৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:৫২

ঝুঁকিতে ব্যাংক-আর্থিক খাত

দেশে দীর্ঘদিন ধরেই ডলার সঙ্কট, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের বেশ কয়েকটি প্রধান শিল্প ও উৎপাদন খাতে। ডলার সঙ্কটের কারণে গত বছরের মাঝামাঝি আমদানির ওপরে বেশ কিছু কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত ডলার না থাকার কারণে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকও দীর্ঘদিন আমদানিতে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ঋণপত্র খুলতে পারছে না। এরফলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন আমদানিকারকরা। কারণ আমদানি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি-বেশিরভাগ পণ্যই আমদানি করা হয়। এসব শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়েও জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন কারখানা মালিকরা। কড়াকড়ির মধ্যে কাঁচামাল আনতে না পারায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আবার উৎপাদন খাতের বড় অনেক কোম্পানি কাঁচামালের অভাবে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না। নানা জায়গায় ধরনা দিয়েও এ সমস্যার সমাধান মিলছে না। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ। শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর বেড়েছে কারখানায় উৎপাদন খরচ। এ কারণে সঙ্কটে পড়েছেন দেশীয় অনেক উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে দেশের রফতানি আয়ের অন্যতম নাম পোশাক খাত বিপাকে পড়েছে বেশি। দেশীয় বাজারে একদিকে এসব পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে, সেই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানি নিয়ে জটিলতায় উৎপাদন অব্যাহত রাখাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। যা দেশের উন্নয়নে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। আবার পোশাক খাতে রয়েছে রাজনৈতিক কারণে রফতানি দেশের স্যাংশনের ভয়। রফতানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে না পারলে ডলার সঙ্কট আরও বাড়বে। পাশাপাশি আমদানি স্বাভাবিক না হলে ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়বে। যা থেকে রাতারাতি ঘুরে দাড়ানোও অনেকটা অসম্ভব। তাই সামনের দিনগুলোতে সঙ্কট বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্যাংশনের ভয়কে পাত্তা দিচ্ছেন না।


সূত্র মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে যেসব সমস্যার মুখে পড়েছে, এর মূলে মার্কিন ডলারের সঙ্কট। নীতিনির্ধারকরা মনে করেছিলেন, ডলারের সঙ্কট এবং এর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সাময়িক। তারা দীর্ঘদিন ধরে বলছেন, অচিরেই এর সমাধান হবে। কিন্তু সেই ‘অচিরেই’ আর আসছে না। ডলার সঙ্কট ও দর বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি অর্থনীতিকে বিপদে ফেলছে। এর মধ্যে গত রোববার আরও উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত আগস্ট মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ। আগস্টের রেমিট্যান্স গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন, যা বৈদেশিক মুদ্রার কমতে থাকা রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে। এদিকে আবারও হঠাৎ করে নগদ ডলারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে ডলার কেনাবেচার ওপর নজরদারি জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করায় বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে সাত মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। আরও ১০ মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। দাম বাড়ায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

অর্থনীতিবীদরা দীর্ঘদিন থেকেই ডলারের দামকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলছেন। কিন্তু এতে কর্ণপাত করছেনা বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্বব্যাপি ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একঘুয়েমি সিদ্ধান্তে মানি চেঞ্জারগুলোয় ডলার কেনাবেচা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোতেও কাক্সিক্ষত পরিমাণে ডলার মিলছে না। এই সুযোগে খোলাবাজারে প্রতি ডলার এখন ১১৭-১১৮ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। অথচ ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের জন্য প্রতি ডলারের নির্ধারিত দাম ১১৩ টাকার মধ্যে। এছাড়া ব্যাংক খাতের প্রায় সব সূচকেই নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোয় ঝুঁকির মাত্রাও বেড়েছে। বেড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণও, যা ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি থেকে বেড়ে এখন ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য খাতের সব ঝুঁকি মিলে বাস্তবে এর পরিমাণ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি।

অর্থনীতিবীদদের মতে, দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক দিকগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও নানমুখী পদক্ষেপে হয়তো তা থেকে উদ্ধার হওয়া সম্ভব। কিন্তু ব্যাংক-আর্থিকপ্রতিষ্ঠানে ধস নামলে কোনো দেশের পক্ষেই তা উত্তোরণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে দেশের আবাসন খাতের কারণে অর্থনীতি অনেকটা চাঙ্গা ছিল কিন্তু সরকারের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নের নামে সময়ক্ষেপনসহ নানাবিধ সমস্যায় এই খাতটিতেও সঙ্কট বিরাজ করছে।

এদিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, দেশে পন্য উৎপাদন করা দূরহ হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি করতে অধিকাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু গত বছর বৈশ্বিক দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে এক বছরে বিনিময় হার ২৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন, খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ডলার সঙ্কটের কারণে এলসি খোলার খরচ এবং পণ্য তৈরির খরচও বেড়ে গেছে। আর এলসিতে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা সঠিকভাবে না মেলায় উৎপাদনও ব্যহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সার্বিক অর্থনীতিতে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডলারের চাহিদা এবং যোগানের ভারসাম্য আনতে বিনিময় মূল্য বেধে না রেখে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। সেটা করা হলে খোলা বাজারের সাথে আনুষ্ঠানিক খাতের বিনিময় হারে খুব একটা পার্থক্য থাকবে না। তখন ডলার লেনদেন হুন্ডির প্রবণতা কমে যাবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এখনি সেই পথে হাঁটতে চায় না। কারণ তাতে টাকার মান আরও পড়ে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তাদের।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ, প্রবাসীরা ব্যাংকের বাইরে বেশি রেট পাচ্ছে, তারা হুন্ডি করে টাকা পাঠাচ্ছে। এটাও মুদ্রা পাচারের মধ্যে পড়েছে। এটা সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে সঙ্কট আরও বাড়বে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাঝে কয়েক বছর বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার অনেক কমেছিল। ওই সময়ে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ অনেক বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে প্রতিবছরই রফতানি ও রেমিট্যান্সেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ায়। রিজার্ভ বাড়তে থাকায় তখন এতটাই আত্মতুষ্টি দেখা দেয়, রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হয়। মালদ্বীপকে ২০০ মিলিয়ন ঋণের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এমনকি রিজার্ভ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঋণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। ২০২১ সালের শেষ দিকে অর্থনীতিতে করোনা-পরবর্তী বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তখন আমদানির চাহিদা বাড়ে। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স কমে যায়। এর প্রভাবে কমতে থাকে রিজার্ভ। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থনীতিতে নতুন সঙ্কট তৈরি করে। সঙ্কট কাটাতে এখন কঠিন শর্তে আইএমএফ’র ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে।
ডলারের দর কৃত্রিমভাবে অনেক দিন ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ধরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে দুই বছর আগে সঙ্কট শুরুর পর দর বেড়ে যাওয়ার চাপ তৈরি হয়। এর পরও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে পুলিশি অভিযানসহ নানাবিধ হস্তক্ষেপ করে দর কমিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। কারণ পুলিশি অভিযান চালিয়ে মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। আবার বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত দুই বছরে ২ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পরও সঙ্কট থামানো যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর কাছে ১১০ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে। গত বছরের এ সময়ে বিক্রি করছিল ৯৫ টাকা দরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডলার সঙ্কটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। এতে করে শিল্প-বাণিজ্যে সমস্যা হচ্ছে এবং কর্মসংস্থান কমছে। ডলার বাজারে অস্থিরতার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার খরচ বেড়েছে। এখান থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। আর এজন্য বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। ডলারের সঙ্কট থাকা এবং একই সময়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) আমদানি ব্যয় ৬ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারে নেমেছে। আমদানি কম হয় ১৩শ’ কোটি ডলার। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয় হয় ৪ হাজার ৯২৫ কোটি ডলার। পরের অর্থবছর অর্থাৎ গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৩০৯ কোটি ডলার বেড়ে ৫ হাজার ২৩৪ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে অল্প প্রবৃদ্ধি হয় এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে বাড়ে প্রায় ৬০ কোটি ডলার। ফলে আমদানির জন্য ১৩ বিলিয়ন ডলার কম খরচ হয়েছে। অপরদিকে রফতানি ও রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এতে চলতি হিসাবে ঘাটতি ১৮ বিলিয়ন থেকে কমে ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
আমদানি ব্যয়ে বড় সাশ্রয় এবং রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়ার পরও ডলার সঙ্কট থেকে বের হওয়া যায়নি। নতুন বিষফোঁড়া হিসেবে হাজির হয়েছে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি, যেখানে বড় অঙ্কের উদ্বৃত্ত ছিল। সঙ্কটের কারণে ক্রমাগত মূল্য হারিয়েছে টাকা, শক্তিশালী হয়েছে ডলার। গত এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ১০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত বছরের এই সময়ে রিজার্ভ ছিল ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা এখন ২৯ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে আইএমএফ’র হিসাব অনুযায়ী, ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে ১১০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। এতে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামতে পারে।

এছাড়া দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। আবার রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা, ডলার সঙ্কট এবং একেক সময় একেক নীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ আসছে কম। একই সময়ে পরিশোধ অনেক বেড়েছে। আবার বছর দুয়েক আগে ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদে বিদেশি ঋণ পাওয়া যেত। এখন সুদ ৯ শতাংশের বেশি। গত দুই বছরে ডলারের দর ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ দ্রুত কমছে। গত এক বছরে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ প্রায় ৪১০ কোটি ডলার বা ৩০ শতাংশ কমে জুন শেষে ১ হাজার ৩৬৬ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছরের জুনে যা ১ হাজার ৭৭৬ কোটি ডলার ছিল। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে ৮৬৯ কোটি ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১২ শতাংশ কমেছে। এসেছে মাত্র ১৬১ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে গত জুন শেষে আর্থিক হিসাবে ২১৪ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত বছরের জুন শেষে এই হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ডলার। মূলত আর্থিক হিসাবের ঘাটতিই দেশের ডলার বাজারে চাপ তৈরি করেছে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেছেন, ডলার সঙ্কট এবং এর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব তাদের ব্যবসার ওপর পড়েছে। ব্যবসার সম্প্রসারণ এবং নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি সংকুচিত হয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল কিছু কিছু আসছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে পণ্যের দামও বাড়াতে হচ্ছে এবং ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে।

https://dailyinqilab.com/national/article/600154#google_vignette