- এ অবস্থায় আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র- এ ধরনের মডেলের কথাও অনেক সময় আলোচনায় আসে।

উত্তরে ড্যান বলেন, আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র ও অধিকার মডেলটি ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের হিসাবে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে গেছে। ২০২৩ সালের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির সূচকে ১৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ কিন্তু ১৪১তম স্থানে পড়ে আছে।

প্রশ্ন : অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকার অর্জিত না হওয়ার ঝুঁকিগুলো কী কী?
উত্তর : আমি এ ক্ষেত্রে আবারো চীনের উদাহরণ দেবো। সেখানে উন্নতি হলেও স্বাধীনতা অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত। এ কারণে উন্নতি টেকসই হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীরা অন্যত্র সরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য সুযোগ আছে সেই বিনিয়োগ ধরার। চীন থেকে কারখানা আশপাশের দেশগুলোতে যাচ্ছে। সেগুলো বাংলাদেশেও আসতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। এখন শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি নিয়ে বিদেশী বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন। বাংলাদেশ প্রমাণ করতে হবে দেশে স্বাধীনতা ও অধিকার বলবৎ আছে।
সামনে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন। একটি দেশের সমৃদ্ধির জন্য একটি ভালো নির্বাচন কতটা গুরুত্বপূর্ণ ।

উত্তরে ড্যান বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আছে। সেখানে বিরোধীদের জন্য সুযোগ রাখা নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা ইত্যাদি জরুরি। একটি ভালো নির্বাচন শুধু নাগরিক স্বাধীনতা, অধিকার চর্চা ও স্থিতিশীলতার জন্য নয়। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদার জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্মরণ রাখতে হবে।
ndigantababar@gmail.com

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/780853