১০ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১১:৫৯

চালের পাইকারি দর কমলেও খুচরায় তেমন প্রভাব পড়েনি

আমদানি শুল্ক কমানোর প্রভাব সামান্যই ; লোকসান নিতে নারাজ খুচরা বিক্রেতারা

রাজধানীর খিলগাঁও সি ব্লকে অবস্থিত ইব্রাহিম জেনারেল স্টোর। অপরাপর পণ্যের পাশাপাশি সবরকমের চাল বিক্রি হয় এ দোকানে। চালের দাম প্রসঙ্গে দোকানটির মালিক আবুল হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, শুনেছি পাইকারিতে দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমার দোকানে এখন যে চাল আছে এগুলো আগের কেনা। বেশি দামে কিনতে হয়েছে বলে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তবে নতুন দামে কেনার পর দাম কমাবেন বলে জানান আবুল হোসেন।

গতকাল ঢাকার বেশ কয়েকটি চালের আড়ত ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের পর বেচাকেনা এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম রোজার শেষদিকের তুলনায় কেজিতে তিন থেকে চার টাকা কমেছে। অন্য দিকে খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম দুই থেকে তিন টাকা কমলেও সরু চালের দাম এখনো কমেনি। খুচরা বিক্রেতারা এখনো মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৬ এবং সরু চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

বিভিন্নপর্যায়ের চাল ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, চাল আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা এবং বিনা পুঁজিতে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার সুযোগ পেয়ে ব্যবসায়ীরা প্রচুর চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন। আবার সরকারিভাবেও লাখ লাখ টন চাল আমদানি হচ্ছে। নতুন করে এলসি খোলা চাল এখনো দেশের বাজারে না এলেও আগেই যারা ভারত থেকে চাল আমদানির এলসি খুলেছিলেন এবং বিভিন্ন স্থল ও নৌবন্দরে যেসব চাল খালাসের অপেক্ষায় ছিল, শুল্ক কমানোর পর এসব চাল ত্বরিত গতিতে খালাস করা হচ্ছে। এর প্রভাবে পাইকারি বাজারে দাম ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে খুচরা বাজারেও পড়বে। সরকারিভাবে থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সে চাল বাজারে এলে দাম আরো কমবে বলে আশা করছেন তারা।

রাজধানীর বাদামতলীর লক্ষ্মী রাইস এজেন্সির মালিক নূর মোহাম্মদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমদানি করা চাল এখনো আমাদের মোকামে এসে পৌঁছায়নি। তারপরও দাম কমাতে হচ্ছে। কারণ প্রতিযোগিতার বাজার। মিলপর্যায়ে চালের দাম কমলে যেমন আমাদের কমাতে হয় তেমনি মিলপর্যায়ে দাম বাড়লে আমাদের বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হয়। বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে চাল প্রবেশ করতে শুরু করায় মিল মালিকরা কম দামে চাল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন জানিয়ে নূর মোহাম্মদ বলেন, গত তিন দিনে মিলপর্যায়ে মোটা চালের দাম কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা কমেছে সরু চাল সাধারণত আমদানি হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, মোটা চালের দাম কমে আসার প্রভাব সরু চালের ওপরও পড়েছে। দাম কমেছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা।

বাবুবাজার চালের আড়তে গতকাল মোটা চাল বিআর ২৮, গুটি ও স্বর্ণা কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এসব চাল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়। সরু চাল মিনিকেট বা নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। এ ছাড়া মিলপর্যায়ে প্রতি কেজি চালে মানভেদে তিন থেকে চার টাকা পর্যন্ত কমেছে। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মোটা চাল মানভেদে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হয় যা আগে ছিল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা। সরু চাল নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫৬ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে সুপার শপগুলোয় সরু চালের দাম কেজিতে দুই টাকা কমেছে বলে জানা গেছে।

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, মিলমালিক ও পাইকারি আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছেন। তাদের সাথে যুক্ত ছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। সরকার যদি দুই মাস আগে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিত তাহলে সিন্ডিকেটকারীরা জনগণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ছিনিয়ে নিতে পারত না। হঠাৎ করে চালের দাম পড়ে যাওয়ায় আগে বাড়তি দামে কেনা চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলেও জানান খুচরা বিক্রেতারা। তাদের দাবি, কেউ লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করবে না। এ কারণেই দোকানে থাকা চাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত খুচরাপর্যায়ে চালের দাম কমবে না বলে জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে হাতিরপুলের চাল বিক্রেতা আবদুস সোবহান গতকাল তথ্য দিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা যারা খুচরাপর্যায়ের ছোট ব্যবসায়ী তারা তো বিভিন্ন সুযোগের অপেক্ষায় থাকি। পাইকারি বাজারে দাম এক টাকা বৃদ্ধির খবর শোনার সাথে সাথে আমরা দুই টাকা দাম বাড়িয়ে দেই। আমার দোকানে পাঁচ হাজার কেজি চাল থাকলে মুহূর্তেই আমার ১০ হাজার টাকা লাভ বেড়ে যায়। কিন্তু পাইকারি বাজারে দাম কমলেও আমরা কমাই না। কারণ হিসেবে আগে বাড়তি দামে কেনার কথা আমরা গ্রাহকদের বোঝাতে সক্ষম হই। সিন্ডিকেট করে মিলমালিক এবং পাইকারি আড়তদাররা চালের দাম বাড়ালেও এই সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা বাড়তি কিছু লাভ করার সুযোগ পেয়েছে বলে জানান তিনি।

চালের আমদানি শুল্ক কমানোর সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন চালের দাম কেজিতে ছয় টাকা করে কমবে। এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও গতকাল তাকে পাওয়া যায়নি। তবে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, শুল্ক কমানোয় বেসরকারিপর্যায়ে প্রচুর চাল আমদানি হচ্ছে। সরকারিপর্যায়ে আমদানির চালও কয়েক দিনের মধ্যে এসে যাবে। তখন বাজার অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে দাম কিছুটা কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে কারসাজিকারকদের মাথায় বাজ পড়েছে। তারা নতুন করে দাম বাড়াতে পারেনি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে খুচরাপর্যায়েও চালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/234446