৫ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ১:০৬

পণ্য আমদানির বিপরীতে বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার

পণ্য আমদানির বিপরীতে বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। টাকার অংকে এর পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশ থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের পণ্য আমদানির কথা থাকলেও পণ্য আমদানি না করেই ডলারের মাধ্যমে অর্থ বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার কড়া নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পণ্য আমদানির বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা (২ হাজার ৩৭১ কোটি ডলার) পরিশোধ করা হলেও এর বিপরীতে কোনো পণ্য দেশে আসেনি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠিয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা (২ হাজার ১৮১ কোটি ডলার)। অর্থ পরিশোধের ৪ মাসের মধ্যে পণ্য আসার নিয়ম। মেয়াদ পার হওয়ার পর পণ্য না আসায় অর্থ পাচারের আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ অবস্থায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য অথবা অর্থ ফেরত আনতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সূত্র জানায়, পণ্য আমদানির দেনা শোধের পরও পণ্য না আসায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। প্রচলিত আইনকানুন মেনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম না করায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পণ্য আমদানিতে ১৬ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ মুদ্রা বিদেশে পাঠালেও এর বিপরীতে দেশে পণ্য আসার হদিস নেই। বিষয়টি দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।

পণ্য আমদানিতে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন গ্রাহকের পক্ষে ২ হাজার ৩৭১ কোটি ডলার পরিশোধ করলেও এর বিপরীতে কোনো পণ্য আসার তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বকেয়ার ৯২ ভাগই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য আমদানির বিপরীতে ২ হাজার ১৮১ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, নিয়ম মেনে আমদানি কার্যক্রম না হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও বৈদেশিক মুদ্রা কোথায় কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার হিসাব থাকা উচিত। অর্থ পাচার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষণ করছে। তাতে কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের সূত্র পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্তা নিতে সরকারকে বলতে হবে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতের মোট মেয়াদোত্তীর্ণ বিল এন্ট্রির বিপরীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশ মাত্র ৮ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ১৬৬ কোটি টাকা বকেয়া আছে, যা সহনশীল মাত্রায় রয়েছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিষ্পন্ন বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ বিল এন্ট্রির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। অভ্যন্তরীণ ও বাণিজ্যিক অডিটেও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আপত্তি উঠছে।

সূত্র জানায়, পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা, অর্থ পাঠানো ও পণ্য খালাসের তথ্য ড্যাশবোর্ডে পাঠায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। নিয়মানুযায়ী আমদানিমূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ চার মাসের মধ্যে পণ্য দেশে আসতে হবে। ওই পণ্য যে বন্দরে পৌঁছেছে তার প্রমাণপত্র (বিল অব এন্ট্রি) ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। এ চার মাসের মধ্যে কোনো কারণে পণ্য আনতে না পারলে সে ক্ষেত্রে ওই এলসির বিল অব এন্ট্রিকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিবেচনা করা হয়। এটি হলে নতুন করে আর এলসি খুলতে পারে না।

সূত্র আরো জানায়, মেয়াদোত্তীর্ণ বিলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। ১৫৫টি বিলের বিপরীতে ১ হাজার ৬৬১ কোটি ডলার বিদেশে পাঠিয়েছে, যা মোট বকেয়া বিলের ৭০ শতাংশের বেশি।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমেই এসব অর্থ বিদেশে পাঠানো হয়েছে। মোট বকেয়া বিলের ৯১ শতাংশ সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ বিলের পরিমাণ ৭১ শতাংশ।

http://www.dailysangram.com/post/274302