৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৭:৫৫

ডেঙ্গু রোগী দুই লাখ ছাড়াল

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৮, হাসপাতালে ভর্তি ১,৭৯৩

হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯৭৫ জন। এডিস মশাবাহিত এ রোগে এত বেশি রোগী আর কখনো হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। আর এত বেশি মৃত্যুও দেখতে হয়নি বাংলাদেশকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১ হাজার ৭৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে এ বছর ভর্তি রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৯৮১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ৫৮৪ জন ঢাকার, আর ১ হাজার ২০৯ জন ঢাকার বাইরের। এছাড়া গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মোট ৯৭৫ জনের মৃত্যু হলো। বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯ হাজার ৫২৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩২৮৩ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬২৪৩ জন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ২০০০ সালে বাংলাদেশে সরকারিভাবে ডেঙ্গুকে রোগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সে বছরই সাড়ে ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এরপর দুই দশক ধরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, রোগী ব্যবস্থাপনা এবং এডিস মশা নির্মূলে কাজ করছে সরকার। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা এবং রোগী ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। ২০২২ সালে ৬২ হাজার রোগীর মধ্যে ৩৮২ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়। সে বছর ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

একইভাবে ২০০১ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে মারা যান ৪৪ জন। ২০০২ সালে আক্রান্ত হন ৬ হাজার ৩২২ জন, মারা যান ৫৮ জন। ২০০৩ সালে আক্রান্ত হন ৪৮৬, মারা যান ১০ জন। ২০০৪ সালে আক্রান্ত হন ৩ হাজার ৯৩৪ জন; মারা যান ১৩ জন। ২০০৫ সালে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৪৮ জন, মারা যান ৪ জন। ২০০৬ সালে আক্রান্ত হন ২ হাজার ২০০জন, মারা যান ১১ জন। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৪৯৮ জন আক্রান্ত হলেও ওই চার বছরে মৃত্যু হয়নি। এরপর ২০১১ সালে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৩৫৯ জন, মৃত্যু হয় ৬ জন। ২০১২ সালে আক্রান্ত হন ৬৪১ জন, এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ২০১৩ সালে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৭৪৯ জন; মারা যান দুজন। ২০১৪ সালে ৩৭৫ আক্রান্ত হলেও মৃত্যু শূন্য ছিল। ২০১৫ সালে আক্রান্ত হন ৩ হাজার ১৬২ জন; মারা যান ৬ জন। ২০১৬ সালে আক্রান্ত হন ৬ হাজার ৬০ জন; মারা যান ১৪ জন। ২০১৭ সালে আক্রান্ত হন ২ হাজার ৭৬৯ জন; মারা যান ৮ জন। ২০১৮ সালে আক্রান্ত হন ১০ হাজার ১৪৮ জন; মারা যান ২৬ জন। ২০২১ সালে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন; মারা যান ১০৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই শুরু হয় ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিটি মাসে ধারাবাহিকভাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ে। জুনে যেখানে ৫ হাজার ৯৫৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, জুলাইয়ে তা বেড়ে হয় ৪৩ হাজার ৮৭৬ জনে। এরপর আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন। সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার আগেই সেই সংখ্যা ৭৭ হাজার ১৭৩ জনে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ডেঙ্গুতে জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর জুলাইয়ে ২০৪ জন এবং আগস্টে ৩৪২ জনের মৃত্যু হয়। আর সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ দিনে প্রাণ গেছে ৩৮২ জনের। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে সারা দেশে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সঠিকভাবে না হওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এই চেষ্টা নিয়মিত চললেও সফলতা দেখতে অন্তত আরও এক বছর লাগবে। আর ডেঙ্গুতে ধারাবাহিক মৃত্যু বাড়ার কারণ এখনো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার হয়নি। এখনো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্তকরণ, ল্যাবরেটরি টেস্ট, ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের মাধ্যমিক স্তরের হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থাও হয়নি। রোগী বাড়তে থাকলেও মৃত্যুর সংখ্যাও এই হারে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। রোগী কমলে মৃত্যু কমবে। তিনি আরও বলেন, এই ধারা কতদিন চলবে তা রোগতত্ত্ববিদরা একা বলতে পারবেন না, আবহওয়াবিদদের পরামর্শ লাগবে।

আবহওয়াবিদরা বৃষ্টিপাতের বিষয় বলতে পারবেন। কারণ মশা বংশবিস্তারে বৃষ্টির সম্পর্ক রয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হলে আগামী মাসেও মশার প্রকোপ থাকবে। তখন ডেঙ্গুতেও আক্রান্ত হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/723319