৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:৩৬

বিরোধী নেতাদের পুরানো মামলার বিচার দ্রুত শেষ হচ্ছে

রাজনৈতিকভাবে দায়ের করা অনেকগুলো পুরানো মামলা হঠাৎ সচল হয়ে ওঠছে। মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুতই শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হচ্ছে। আদালত এসব মামলার তদন্ত শেষ করে দ্রুত রায় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ইতিমধ্যে কারাবন্দী শীর্ষ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে আদালতে ঘন ঘন হাজির করা হচ্ছে। এছাড়াও জামিনে থাকা নেতারাও শুনানীর জন্য আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।

একই সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশকে ঘিরে বাড়ছে নতুন মামলা। সম্প্রতি বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধী পক্ষের কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জেলে দেয়া হয়েছে। এদিকে ১১ বছর আগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করা নাশকতার মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ৯৬ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এসব ঘটনায় বিরোধী জোটে নতুন করে উদ্বেগ শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। একই দিন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এরআগে শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। জানা গেছে, নতুন করে মামলা হওয়ার পর দেশের জেলা, থানা ও ইউনিয়নে তালিকা নিয়ে নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে গ্রামের বাড়ি থেকে অন্য এলাকায় অবস্থান করছেন। এমন অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গত ২৮ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৩৩১টি মামলা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অবজারভেশন রিপোর্ট অব বাংলাদেশ (এইচআরএসএস) জানিয়েছে, গত আগস্ট মাসে সারা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৭টি রাজনৈতিক মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামী করা হয়েছে ১২ হাজার ১২৮ জনকে। আসামীদের মধ্যে নাম উল্লেখ রয়েছে ১ হাজার ৩৩ জনের।

সংস্থাটি বলেছে, আগস্টের মামলায় অজ্ঞাত আসামীর সংখ্যা ১১ হাজার ৯৫। তাদের জরিপে বলা হয়েছে, তুলনামূলক বিশ্লেষণে আগস্ট মাসে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি তার আগের মাসের তুলনায় অবনতি হয়েছে। রাজনৈতিক সংঘাত পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, এক মাসে এ ধরনের সহিংসতার ৭৪টি ঘটনায় কমপক্ষে ৬ জন নিহত এবং ৮৭৮ জন আহত হয়েছেন। হতাহতের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে হওয়া সংঘর্ষে। এক মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিএনপি-জামায়াতের ৪৯৪ জনসহ মোট ৫০১ জন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। বিরোধী দলের ১৪টি সভা আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক সংঘর্ষে ৪৩৫ জন আহত ও সমাবেশ থেকে ৪৮ জনকে আটক করা হয়েছে। আর নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছেন ৬ জন।

বিচার শুরু: ১১ বছর আগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ৯৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। গত ২৩ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এই আদেশ দেন।

বিচারক সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ২০১২ সালের ৫ নবেম্বর জামায়াত-শিবিরের ২০০-৩০০ নেতাকর্মী শীর্ষ নেতাদের কারামুক্তির দাবিতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করার অভিযোগ এনে মিজানুর রহমান সুমন বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করেন।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। অভিযোগ গঠনের ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। মামলার অন্য আসামীরা হলেন- বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাইফুল আলম নিরব, মোয়াজ্জেম হোসেন বাবু, আজিজুল বারী হেলাল, কাজী রেজাউল হক বাবু ও খন্দকার এনামুল হক এনাম। রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ অভিযোগ গঠন করেন। এর আগে মির্জা ফখরুলসহ অন্যরা আদালতে উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আসামীপক্ষ তাদের নির্দোষ দাবি করে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে এ অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। অন্যদিকে দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ৩১ আগস্ট পুলিশ কনস্টেবল শামীম হত্যা মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক বিলকিস আক্তার আসামীদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের ফলে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। মামলার অপর আসামীরা হলেন-বিএনপি কর্মী আব্দুস সাত্তার, শাহ আলম, আনোয়ার হোসেন টিপু ও আলফাস ওরফে আব্বাস।
মামলা-গ্রেপ্তার: রাজবাড়ীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র‌্যালি ঘিরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় গত শনিবার পৃথক দুইটি মামলা করে পুলিশ। মামলায় ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করে বিএনপির ২ হাজার ৭শ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। রাজবাড়ী সদর ও রেলওয়ে (জিআরপি) থানা সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় এরইমধ্যে বিএনপির ২৮ নেতাকর্মীকে আটকের পর আদালতে পাঠানো হয়েছে। রাজবাড়ীতে বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালি থেকে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতাকর্মীরা। পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে রাজবাড়ী সদর থানার এসআই সোহেল রানা বাদী হয়ে ১১১ জনের নাম উল্লেখ করে ২ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। ময়মনসিংহের ভালুকায় পুলিশের কাজে বাধা, নাশকতার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ ২৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে ভালুকা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল হোসেন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা করেন। গাইবান্ধায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালি থেকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৩৬ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন জনকে। অপরদিকে এদিকে ২৯ আগস্ট রাতে রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন সেলিম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদ, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল আহমেদ চৌধুরী, জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টিপু আহমেদ এবং ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিল্লাদ হোসেনকে সাদা পোশাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়াও ওইদিন ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মামুন হোসাইনকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২৫ আগস্ট নাইটেঙ্গেল মোড় থেকে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদল নেতা মো. নাছির উদ্দিন সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৪২ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শিশির আহমেদ, ২৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. ময়নাল, চুনারুঘাট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সারোয়ার হোসেন সুমন ও শান্তিনগর বাজার ইউনিট বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম স্বপন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ২৫ আগস্ট রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান, সোনারগাঁ থানার জামপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি লতিফ মেম্বারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

https://www.dailysangram.info/post/534621