২ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, ৫:২২

বিমানযাত্রীরা টিকিট সিন্ডিকেটের নিকট জিম্মি

একটা সময় আকাশ পথে যাত্রা দূর্লভ হলেও বর্তমানে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটির দিনের আয়েশ খুঁজতে পাড়ি জমাচ্ছে দেশের বাইরে। প্রবাসীরা বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে বিমানযোগে সহজেই দেশে ফিরছে প্রতিনিয়ত। প্রযুক্তির সহযোগিতায় বিমানের টিকিট যেন এখন হাতের মুঠোয় । তবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি দেশের টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় দূর্ভোগে পড়ছেন বিদেশগামী যাত্রীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টিকিটের এই মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে একটি সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী অধিকাংশ যাত্রীরাই ছুটছেন কোলকাতা। ফলে, হুমকির মুখে পড়ছে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ট্রাভেল এজেন্সিগুলো এবং রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টরেন্টো, দোহা, মিলান, টোকিও, কুয়ালালামপুর, সিডনি, সাংহাই, ফ্রাঙ্ক-ফুর্ট, দুবাই, জেদ্দা, মদিনা, কুয়েত, মাস্কাট, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি শহরের যাত্রীরা বাংলাদেশে ফেরার সময় যে দামে টিকিট ক্রয় করছেন, ফেরার সময় সে টিকিট বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে । ভ্রমনের উদ্দেশ্যে কিংবা বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকগণ দেশে ফেরার সময় স্বাভাবিক মূল্যে টিকিট ক্রয় করতে পারলেও, ফেরার সময় টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ফলে বাধ্য হয়ে খুলনা হয়ে কোলকাতা গিয়ে টিকিট কাটছেন তারা।

শিবেন্দু মন্ডল নামক এক আমেরিকান (বাংলাদেশী) নাগরিক বলেন, “ছুটিতে মা বাবার সাথে সময় কাটাতে বাংলাদেশে এসেছি। আসার সময় টিকিটের মূল্য স্বাভাবিক থাকলেও, ফেরার সময় অনেক দাম ধরা হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ইন্ডিয়া হয়ে যাচ্ছি।” আরিফ হোসেন নামক আরেক প্রবাসী বলেন, বাংলাদেশ থেকে টিকিট না কেটে দেড় হাজার টাকা খরচ করে বেনাপোল হয়ে কোলকাতায় গিয়ে টিকিট কাটলে এক তৃতীয়াংশ কম ভাড়ায় যেতে পারবো। শুধু বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিক নয়। টিকিটের এই অসামঞ্জস্য মূল্য নিয়ে বিপাকে পড়ছেন ওয়ার্ক পারমিটে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীগণ। তাদের টিকিটে আসা যাওয়ার সকল রুট উল্লেখ থাকায়, কোলকাতা কিংবা অন্য রুটে টিকিট কাটতে পারছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে নির্ধারিত মূল্যেই টিকিট কাটছেন তারা।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে একটি কোম্পানীতে কর্মরত শরিফ হাসান বলেন, “বাংলাদেশে যাওয়া ও আসার রুট প্রতিষ্ঠান মালিক নির্ধারিত করে দেয়ায়, বাধ্য হয়ে ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট কাটতে হয়।”

এদিকে কোলকাতার এজেন্সীগুলোতে ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টিকিট ৪০ শতাংশ কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এক প্রবাসী। ফ্রান্সের প্যারিসে বসবাসরত মুসাদ্দেক বিল্লাহ নামক এই প্রবাসী বলেন, আমি বাংলাদেশ টু প্যারিস’র ৪টি টিকিট কেটেছি ৪ লক্ষ ১২ হাজার ৭৫৬ টাকায়। কোলকাতা থেকে ক্রয় করলে শতকরা ৪০ শতাংশ কম মূল্যে কাটতে পারতাম।” এছাড়া সম্প্রতি টিকিটের মূল্যের সাথে “ট্রাভেল ট্যাক্স” বাড়ানোয় যাত্রীদের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন দেশের ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীরা।

তানভীর আলম নামক একজন ট্রাভেল এজেন্ট বলেন , হটাৎ করে ট্রাভেল ট্যাক্স বাড়ানোয় যাত্রীদের নিকট প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। শুধু ট্রাভেল ট্যাক্স নয়। ডলার সংকটের কারনেও এ এজেন্সীগুলোর ব্যবসায়ে ভাটা পড়ার অন্যতম কারন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বিমান ব্যতিত অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, ইতিহাদ, সিন-আই, থাই এয়ারওয়েজ, মালয়েশিয়ান এয়ারওয়েজ, তুর্কিস এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, এয়ার কানাডাসহ বেশকিছু বিদেশী বিমান যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশে ফেরার পর টাকা পরিশোধ করতে ব্যার্থ হচ্ছে। যার অন্যতম কারণ ডলার সংকট।

ডলারের দাম হটাৎ বেড়ে যাওয়ার কারনে দেশের অধিকাংশ যাত্রী কোলকাতামুখী হয়েছে বলে জানান ফার্স্ট এয়ার প্লান ট্যুর এজেন্সি’র স্বত্ত্বাধীকারি উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি বলেন, “ ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের অধিকাংশ যাত্রী কোলকাতা যেতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অধিকাংশ ট্রাভেল ব্যবসায়ীর।”

উল্লেখ্য যে, খুলনায় এক সময় ট্রাভেল এজেন্সির সংখ্যা ছিল ১৩৪টি। এ সকল জটিলতার কারণে এর সংখ্যা হ্রাস পেয়ে এখন ১০টি। যার মধ্যে ৫ থেকে ৬ টি পুরাতন ও ৪ থেকে ৫ টি নতুন। তবে, উন্নয়নমুখী বাংলাদেশের এই শাখার উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে সরকার। টিকিটের এই কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি অচিরেই সমাধান হবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।

https://dailysangram.info/post/531526