২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১১:২৯

চট্টগ্রামে অস্থির চালের বাজার সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

চট্টগ্রামে চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নগরীর পাইকারি বাজার চাক্তাই, পাহাড়তলী ঘুরে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা। চালের বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে এক টাকা থেকে দুই টাকা। তবে পাইকারি বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা থাকলেও খুচরা বাজারে দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউড়ি বাজার, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা সিদ্ধ চাল ৪২ টাকা, ভারতীয় বেতি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট (আতপ) এক নম্বর ৪৮ টাকা, জিরাশাইল (নবান্ন) ৫২ টাকা, আতপ বেতি এক নম্বর ৪৮ টাকা, দেশি পাইজার ৪৭ টাকা, দিনাজপুরী পাইজার ৫০ টাকা, কাটারিভোগ ৬০ টাকা, চিনিগুঁড়া ৯৫ টাকা, ২৯ বেতি ৪২ টাকা, পাইজাম চিকন ৪৬ টাকা, বেতি আতপ চিকন ৪৪ টাকা, সিদ্ধ জিরাশাইল চিকন ৪৮ টাকা, সিদ্ধ মিনিকেট চিকন ৪৫ টাকা ও সিদ্ধ মোটা ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চকবাজারের চাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চালের বর্তমান যে দাম সেটা সরকার চাইলে কমাতে পারে। সিন্ডিকেট চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জানা গেছে, সরকার ধান চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরুর পরই চালের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। গত জানুয়ারি মাসে আমন ধান গোলায় উঠার পরও চালের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে আরেক ধাপ বেড়েছে। আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, উত্তরবঙ্গের মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম দফায় দফায় বেড়ে চলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে উত্তরবঙ্গের মিল ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বোরো ও আমন মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে চাল কিনে গুদামজাত করেন তারা। বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করে বাজার অস্থির করে তোলেন তারা। নওগাঁ, দিনাজপুর, আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সান্তাহার (বগুড়া), রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় তিন শতাধিক চাল মিল ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন বড় মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ধান চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।
চট্টগ্রামের বড় পাইকারি বাজার পাহাড়তলী ও চাক্তাই ব্যবসায়ীরা জানান, নওগাঁ, মহাদেবপুর, আশুগঞ্জ, দিনাজপুর, পাবনা, ঈশ্বরদীর মোকামগুলো থেকে বেশির ভাগ চাল আসে চট্টগ্রামে। আশুগঞ্জ থেকে বেতি, ইরি জাতের, দিনাজপুর থেকে মিনিকেট, পাইজাম, চিনিগুঁড়া, কাটারিভোগ জাতের আতপ এবং নওগাঁ, পাবনা, ঈশ্বরদি থেকে সিদ্ধ জাতের চাল আসে এখানে। প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন চাল চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে আসে। ৫০ কেজি বস্তায় ১৬-২১ টাকা কমিশন পান আড়তদাররা। আর পাহাড়তলী পাইকারি বাজারে আসে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ মেট্রিক টন চাল।
এদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চালের বাজার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেতি বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) এক হাজার ৮৫০ টাকা; যা এক সপ্তাহ আগে ছিল এক হাজার ৭৫০ টাকা। একমাস আগে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল ভারতীয় বেতি। মিনিকেট ২৮ এক সপ্তাহ আগে ১২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ২২শ’ থেকে ২২শ’ ৩০ টাকায়। এক মাস আগে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হওয়া বেতি-২৯ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়।

পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর জানান, গত দুই মাসে প্রতি বস্তায় দুই শ’ থেকে তিন শ’ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এ সপ্তাহে নতুন চাল বাজারে আসায় কিছুটা কমছে। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমার প্রভাব খুচরা বাজারে এখনো পড়েনি। চলতি মৌসুমে সরকার মোটা সিদ্ধ চাল ৩৪ টাকা করে কেনার যে ঘোষণা দিয়েছে, এতে করে আগামীতে খুচরা বাজারে চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ এখন মোটা সিদ্ধ চালের বাজার প্রতি ৫০ কেজি বস্তা ১৮ শ’ থেকে ১৮ শ’ ৫০ টাকা। আর সরকার কিনতে ৫০ কেজি বস্তা ১৭ শ’ টাকা হিসাবে। এসব চাল খুচরা বাজারে গেলেও দাম কমার সম্ভাবনা থাকবে না।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্ত দাশগুপ্ত বলেন, গত ১০ দিনের ব্যবধানের সব ধরনের চাল বস্তাপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। সরকার যদি চালের উপর অর্ধেক শুল্ক কমিয়ে দেয়, তাহলে চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা কমে যাবে।
উল্লেখ্য, চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি (শুল্ক) এবং ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) নির্ধারিত রয়েছে। ২৮ শতাংশ শুল্ক গুণতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ অজুহাতে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চাল আমদানিকারকরা শুল্ক কমানোর দাবি করে আসছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) বেসরকারিভাবে ২৫৭ দশমিক ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়। অথচ চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) সাড়ে সাত মাস শেষে গত ১৪ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে মাত্র ৪১ দশমিক ১৩ হাজার মেট্রিক টন চাল।

https://www.dailyinqilab.com/article/76098