৪ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার, ১২:৫৮

পরামর্শকের পকেটেই যাবে ১৭০০ কোটি টাকা

বৈদেশিক প্রশিক্ষণে ধরা হয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা

বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে বাধ্যতামূলক পরামর্শক নেওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার একটি মহাসড়ক উন্নয়নে পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭০৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪৬৬ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং বিদেশি ঋণের টাকা থেকে ১ হাজার ২৪০ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ‘হাটিকুমরুল-বনপাড়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প : বনপাড়া-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ অংশ (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)।

এদিকে প্রকল্পটিতে রয়েছে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাবও। এখানে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ অর্থই ব্যয় হবে শুধু পরামর্শকের পেছনে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিদেশি পরামর্শক কি কি কাজ করবেন। আদৌ সেসব কাজের প্রয়োজন আছে কিনা? আর যদি প্রয়োজন থেকেই থাকে তাহলে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিশেষজ্ঞ দিয়ে সেগুলো করা সম্ভব কিনা? কেননা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর দীর্ঘদিন ধরে এরকম অনেক কাজই করেছে। সব ক্যাটাগরির সড়কই প্রচুর নির্মাণ করেছে তারা। সেই অভিজ্ঞতা কেন এখানে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এছাড়া বিদেশি পরামর্শকদের এত টাকা দিলে এগুলোতো ডলারে পরিশোধ করতে হবে। সেটিও তো চিন্তার বিষয়। বিষয়টির বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিষয়টির বিস্তারিত কিছু আমি দেখিনি। পিইসি সভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে। কেন এত বেশি টাকার পরামর্শক লাগছে সেটি পিইসি সভার পরই বলা যাবে। বিস্তারিত না দেখে মন্তব্য করা যাবে না।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারেরর নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৭৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং এআইআইবি’র ঋণ থেকে ৬ হাজার ৯৮০ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হবে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলা, পাবনার ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, মিরপুর, কুষ্টিয়া সদর এবং ঝিনাইদহ উপজেলার শৈলকুপা, হরিনাকুন্ড ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলায়। প্রকল্পের আওতায় বনপাড়া-কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ অংশের ৯৯ দশমিক ৪২ কিলোমিটার উভয় পাশ্বে সার্ভিস লেনসহ ৬ লেনে উন্নীতকরণ করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নসহ এশিয়ান হাইওয়ে, সার্ক হাইওয়ে করিডোর, বিমসটেক রোড করিডোর এবং সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) রোড করিডোরের সঙ্গে উন্নত সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।

পিইসি সভায় বিভিন্ন বিষয় ব্যাখা চাইবে পরিকল্পনা কমিশন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এর আগে অনুষ্ঠিত পিইসি সভার পর সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে ১ বছর ৪ মাস সময় লেগেছে। কেন এমন হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। কেননা নিয়ম অনুযায়ী পিইসি’র পর সর্বোচ্চ ৩৫ কার্য দিবসের মধ্যে সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হয়। এছাড়া পরামর্শক সেবার জন্য ১ হাজার ৭০৬ কোটি ১১ লাখ টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এক্ষত্রে পরামর্শকের কর্মপরিধি কি হবে তা সভায় জানতে চাওয়া হবে। পরামর্শক সেবার মধ্যে ভ্যাট বা আইটি অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা কিংবা থাকলে কি পরিমাণে আছে সেটিও জানতে চাওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে দুই কোটি ৬১ লাখ টাকার প্রস্তাব আছে। সেইসঙ্গে স্থানীয় প্রশিক্ষণের জন্য চাওয়া হয়েছে ২০ লাখ টাকা। এই দুই খাতের ব্যয় বিষয়েও জানতে চাইবে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ছয়টি জিপ, চারটি ডাবল কেবিন পিকআপ, নয়টি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাব আছে। এগুলোর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে পিইসি সভায়। এছাড়া প্রকল্পে বর্তমানে সাতটি ব্রিজ ও চারটি রেল ওভারপাশ নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর আগে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় ছয়টি ব্রিজ এবং দুটি রেল ওভারপাস নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ক্লিয়ারেন্স ডিপিপিতে দিতে বলা হয়। কিন্তু পুনর্গঠিত ডিডিপিতে সেটি করা হয়নি। বরং নতুনভাবে আরও একটি ব্রিজ ও দুটি রেল ওভারপাস নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলোর ক্লিয়ারেন্স গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সে বিষয়ে ব্যাখা চাওয়া হবে। এর আগের পিইসি সভায় ২৭২ দশমিক ৬৯ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ এক হাজার ১৩০ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু পুর্নগঠিত ডিপিপিতে ২৬৭ দশমিক ০৬ হেক্টর ভূমির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ কিছুটা কমলেও বেড়েছে ব্যয়। এরকম নানা বিষয় পিইসি সভায় উঠে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/703124