১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১১:৩৬

ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় সিলেট সীমান্ত যেন ‘চোরাই রাজ্য’

এভাবে প্রতিদিনই গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও বিয়ানিবাজার উপজেলার সীমান্ত দিয়ে সিলেটে প্রবেশ করে কোটি টাকার পণ্য। এ ছাড়া গরু মহিষের চালানও আসে অবৈধ পথে। কখনো প্রশাসন ম্যানেজ করে, আবার কখনো প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব অবৈধ পণ্য আসছে। অভিযোগ রয়েছে, শহরের বাহিরে থেকে সিলেট শহরে ছাত্রলীগের নেতারা মোটরসাইকেল ও গাড়ির প্রটোকল দিয়ে শহরে নিয়ে আসে চিনিসহ সব ধরনের ভারতীয় অবৈধ পণ্য।

এসব চোরাচালানের ঘটনা নিয়ে সিলেটে ঘটছে তুঘলকি কাণ্ড। চোরালানের ঘটনায় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জড়িত উল্লেখ করে জেলা আদালতে মামলার ঘটনায় বাদী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের এপিপি প্রবাল চৌধুরীর উপর হামলা চালিয়ে পায়ে গুলি করে আহত করা হয়।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে চিনির দাম দেশের বাজারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হওয়ায় সীমান্ত দিয়ে চিনি চোরাচালান গত দুই মাস ধরে বেড়েছে অনেক গুণ।

সাম্প্রতিক সময়ে চোরাচালানের চিনি পাইকারি বাজারে পৌঁছে দিতে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কথা বলায় বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রাতে নিজ বাসায় হামলার শিকার হন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট প্রবাল চৌধুরী পূজন। সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। হামলায় আহত হয়েছেন পূজন। এনিয়ে আইনজীবী আদালতে মামলাও করেছেন।

তবে গত জুলাই মাসে চোরাচালানের চিনি সিলেটে ঢুকায় এর দামও দেশের অন্যস্থানের তুলনায় কিছুটা কম ছিলো। কিন্তু আগস্ট মাসের শুরুতে চিনি চোরাচালান নিয়ে গণমাধ্যমগুলো সরব হলেও সীমান্ত দিয়ে চিনি চোরাচালান কমে যায়। এর ফলে সিলেটের বাজারেও চিনির দাম এক লাফে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে গেছে।

সম্প্রতি আবারও সেই অপকর্ম চিনি চোরাচালান চলছে ব্যাপক হারে। তবে এবার পাল্টেছে কৌশল; টানা বৃষ্টি এবং ডোবানালায় পানি বাড়ায় কমেছে টহল আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে অবৈধভাবে নানা পণ্য চোরাকারবারীরা। এতে আসছে চিনি, কসমেটিকস ও মাদক। এক কথায় বলা যায় চিনি নিয়ে চলছে তুঘলুকি কাণ্ড।

এদিকে গত বুধবার পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার কাটাগাঙ্গ এলাকা থেকে ২৯৭টি মোবাইল সেটসহ একজনকে আটক করেছে। ওইদিন দিবাগত রাতে পুলিশের পৃথক অভিযানে উপজেলার নিজপাট ইউনিয়ের গৌরিশংকর, যশরপুর থেকে ১৮টি গরু, ১৫টি মহিষ ও ৫০ কেজি ওজনের ৩৭ বস্তা চিনিসহ ৪জনকে আটক করে।

ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা বলছেন, ভারতে একজন ভোক্তা যে চিনি কিনতে পারছেন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে, বাংলাদেশি ভোক্তারা একই মানের চিনি কিনে খাচ্ছেন তার দ্বিগুণ অর্থাৎ ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। যার কারণে গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজারসহ সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো চিনিসহ ভারতীয় পণ্য চোরাচালান হচ্ছে। জেলার শতাধিক সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে দেশে ঢুকে চিনিসহ নানা চোরাই পণ্য। এসব দেখেও না দেখার ভান করেন সীমান্ত পাহারায় নিয়জিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অনেক সদস্য।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ব্যবসায়ী সূত্র বলছে, ভারত থেকে চোরাই পথে আসা চিনি সিলেটের পাইকারি বাজার কালীঘাটেই বিক্রি করা হয়। দৈনিক প্রায় কোটি টাকার চোরাই চিনি কেনাবেচা হয় বলেও জানিয়েছেন কালিঘাটের ব্যবসায়ীরা। এরপর দেশীয় নানা ব্র্যান্ডের স্টিকারযুক্ত বস্তায় ভরে এসব চিনি পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। চোরাচালানে আসা এসব চিনি স্থানীয়ভাবে ‘ভারতীয় বুঙ্গার চিনি’ নামে পরিচিত।

জেলার জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তের শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য সিলেটে প্রবেশ করে। সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারি এই কাজে জড়িত। প্রায়ই চোরাই চিনি আটকের খবর পাওয়া গেলেও পাচারের পরিমাণের তুলনায় তা খুবই কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সীমান্ত এলাকার স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তাদের নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া চোরাচালানের চিনি নগরের কালীঘাট বাজার পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব নয়।

জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত জেলার ছয়টি থানা থেকে ১ হাজার ৪৩১ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব বস্তায় ৭১ হাজার ৪৯ কেজি চিনি ছিল। এসব ঘটনায় ২৩টি মামলা হয় এবং পুলিশ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, উদ্ধারের তথ্য-উপাত্ত দেখলেই বোঝা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে ব্যাপক হারে চিনি চোরাচালান হচ্ছে। তবে চোরাচালান হয়ে আসা চিনির তুলনায় উদ্ধারের পরিমাণ কম।

ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, আগে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ‘ম্যানেজ করে’ সড়কপথে ভারতীয় চিনি কালীঘাটে নিয়ে আসা হতো। সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু বাসিন্দা ‘লাইনম্যান’ হিসেবে চিনির বস্তাপ্রতি টাকা তুলে দিতেন। ছয় মাস ধরে ছাত্রলীগের কয়েকটি পক্ষ এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়। গোয়াইনঘাটের জাফলং-তামাবিল-জৈন্তাপুর-হরিপুর সড়ক দিয়ে ট্রাকযোগে চিনি যখন সিলেট নগরের বাইপাস এলাকায় আসে, তখন ছাত্রলীগের কিছু কর্মী মোটরসাইকেলের পাহারায় এসব ট্রাক কালীঘাটে পৌঁছে দেন।

একইভাবে কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট সড়ক দিয়ে আসা চোরাই চিনির ট্রাকগুলোকে সালুটিকর ও ধোপাগুল এলাকা থেকে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী পাহারা বসিয়ে কালীঘাটে দিয়ে আসেন। এ জন্য ট্রাকপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়।

১৩ আগস্ট সিলেট মহানগর হাকিম প্রথম আদালতে ছাত্রলীগের ৫৫ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে একটি মামলা করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁশলি (এপিপি) ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা প্রবাল চৌধুরী।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা চিনি চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। বাদী ফেসবুকে চিনি চোরাকারবারি ও অছাত্র দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রতিবাদমূলক স্ট্যাটাস দেন। এর জের ধরেই তাঁকে প্রাণে মারার উদ্দেশে গুলি করা হয়। এতে তিনি আহত হন।
মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ এবং মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদ, সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মিছবাউল করিম ওরফে রফিক, জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল আলমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা সবাই চিনি চোরাচালানে জড়িত বলে মামলার বাদী উল্লেখ করেছেন।

এ ব্যাপারে নাজমুল ইসলাম, রাহেল সিরাজ ও মো. নাঈম আহমদ বলেন, ছাত্রলীগের কেউ চিনি চোরাচালানে সম্পৃক্ত নন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি পক্ষ ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে এসব রটাচ্ছে। প্রবাল চৌধুরীর ওপর তাঁরা কোনো হামলাও করেননি।

বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলার শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য ঢুকে। সবচেয়ে বেশি চিনি আসে গোয়াইনঘাটের সোনাটিলা, তামাবিল, বিছনাকান্দি, নলজুড়ি, পাদুয়া, পান্তুমাই ও সোনারহাট; জৈন্তাপুর উপজেলার মোকামপুঞ্জি, আলুবাগান, কেন্দ্রী, ডিবির হাওর, ফুলবাড়ি, ঘিলাতৈল, টিপরাখলা, কমলাবাড়ি, গোয়াবাড়ি, হর্নি, বাইরাখেল, কালিঞ্জিবাড়ি, লালাখাল গ্রান্ট, বালিদাড়া, তুমইর ও ইয়াং রাজা; কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বরমসিদ্ধিপুর, উৎমা ও তুরং এবং কানাইঘাট উপজেলার ডনা সীমান্ত দিয়ে।

কালীঘাটের একাধিক ব্যবসায়ীর জানান, প্রতিদিন ২৫-৩০টি ট্রাক আসে। একেকটি ট্রাকে গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ বস্তা চিনি থাকে। সে হিসাবে কমবেশি ২ হাজার ১০০ বস্তা ভারতীয় চিনি এখানে বেচাকেনা হয়। এর বাইরে কালীঘাট ঘেঁষে থাকা সুরমা নদী দিয়েও প্রতিদিন অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ বস্তা চোরাই চিনি এখানে আনা হয়।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তা ভারতীয় চিনি ৫ হাজার ৯০০ টাকায় কেনেন। সে হিসাবে প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি টাকা চোরাচালানের চিনি কেনাবেচা হয়। পরে তা বাজারদরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন, যা আবার চলে যায় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের জেলায়।

কালীঘাটের চিনি ব্যবসায়ী জানান, দেশীয় ও আমদানির চিনি প্রতি ৫০ কেজির বস্তা তারা ৬ হাজার ২৪০ টাকায় কেনেন এবং তা পাইকারি দরে বিক্রি করেন ৬ হাজার ২৫০ টাকায়। অন্যদিকে চোরাচালানে আসা ভারতীয় চিনির ৫০ কেজির বস্তা কিছু ব্যবসায়ী বর্তমানে ৫ হাজার ৮৫০ টাকায় কেনেন।

