৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৭:০১

সঙ্কটের বৃত্তে জাতীয় অর্থনীতি

ইবনে নূরুল হুদা

দেশে কোন কিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে না বরং সকল ক্ষেত্রেই অনাকাক্সিক্ষত আহাজারির প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। অর্থনীতিতে চলছে তীব্র মন্দাভাব। কোনভাবেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট ক্রমেই তীব্র হতে তীব্রতর হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম খাত তৈরি পোশাক শিল্পে চলছে রীতিমত অচলাবস্থা। রেমিট্যান্স প্রভাবেও ভাটির টান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ডলারের উচ্চমূল্য ও সঙ্কট জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যও স্থবির করে দিয়েছে। রিজার্ভ পরিস্থিতিও এখন একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটও সার্বিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল ও অস্থির করে তুলেছে।

মূলত, দেশে তীব্র ডলার সঙ্কট, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের প্রধান শিল্প ও উৎপাদন খাতে। ডলার সঙ্কটের কারণে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আমদানির ওপরে বেশ কিছু কড়াকড়ি আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বোপরি পর্যাপ্ত ডলার মজুদ না থাকায় অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকও দীর্ঘদিন ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছে না। ফলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন আমদানিকারকরা। এসব শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়েও জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন কারখানা মালিকরা। কড়াকড়ির মধ্যে কাঁচামাল আনতে না পারায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আবার উৎপাদন খাতের বড় অনেক কোম্পানি কাঁচামালের অভাবে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না। নানা জায়গায় ধরনা দিয়েও এ সমস্যার সমাধান মিলছে না।

এছাড়াও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়। শিল্পে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এতে সঙ্কটে পড়েছে অভ্যন্তরীণ অনেক শিল্প কারখানা। দেশীয় বাজারে একদিকে এসব পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে, একই সাথে কাঁচামাল আমদানি নিয়ে জটিলতায় উৎপাদন অব্যাহত রাখাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। আবার পোশাক খাতে রয়েছে পশ্চিমী স্যাংশনের ভয়। রফতানিকারক দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে না পারলে ডলার সঙ্কট আরও বাড়বে নিশ্চিতভাবে। পাশাপাশি আমদানি স্বাভাবিক না হলে ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়বে।

দেশের অর্থনীতি বর্তমানে যেসব সমস্যার মুখে পড়েছে, এর মূলে মার্কিন ডলারের সঙ্কট অন্যতম। নীতিনির্ধারকরা ডলার সঙ্কটের বিষয়টি সাময়িক মনে করলেও ক্রমেই তা দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতি এখন চরম আকার ধারণ করেছে। দ্রব্যমূল্যের বাড়তি ব্যয় মেটাতে সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। সার্বিক দিকে বিবেচনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি অর্থনীতিকে বড় ধরনের বিপাকে ফেলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত আগস্ট মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ। আগস্টের রেমিট্যান্স গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন, যা বৈদেশিক মুদ্রার কমতে থাকা রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলেই মনে হচ্ছে। সর্বোপরি হঠাৎ করেই নগদ ডলারের দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করায় বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে সাত মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। দাম বাড়ায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি।

অর্থনীতিবিদরা ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার তাগিদ দিলেও বিষয়টিকে কোনভাবেই আমলে নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অথচ বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম বাজারের ওপরই ছেড়ে দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একতরফা ও দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তে মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলার কেনাবেচা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোতেও কাক্সিক্ষত পরিমাণে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এতেই খোলাবাজারে প্রতি ডলার এখন ১১৭-১১৮ টাকা দরে লেনদেন হচ্ছে। অথচ ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের জন্য প্রতি ডলারের নির্ধারিত দাম ১১৩ টাকার মধ্যে। এছাড়া ব্যাংক খাতের প্রায় সব সূচকেই নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে ঝুঁকির মাত্রাও বেড়েছে। বেড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণও, যা ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি থেকে বেড়ে এখন ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য খাতের সব ঝুঁকি মিলে বাস্তবে এর পরিমাণ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক দিকগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও নানমুখী পদক্ষেপে হয়তো তা থেকে উদ্ধার হওয়া সম্ভব। কিন্তু ব্যাংক-আর্থিকপ্রতিষ্ঠানে ধস নামলে কোনো দেশের পক্ষেই তা উত্তোরণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে দেশের আবাসন খাতের কারণে অর্থনীতি অনেকটা চাঙ্গা ছিল কিন্তু সরকারের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নের নামে সময়ক্ষেপণসহ নানাবিধ সমস্যায় এই খাতও বড় ধরনের জটিলতার মুখে পড়েছে। যা সার্বিক পরিস্থিতিকে আরো অশান্ত ও জটিল করে তুলেছে।

ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, দেশে পণ্য উৎপাদন করা দূরূহ হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি করতে অধিকাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু গত বছর বৈশ্বিক দ্রব্যমূল বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে এক বছরে বিনিময় হার ২৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন, খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ডলার সঙ্কটের কারণে এলসি খোলার খরচ এবং পণ্য তৈরির খরচও বেড়ে গেছে। এলসিতে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা সঠিকভাবে না মেলায় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের চাহিদা এবং যোগানের ভারসাম্য আনতে বিনিময় মূল্য বেধে না রেখে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। আর তা করা হলে খোলা বাজারের সাথে আনুষ্ঠানিক খাতের বিনিময় হারে খুব একটা পার্থক্য থাকবে না। তখন ডলার লেনদেন হুন্ডির প্রবণতা হ্রাস পাবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এখনি সে পথে এগুচ্ছে না। কারণ তাতে টাকার মান আরও হ্রাস পাওয়া এবং মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মূলত, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, প্রবাসীরা ব্যাংকের বাইরে বেশি রেট পাচ্ছে, তারা হুন্ডি করে টাকা পাঠাচ্ছে। এটাও মুদ্রা পাচারের মধ্যে পড়েছে। এটা সমাধানের যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ এসেছে বিভিন্ন মহল থেকেই। অন্যথায় আগামী দিনে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে।

জানা যায়, মাঝে কয়েক বছর বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার অনেক কমেছিল। ওই সময়ে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ অনেক বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে প্রতিবছরই রফতানি ও রেমিট্যান্সেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। রিজার্ভ বাড়তে থাকায় তখন এতটাই আত্মতুষ্টি দেখা দেয় যে, রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২শ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হয়। মালদ্বীপকে ২শ’ মিলিয়ন ঋণের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এমনকি রিজার্ভ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঋণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। ২০২১ সালের শেষ দিকে অর্থনীতিতে করোনা-পরবর্তী বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তখন আমদানির চাহিদা বাড়ে। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স কমে যায়। এর প্রভাবে কমতে থাকে রিজার্ভ। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থনীতিতে নতুন সঙ্কট তৈরি করে। সঙ্কট কাটাতে এখন কঠিন শর্তে আইএমএফ’র ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে। যা আমাদের অর্থনীতির অস্থিরতার কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়।

ডলারের দর কৃত্রিমভাবে অনেক দিন ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ধরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে দুই বছর আগে সঙ্কট শুরুর পর দর বেড়ে যাওয়ার চাপ তৈরি হয়। এরপরও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে পুলিশী অভিযানসহ নানাবিধ হস্তক্ষেপ করে দর কমিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। আবার বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত দুই বছরে ২ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও সঙ্কট থামানো যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর কাছে ১১০ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে। গত বছরের এ সময়ে বিক্রি করেছিল ৯৫ টাকা দরে।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ডলার সঙ্কটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। ফলে শিল্প-বাণিজ্যে সমস্যা হচ্ছে এবং কর্মসংস্থান কমছে। ডলার বাজারে অস্থিরতার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলছে। বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার খরচ বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ থাকলেও সংশ্লিষ্টদের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। আর এ জন্য বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিরও আবশ্যকতা রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জ্ঞাত হওয়া গেছে যে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। ডলারের সঙ্কট থাকা এবং একই সময়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) আমদানি ব্যয় ৬ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারে নেমেছে। আমদানি কম হয় ১৩শ’ কোটি ডলার। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয় হয় ৪ হাজার ৯২৫ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৩০৯ কোটি ডলার বেড়ে ৫ হাজার ২৩৪ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে অল্প প্রবৃদ্ধি হয় এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে বাড়ে প্রায় ৬০ কোটি ডলার। ফলে আমদানির জন্য ১৩ বিলিয়ন ডলার কম খরচ হয়েছে। অপরদিকে রফতানি ও রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এতে চলতি হিসাবে ঘাটতি ১৮ বিলিয়ন থেকে কমে ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।

