১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১০:৩১

পোলট্রি খাদ্যের বিশ্ববাজার

আমাদের দেশে কোন পণ্যের দাম বাড়লে আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দেখানো হয়। কিন্তু বিশ্ববাজারে কোন পণ্যের দাম কমলে অভ্যন্তরীণ বাজারে তার কোন প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় না। যা আমাদের বাজার ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। আর সে বৃত্তেই পড়েছে আমাদের দেশের পোলট্রি খাদ্যের বাজার। জানা গেছে, বিশ্ববাজারে পোলট্রি খাদ্যের অনেকটাই কমে এসেছে। কিন্তু দেশীয় বাজারে তার কোন প্রতিফলন নেই। ফলে অস্থির হয়ে উঠেছে ডিমের বাজার। মূলত, গত এক বছরে প্রতিহালি ডিমের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ। অথচ শুধু পোলট্রি ফিডের দাম কমানো গেলে প্রতিটি ডিম ১০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। ভোক্তারা বলছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো খামার বা পাইকারি পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে। আবার কখনো পোলট্রি ফিড সরবরাহে চলে এ সিন্ডিকেট। ফলে দফায় দফায় দাম বাড়ছে ডিম ও মুরগির। সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেওয়া তথ্য মতে, বাজারে প্রতিহালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৩ টাকা। ২০২২ সালের একই সময়ে প্রতিহালি ডিমের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৩ টাকা। সেই হিসাবে গত এক বছরে হালি প্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ।

ফিড মিলের মালিকরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ফিড ও ওষুধের আমদানি খরচ বাড়তি, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, পণ্য খালাসে কাস্টমস জটিলতা এবং অভ্যন্তরীণ পরিবহন ভাড়া বাড়ার কারণেই কমানো সম্ভব হচ্ছে না ফিডের দাম। একই কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে আমিষজাতীয় পণ্যের বাজারে। ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফআইএবি) তথ্য মতে, পোলট্রি খাদ্যের উপকরণ ভুট্টার দাম ১৫ শতাংশ কমলেও সয়াবিনের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। প্রতিবছর প্রায় ৭৫ লাখ টন থেকে ৮০ লাখ টন ফিডের চাহিদা পূরণ করে স্থানীয় উৎপাদকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিশ্ববাজারে পোলট্রি খাদ্য ভুট্টা, সয়াবিন মিলসহ ফিড তৈরির অন্যান্য উপকরণ এবং ওষুধের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া ডলার সঙ্কটে এলসি খোলা যাচ্ছে না। এদিকে বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পোলট্রি খাদ্যের প্রধান উপকরণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে টনপ্রতি ৫১৯ ডলারে। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৯৪ শতাংশ কম। এ ছাড়া প্রতি টন ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ২৭৫ ডলারে। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯.৫৯ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, পোলট্রি ফিডের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক নেই। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়া উচিত ছিল। দেশের ফিড ব্যবসায়ীরা ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭৮ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯৭৮ কোটি টাকার শুল্ক ছাড় পেয়েছে কাঁচামাল আমদানিতে। অথচ তারা দেশের বাজারে পোলট্রি ফিডের দাম না কমিয়ে বাড়িয়েই চলেছে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্র বলছে, কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিজেদের মতো করে পোলট্রি খাদ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো রীতিমতো লুটপাট করছে। যদি তারা ফিডের দাম কমায়, তাহলে প্রতিটি ডিম ১০ টাকায় খেতে পারবে ভোক্তারা। বিপিআইসিসির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রতিদিন চার কোটি ৮৯ লাখ পিস ডিম উৎপন্ন হয়। সে হিসাবে বছরে হয় এক হাজার ৭৮৫ কোটি। যদিও ২০১০-১১ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০৮ কোটি। দেশের পোলট্রি খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ১২ শতাংশ হারে এই বিনিয়োগ বাড়ছে। সরাসরি ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী।

দেশের সার্বিক বাজার পরিস্থিতির প্রতিনিয়তই অবনতি হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সর্বোপরি পোলট্রি খাদ্যের লাগামহীন উচ্চমূল্যের কারণে ডিমের মূল্যও বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এমতাবস্থায় পোলট্রি খাদ্যের অভ্যন্তরীণ বাজার বিশ^বাজারের সাথে সমন্বয় করা না গেলে আগামী দিনে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। আরো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে ডিমের বাজার।

https://www.dailysangram.com/post/535111