১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১২:০২

রিজার্ভ নামল ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

আকুর দায় পরিশোধ

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে নামল ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। জুলাই-আগস্ট মাসের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় গতকাল ১৩০ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে দিন শেষে নিট রিজার্ভ ২১ দশমিক ৪৮ বিলিয়নে নেমে এসেছে।

জানা গেছে, আঞ্চলিক দেশগুলোর লেনদেনের নিষ্পত্তির একটি মাধ্যম হলো আকু। তেহরানভিত্তিক এ সংস্থার সদস্য দেশ হলো ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। সদস্য দেশগুলো প্রতি দুই মাস অন্তর অর্থ পরিশোধ করে। আকু পেমেন্ট করার পর সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। প্রতি দুই মাসের দায় পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করে এসব দেশ।

জানা গেছে, প্রতি দুই মাস পর পর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দায় পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন, মার্চে ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন, মে মাসে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন এবং জুলাই মাসে পরিশোধ করা হয় ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাই ও আগস্ট মাসের এ আকুর দায় পরিশোধ করা হয় ১.৩ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: মেজবাউল হক গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্ট সময়ের জন্য ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি দায় পরিশোধ করা হয়েছে। এর পর আমাদের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭.৬১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি। তবে, আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী মোট রিজার্ভ থেকে ৬.১৩ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে রিজার্ভ থেকে রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) এর সরবরাহ করা ৪.১০ বিলিয়ন ও শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ২০ কোটি ডলার (১৫ কোটি ডলার শোধ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি, লংটার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানত রিজার্ভে দেখাচ্ছিলো। বিপিএম-৬ অনুসারে এগুলো রিজার্ভের অংশ নয়। সবমিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভের হিসাব থেকে ৬.১৩ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। আর মোট রিজার্ভ থেকে এ পরিমাণ ডলার বাদ দিলে ২১.৪৮ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ থাকবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ডলারের আন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বহিঃপ্রবাহ বেশি হচ্ছে। আবার রেকর্ড পরিমাণ বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশে গেলেও কাক্সিক্ষত হারে রেমিট্যান্স আসছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে গিয়েছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ। আগস্ট মাসেও আগের মাসের রেমিট্যান্সপ্রবাহের কমে যাওয়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। গত আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ডলার, যেখানে আগের মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে ছিল ১৯৭ কোটি ডলার। কিন্তু ইমপোর্ট পেমেন্ট কমছে না। বিশেষ করে আগের বকেয়া এলসি ও চলতি এলসির দায় মেটাতে হচ্ছে আন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বেশি হারে। এর ফলে প্রতি মাসেই কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ডলার আহরণ করছে অনেক ব্যাংকই এলসি খুলেছে তার চেয়েও বেশি পরিমাণ। এর ফলে প্রতি মাসেই তারা আমদানির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে ঘাটতির মুখে পড়ছে। কিন্তু বাজার থেকে ডলার কিনতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুধু সরকারের অতি প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় বিশেষ করে বিপিসির জ্বালানি তেল, বিসিআইসির সার, বিএডিসির ভোগ্য পণ্যসহ অতি প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় দেখে শুনে ব্যাংকগুলোকে কিছু ডলার সরবরাহ করছে। এর পরও বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে। যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ । অথচ আগের অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে হয়েছিল প্রায় সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার।

আমদানি কমায় বিদায়ী অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি চলতি হিসাবের ঘাটতি কমানো গেছে। তবে চলতি হিসাবের ঘাটতি নতুন রেকর্ড করেছে। এর পরিমাণ ২১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর আগে আর্থিক হিসাবের সর্বোচ্চ ঘাটতি ছিল ২০০৮-০৯ অর্থবছরে, সাড়ে ৮২ কোটি ডলার। বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বেসরকারি খাতের ঋণসহ ঋণের দায় পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আর্থিক হিসাবে ঘাটতি সচরাচর দেখা যায় না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত পাঁচবার এই ঘাটতি হয়েছিল। রিজার্ভ নিয়ে যে বাংলাদেশ ব্যাংক হিমশিম খাচ্ছে, এর বড় কারণ এই ঘাটতি। বৈদেশিক মুদ্রায় আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়াই এর মূল কারণ। এ কারণেই গত অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি হয়েছে ৮২২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এটিও বাংলাদেশের জন্য নতুন রেকর্ড।
যে হারে প্রতি মাসে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরো চাপে পড়ে যাবে। তখন আপৎকালীন দায় মেটাতে কষ্ট কর হবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির বিকল্প নেই।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/776452