মূলত, আমদানি ব্যয়ে বড় সাশ্রয় এবং রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়ার পরও ডলার সঙ্কট থেকে বের হওয়া যায়নি। নতুন বিষফোঁড়া হিসেবে হাজির হয়েছে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি, যেখানে বড় অঙ্কের উদ্বৃত্ত ছিল। সঙ্কটের কারণে ক্রমাগত মূল্য হারিয়েছে টাকা এবং পক্ষান্তরে শক্তিশালী হয়েছে ডলার। গত এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ১০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে আইএমএফ’র হিসাব অনুযায়ী, ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে ১১০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। এতে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামতে পারে বল আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এছাড়া দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। আবার রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা, ডলার সঙ্কট এবং একেক সময় একেক নীতির কারণে বিদেশী বিনিয়োগ ও ঋণের গতিতে রীতিমত জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। একই সময়ে পরিশোধ অনেক বেড়েছে। আবার বছর দুয়েক আগে ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদে বিদেশী ঋণ পাওয়া যেত। এখন সুদ ৯ শতাংশের বেশি। গত দুই বছরে ডলারের দর ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ দ্রুত কমছে। গত এক বছরে স্বল্পমেয়াদি বিদেশী ঋণ প্রায় ৪১০ কোটি ডলার বা ৩০ শতাংশ কমে জুন শেষে ১ হাজার ৩৬৬ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছরের জুনে যা ১ হাজার ৭৭৬ কোটি ডলার ছিল। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে ৮৬৯ কোটি ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরে নিট বিদেশী বিনিয়োগ ১২ শতাংশ কমেছে। এসেছে মাত্র ১৬১ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে গত জুন শেষে আর্থিক হিসাবে ২১৪ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত বছরের জুন শেষে এই হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ডলার। মূলত আর্থিক হিসাবের ঘাটতিই দেশের ডলার বাজারে চাপ তৈরি করেছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান ডলার সঙ্কট এবং এর দাম বেড়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর পড়তে শুরু করেছে। ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি সঙ্কোচিত হয়ে পড়েছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে অনাকাক্সিক্ষত জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ প্রতিনিয়তই বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে পণ্যের দামের ওপর। ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। ফলে ব্যাহত ও বিঘিœত হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। ফলে জনদুর্ভোগের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে সবত্রই।

এমতাবস্থায় চলমান ডলার সঙ্কটের একটি যৌক্তিক সমাধান, পোশাক খাতে গতি ফিরিয়ে আনা এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক করে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারসহ বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য সকল ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা সাধনের কোনই বিকল্প নেই। একই সাথে বৈদেশিক শ্রমবাজার সম্প্রসারণ করে রেমিট্যান্স প্রভাবে গতি ফিরিয়ে আনা দরকার। আর বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহ দেয়ার জন্য প্রণোদনার হারও বৃদ্ধি করা দরকার। একই সাথে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটেরও একটি গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক সমাধান হওয়া দরকার। অন্যথায় দেশীয় শিল্প বিপর্যস্ত হবে। একই সাথে সঙ্কটের বৃত্তেই আবদ্ধ থাকবে জাতীয় অর্থনীতি।

https://www.dailysangram.info/post/536711