৩০ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, ১১:০১

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি

ভাঙন আতঙ্কে তিস্তা পাড়ের মানুষ

কুড়িগ্রামে বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার সহ সবকটি নদ-নদীর পানি। গতকাল বিকেলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে ধরলার পানি বিপদসীমার মাত্র ২ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি বিপদসীমান ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে ব্রহ্মপুত্রের পানিও।

এতে করে প্লাবিত হয়ে পড়ছে নদ-নদী অববাহিকার চরাঞ্চল সহ নিম্নাঞ্চল। এসব এলাকার ঘর-বাড়িতে পানি না উঠলেও কাঁচা সড়ক তলিয়ে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। আমন ক্ষেত তলিয়ে থাকায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মোখলেছুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সোমবার রাতে পানি বেড়ে রাস্তা তলিয়ে গেছে। আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।

অন্যদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন বেড়েছে তিস্তা পাড়ে। রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা বামতীরে ২০টি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। এরই মধ্যে অনেক পরিবার ঘর-বাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
রাজারহাটের খিতাবখা এলাকার ভাঙন কবলিত মানুষেরা জানান, বছরের পর বছর ধরে তিস্তার ভাঙন অব্যাহত থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন কাজ করছে না। চেয়ারম্যান, ইউএনও দেখে যায় কিন্তু কোন কাজ হয় না। শুধু বলে যায় কাজ হবে কাজ হবে। কিন্তু কিছুই হয় না। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তায় স্থায়ী ভাঙনরোধে সরকারের পরিকল্পণা থাকায় বড় কোন প্রকল্প চলমান নেই। এ কারণে ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে জরুরী ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিরপাঠ এলাকার আমিনুল জানান, বুড়িরহাটের স্পারের মাথা দেবে যাওয়ায় পাড়ের পাশ দিয়ে পানির স্রোত তীব্র হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। স্পারের বাকী অংশ ঠেকানো না গেলে ভাঙন তীব্র হয়ে গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীার ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে জরুরী ভিত্তিতে কাজ চলমান রয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বড় বন্যার পুর্বাভাস নেই।

পাহাড়ি ঢলে যমুনার পানি বৃদ্ধি
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনা পাড়ের মানুষ গুলোকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।

এদিকে শাহজাদপুর, চৌহালী ও কাজিপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। চরাঞ্চলসহ অনেক নিচু বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত এবং ডুবে গেছে বিভিন্ন ফসল। এতে বিশেষ করে চরাঞ্চল এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশা বাড়ছে। বন্যা কবলিত অনেক পরিবার এখন মানববেতর জীবন যাপন করছে। ইতোমধ্যেই ভাঙন রোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। জেলার শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন নিম্ন এলাকায় চারণ ভূমি প্লাবিত হওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে খামারিরা বিপাকে পরেছে। কাঁচা ঘাসের অভাবে দুদ্ধ উৎপাদন কমে গেছে বলে খামারিরা জানান।

শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি গ্রামের গো-খামারি আব্দুল হামিদ জানান, ঘাসের জাম গুলি পানিতে ডুবে যাওয়ায় তারা কোন মতে খড় খাওয়ায়ে পশুগুলি বাঁচিয়ে রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, বন্যার কারণে উপজেলার পশ্চিমে বয়ে যাওয়া গোহালা নদীর কোল ঘেষে পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতবাড়ি, বড়ভিটা, ছোট ভিটা, বুড়ির ভিটা, কুটির ভিটাতে এবং কাউয়ার্ক এবং হান্ড্রী এলাকায় অধিকাংশ গোচারণ ভূমিতে এখন বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। চাহিদা অনুযায়ী গাভীগুলিকে খাবার দিতে না পারায় দিন দিন দুধের পরিমাণ কমে যাচ্ছে ফলে তারা লোকসানে মুখে পড়ছেন। বর্তমানে দুধের উৎপাদনও অনেক কমেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে কাজিপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নদী ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে পাহাড়ি ঢল ও দফায় দফায় ভারি বর্ষণে যমুনা নদীর পানি ফের বাড়ছে। এতে যমুনা নদীর তীরবর্তী কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিন্মাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম এখন পানিতে ভাসছে। জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান বলেন, বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা পাওয়া গেলে ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে।

https://dailyinqilab.com/national/article/598575