পাইকারি দরে তারা এসব চিনি বিক্রি করেন ৫ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায়। সে হিসাবে বৈধ চিনিতে প্রতি বস্তায় লাভ হচ্ছে ১০ টাকা, চোরাচালানের চিনিতে প্রতি বস্তায় লাভ হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা।

জানা গেছে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে নানা পণ্য এনে দেশের বাজারে অধিক লাভে বিক্রির লোভে সিলেট সীমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী চোরাই সিন্ডিকেট। তারা বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসৎ সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে এ কারবার করেন। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে জনগণ। অবৈধভাবে আনায় যাচাই করার সুযোগ থাকে না এসব পণ্যের গুনগত মানের। কিন্তু দুর্মূল্যের বাজারে সুলভে পাওয়ায় চোরাই পণ্যগুলোতেই বেশি আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের।

জানা গেছে, গত সোমবার (২৮ আহস্ট) রাতে সীমান্তের প্রতাপপুর এলাকা থেকে ১৮ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ আটক করা হয় ইসমাইল মিয়া নামের এক চোরাকারবারিকে।

একই দিন সীমান্ত থেকে ন রে প্রবেশ করার সময় আম্বরখানা থেকে ১৪০ বস্তা চোরাই চিনি উদ্ধার ও দুটি পিকআপ জব্দ করে মহানগর পুলিশ। তবে এসব ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেননি তারা। এ ছাড়া মাঝেমধ্যেই ঢুকছে মাদক, গরু-মহিষসহ নানা চোরাই পণ্য। এর অধিকাংশই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ ব্যাপারে মেডিকেল রোডের লিবার্টি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক মো. আলমগীর হোসেন জানান, বাজারে বর্তমানে দুই ধরণের চিনি পাওয়া যাচ্ছে। একটা বড় দানার ভারতীয় চিনি। আরেকটি ছোট দানার দেশি চিনি। এরমধ্যে ভারতীয় চিনি ১২৫ টাকা কেজি দরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোটদানার দেশি চিনি ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন গত জুলাই মাসেও ১১০ টাকায় দরে ভারতীয় চিনি সিলেটের বাজারে বিক্রি হয়েছে। আগস্টে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ হলে চিনির দাম বেড়ে যায়। আগে চোরাচালানের মাধ্যমে বাজারে চিনি আসা অব্যাহত থাকায় দামও একটু কম ছিল।
সীমান্তে চোরাচালানের চিনি আসা প্রসেঙ্গ বিজিবি সিলেটের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সেলিম হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিক যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ কালবেলাকে বলেন, প্রশাসন থেকে বলেন বা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলেন ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীর রিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনকেও বলা হয়েছে যারা এমন করে যাদের জন্য ছাত্রলীগের বদনাম হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যেন ব্যবস্থা নেয়।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ কালবেলাকে বলেন, বিগত দিনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চিনি চোরাচালানের অভিযোগ উঠেছে কিন্তু আমরা ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী চিনি চোরাচালানে জড়িত এরকম প্রমাণ পাইনি বা কেউ প্রমাণও দিতে পারেনি। ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী যদি চোরাচালান বা অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকে তাহলে আমরা অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক ব্যবসায়ী ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে চোরাচালান ব্যবসা করতে পারে। তবে আমার জানা মতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়। প্রশাসনকেও বলা হয়েছে যদি চোরাচালানের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যেন সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সম্রাট তালুকদার বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ কর্তৃক চিনি খাতে মামলা হয় ৭১টি। এর মধ্যে উদ্ধার ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৮৭ কেজি চিনি ও ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধারকৃত চিনির মূল্য ২ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া গত জুলাই মাসে চোরাচালানের সাথে জড়িত ১৩ জন, আগস্ট মাসে আরো ৮১ জন, এবং চলিত মাসে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য জব্দ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৯১ হাজার ৩শ কেজি চিনি, নাসির বিড়ি ৩ লাখ ৯১ হাজার শলাকা, চা পাতা ১৬শ কেজি, ৫৮টি গরু, মহিষ ৬৩টি, কাপড় ১৮শ ১০ পিছ, মোবাইল ২৯৭টি, অটোরিকশার টায়ার ৪৬টি, সিরাপ ১৬ বোতল, চোরাইয়ে ব্যবহৃত ৬টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা, একটি কার, ২টি পিকআপ ভ্যান, ৩টি মিনি ট্রাক, ৩টি বড় ট্রাক ও ১২টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা জব্দ করা হয়েছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ কালবেলাকে জানান, অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য সিলেটে প্রবেশ বন্ধ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসব অভিযানে জানুয়ারি হতে আগস্ট পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫১, আটক ৮২ ও ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শেখ সেলিম কালবেলাকে বলেন, চোরাচালান বন্ধে জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে। সীমান্তে চোরাচালানের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযানের মাধ্যমে সেগুলো উদ্ধার করছি। কেউ এ ব্যাপারে আমাদের তথ্য দিলে আমরা চোরাচালানিদের ধরবো। এতে কোনো ছাড় নেই। চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার স্যারের নেতৃত্বে আমাদের এ অভিযান সবসময় চলবে।

https://www.kalbela.com/crime/24168