৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১২:৪১

৫ ঘণ্টা বন্ধ রেল চলাচল তীব্র দুর্ভোগ

চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট এলাকায় অবরোধ করায় ঢাকার সঙ্গে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল সারা দেশের। এতে দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। গতকাল সকাল ১০টার দিকে রেল কর্মীরা লাইন অবরোধ করে তাদের দাবি জানাতে থাকেন। পুলিশ অবরোধকারীদের বার বার বুঝিয়ে রেললাইন থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও তারা সেখান থেকে সরেননি। দুপুর ৩টার দিকে ধাওয়া দিয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা তাদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। এতে আন্দোলনরত প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনকে আটক করেছে। অবরোধের কারণে প্রায় ১৮টি স্থানের ট্রেন সুনির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। অবরোধ উঠে গেলে ট্রেনগুলো ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায় এবং রাজধানীর বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও জয়দেবপুরে আটকে পড়া ট্রেনগুলো কমলাপুরে প্রবেশ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট এলাকায় রেললাইন অবরোধ করে বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

এতে কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা রংপুর এক্সপ্রেস আটকে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী, রেল পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের রেললাইন থেকে তাদের সরতে বললে তারা অবস্থানে অনড় থাকেন।

দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে তাদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা চলে। পুলিশ তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিলেও তারা শুনেননি। দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দেলোয়ার হোসেন জানান, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য গত আগস্ট মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু, গত মাসে রেলওয়ের মহাপরিচালক আমাদের বলে দিয়েছেন- চাকরি স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা তারা করতে পারবে না। সরকার যদি চায়, তাহলে সরকার নিতে পারবে।

চাকরি প্রার্থী আনোয়ার জানান, এর আগেও আমরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রেল পথ অবরোধ করেছি। তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের বিষয়টি মানবিক বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছিল। আমরাও চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু, আমাদের দাবি মানা হয়নি। সবুজ নামে আরেক আন্দোলনকারী জানান, দীর্ঘদিন আমরা রেলওয়েকে সেবা দিয়েছি এই আশায় যে, আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হবে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা শুনেনি। তিনি আরও জানান, হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় অনেকেই পরিবার নিয়ে অর্থে কষ্টে পড়েছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।

কমলাপুরে আটকে পড়া ট্রেনের যাত্রী আকবর হোসেন জানান, রংপুর যাওয়ার জন্য সকাল ৮টার দিকে স্টেশনে এসেছি। কিন্তু, দুপুর গড়িয়ে গেলেও ট্রেন ছাড়েনি। আমার সঙ্গে আসা দুইজন বাসে করে চলে গেছে।

এ বিষয়ে কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার সাংবাদিকদের জানান, প্রায় ৫ ঘণ্টা পর ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে গেছে। সকাল ৯টা ১০ মিনিটের রংপুর এক্সপ্রেস প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বের পর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্ল্যাটফরম ছেড়ে গেছে। পরে একে একে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, রাজশাহী কমিউটার, চট্টলা এক্সপ্রেস এবং মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস মানবজমিনকে জানান, আন্দোলনকারীরা অবরোধ করার পরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তাদের ধাওয়া দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

https://mzamin.com/news.php?news=72394