৩০ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, ১০:৫৯

গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষে শঙ্কা

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পোশাক কারখানায় বকেয়া বেতন-ভাতার কারণে ব্যাপক আকারে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা করছে সরকার। এ অবস্থা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে কার্যকর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য সকল বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গত ২২ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, জুলাই ২০২৩-এর দ্বিতীয় পক্ষের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়ন। বিভাগীয় কমিশনারগণের নিকট থেকে প্রাপ্ত জুলাই ২০২৩-এর দ্বিতীয় পক্ষের পাক্ষিক গোপনীয় দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নি¤েœাক্ত প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপন করা হয়। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় বিপুল সংখ্যক গার্মেন্টস কারখানায় অসংখ্য শ্রমিক কাজ করেন। এ সব কারখানার অনেক মালিক প্রায়শই শ্রমিকদের বেতন সময়মত পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয় এবং কখনও কখনও সড়ক অবরোধ করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। আর সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বকেয়া বেতনের কারণে ব্যাপক আকারে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃক আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে সদয় নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী সদয় অনুমোদন করেছেন। চিঠিতে আরো উল্লেখ করে প্রস্তাবের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বাস্তবায়ন অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

সূত্র মতে, এর আগেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এক প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ওই সময়ে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন ও সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধে ৭টি সুপারিশ করেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবশ্য বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোন ধরনের অসন্তোষের আশঙ্কার কারণ নেই। কিছু লোক আছে, যারা সামান্য অর্থ কামানোর জন্য বাইর থেকে উস্কানি দেয়। বিষয়গুলো নিয়মিত তদারকি করছে বিজিএমইএ, যাতে কোন ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। তবে কিছু কিছু গার্মেন্টস মালিক রফতানি হ্রাস, ক্রয়াদেশ বাতিল, কাজের অর্ডার কম বা না পাওয়া, মূলধনের অভাব, ঋণ ও প্রণোদনা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিমাসে সময়মতো শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করে না। অনেক ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ পূর্ব নোটিস ছাড়াই আকস্মিকভাবে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়াও সুনির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে বিভিন্ন সময়ে কারণে অকারণে শ্রমিক ছাঁটাই করা, ওভারটাইম ভাতা ও বার্ষিক ছুটির টাকা না দেয়া, কোন কোন ফ্যাক্টরিতে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী না থাকা, হঠাৎ করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি অন্যত্র সরিয়ে ফেলা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মাঝে মধ্যে গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়।

শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন ও সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধে পুলিশ যে ৭টি সুপারিশ করেছে এগুলো হচ্ছে- গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি যাতে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে নিয়মিত পরিশোধ করা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। বিদেশী অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতা পরিহারে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক নীতিমালা প্রণয়ণ করা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউরোপে গার্মেন্টস পণ্য রফতানি স্বাভাবিক রাখতে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধরোধে রুগ্ন, মাঝারি ও ক্ষুদ্র কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের আর্থিক ও কারিগরি প্রণোদনাসহ সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাজার গবেষণা ও স্টাডির মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ ও পণ্যের বহুমুখীকরণসহ নতুন বাজার সৃষ্টিতে উদ্যোগী হওয়া জরুরী। শ্রমিক বিক্ষোভ ও অসন্তোষ বন্ধে হঠাৎ করে শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধ না করে শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা লে-অফ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ব্যবস্থা করা। শ্রমিক অসন্তোষসহ কোনরূপ অপ্রীতিকর ঘটনার আগাম তথ্য পাওয়া গেলে তা পূর্বেই প্রশাসন, মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, এই মুহূর্তে যে কোন সময়ের চেয়ে দেশের পোশাক কারখানা ভাল চলছে। কোন ধরনের অসন্তোষের আশঙ্কার কারণ নেই। কিছু লোক আছে, যারা সামান্য অর্থ কামানোর জন্য বাইরে থেকে উস্কানি দেয়। তবে আমরা এ বিষয়গুলো নিয়মিত তদারকি করছি, যাতে কোন ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা ২-এর উপসচিব শামীম হাসান স্বাক্ষরিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লেখা পুলিশ অধিদফতরের চিঠিতে জানানো হয়েছিল, যে সকল গার্মেন্টসে ক্রয়াদেশ না আসায় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, সেদিকে নজরদারি বাড়িয়ে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে বাজার গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ ও পণ্যের বহুমুখীকরণসহ নতুন বাজার সৃষ্টিতে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ইনকিলাবকে বলেন, গার্মেন্টস কারখানায় কোনও ধরনের অসন্তোষ নাই। যে কোন ধরনের অসন্তোষ এড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তৎপর আছে বলে উল্লেখ করেন।

https://dailyinqilab.com/national/article/598582