১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৩:০৩

ডেঙ্গুতে মৃত্যু সাড়ে ৭শ’ ছাড়ালো

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে আরও দুই হাজার ৯৫৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দুই হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকাতে ৯১১ জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) দুই হাজার ৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট দুই হাজার ৭৪৬ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৮৯৩ জন এবং সারা দেশের (ঢাকায় ব্যতীত) বিভিন্ন হাসপাতালে থেকে এক হাজার ৮৫৩ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে তিনজন ঢাকাতে এবং আটজন সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) মারা যান। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৭৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতে ৫৩১ জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ২২১ জন মারা যান। চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক লাখ ৫৪ হাজার ২২৮ জন। এর মধ্যে ঢাকাতে ৬৮ হাজার ৯৩৭ জন ও সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ৮৫ হাজার ২৯১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট এক লাখ ৪৩ হাজার ৪৬১ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৬৪ হাজার ১৮৪ জন এবং সারা দেশের (ঢাকা সিটি ব্যতীত) বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৭৯ হাজার ২৭৭ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

বর্তমানে সারা দেশে মোট ১০ হাজার ১৫ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ঢাকাতে চার হাজার ২২২ জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) পাঁচ হাজার ৭৯৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার হার শতকরা ৯৩ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি থাকার হার ৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮১ জন মারা যান।

এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ছাড়াল
সাড়ে ৮ হাজার : মৃত্যু ৩১
খুলনা ব্যুরো : খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছাড়াল ৮ হাজার ৯৫৮ জন। এসময়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৯৮৪ জন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে মোট ৩১ জনের। মারা যাওয়ার মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ১০ জন, খুলনায় ২ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, যশোরে ৬ জন, মাগুরায় ১ জন, কুষ্টিয়ায় ৫ জন, ঝিনাইদহে ২ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৮৩০ জন এবং রেফার্ড করা হয় ১১৩ জনকে।

খুলনা বিভাগে ( রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় ও সরকারি দুই মেডিকেল হাসপাতাল মিলে নতুন করে ২৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ২৯ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি হয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গত একদিনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় নতুন করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২৬৮ জন। বিভাগে ১০ জেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির মধ্যে খুলনায় ১৯ জন, বাগেরহাটে ৯ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, যশোরে ৪৫ জন, ঝিনাইদহ ২৫ জন, মাগুরায় ৬২ জন, নড়াইলে ২২ জন, কুষ্টিয়ায় ৩৪ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৫ জন এবং মেহেরপুরে ১২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।

খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় খুমেক হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৩০ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৯ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছে ১৬০ জন। এ পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালে ১১৬৭ জনকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ৯৯৭ জন এবং ১০ জনের মৃত্যু হয়। ,

খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা জেলায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৯ জন। এ সময়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৪৯ জন। এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪৫০ জন। এর মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯৪ জন এবং রেফার্ড করা হয় ৫ জনকে এবং মৃত্যু হয় ২ জন রোগীর।
চট্টগ্রামে ডেংগুতে এক শিশুর মৃত্যু ॥ আক্রান্ত আরও ১৩৮ জন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে গতকাল মংগলবার ২৪ ঘণ্টায় ডেংগুতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়েছে আরও ১৩৮ জন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ১৩৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেংগু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২২৩ জনে। এছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডে্গংুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬২ জন। গতকাল বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ডে্গংু রোগী ভর্তি ছিল ৩৩২জন।

ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে তিন নারীর মৃত্যু
ফরিদপুর সংবাদদাতা: ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন নারীর মৃত্যু হয়েছে। নতুনভাবে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২৫ রোগী। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৩৯ জন। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. এনামুল হক জানান, জানা যায়, মারা যাওয়া তিন নারী হলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া এলাকার মোছলেম শেখের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৩৫), একই উপজেলার চাঁদহাট গ্রামের রওশন মাতুব্বরের স্ত্রী রোকসানা সুলতানা (২৫) ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার পিংগুলিয়া এলাকার মনির উদ্দিনের স্ত্রী আবেজান বেগম (৭০)। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরিয়ম নামের এক গৃহবধূ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ৩টার দিকে তিনি মারা যান। অন্যদিকে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালে ভর্তি হন রোকসান সুলতানা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে তার মৃত্যু হয়। আবেজান বেগম ভর্তি হন সোমবার বিকেল ৪টার দিকে। রাত ২টার দিকে তিনি মারা যান। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৪ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ১৬২ জন। এর মধ্যে ছয় হাজার ৫১৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

https://www.dailysangram.info/post/535335