৯ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১:৫২

চার প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকে যা আছে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তার মধ্যে বেশির ভাগই প্রতিরক্ষা ও শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তির ব্যবহার নিয়ে। এর মধ্যে চারটিই প্রতিরক্ষাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক। শনিবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। শনিবারই এসব চুক্তি ও এমওইউ তাদের সাইটে প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চুক্তিগুলো প্রকাশ করার জোর দাবি জানিয়ে আসছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র দফতর থেকে চুক্তি এবং এমওইউ’ও যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে প্রথম তিনটি সমঝোতা স্মারক হচ্ছে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত। প্রথমটি হচ্ছে- বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখা সংক্রান্ত স্মারক। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- ‘কৌশলগত ও ব্যবহারিক শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে’ ঢাকার মিরপুরে ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও ভারতের তামিলনাড়– রাজ্যের ওয়েলিংটন (নিলগিরি) ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। তৃতীয়টি হচ্ছে- ‘জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশলগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে’ ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ও নয়াদিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। এর বাইরে ১৯ নম্বর চুক্তিটিও প্রতিরক্ষাবিষয়ক সমঝোতা। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫০ কোটি ডলারের (চার হাজার কোটি টাকা) ঋণ সহায়তা সমঝোতা স্মারক। এতে সই করেন সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
তবে এসব সমঝোতা স্মারকের ভেতরে ঠিক কি আছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আগে এসব নিয়ে ধারণা করা হয়েছিল।
বিবিসি বাংলার রিপোর্টে বলা হয়েছিল, যেসব এমওইউ বা সমঝোতা-স্মারক সই হচ্ছে তার মেয়াদ পাঁচ বছর করে, ২৫ বছর নয়।
সমঝোতা স্মারকের লক্ষ্য নিয়ে বলা হয়েছিল- দু’দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে নির্দিষ্ট একটা কাঠামোর ভেতর নিয়ে আসা এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটা।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা হবে কিনা বা হলেও কী আকারে হবে।
শেখ হাসিনার ভারতে পা-রাখার আগের দিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে প্রতিরক্ষা সমঝোতা হবে একাধিক। ভারতের বাংলাদেশ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথনও প্রতিরক্ষা বিষয়ক একাধিক এমওইউ সইয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, এর একটা হবে ফ্রেমওয়ার্ক এমওইউ, অর্থাৎ যা দু’দেশের ভেতরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে পরবর্তী কয়েক বছরের জন্য একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর ভেতর নিয়ে আসবে। পাঁচ বছর পরপর সাধারণত এই সমঝোতা-স্মারকগুলো আপনা-আপনি নবায়ন হয়ে যাবে।
প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত এমওইউগুলোতে ঠিক কী থাকবে, তারও একটা ধারণাও দিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
রঙ্গনাথন সমঝোতার বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদেও যে ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আছে এবং আগামী দিনেও যেটাকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তার একটা ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো থাকবে সমঝোতায়। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গবেষণা বা রিসার্চ-ডেভেলপমেন্ট, প্রতিরক্ষা রসদ সরবরাহেরও অবকাশ থাকবে সেখানে।”
বাকি সমঝোতার লক্ষ্য হল, বাংলাদেশ যাতে তাদের প্রতিরক্ষার প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু কিছু সরঞ্জাম ভারত থেকে কিনতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা।”
প্রতিরক্ষা খাতে এসব দু’দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/04/09/116161/