২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৮:১৪

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত

দেশকে রাজনীতিহীন করার ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করছে সরকার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভা ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার এবং সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়।

“জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, নিম্ন আদালতে সরকারের ছক অনুযায়ী বিচার কার্য চালানো হচ্ছে ও রাজনৈতিক নেতাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আদালতের সকল নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে গভীর রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুনানি ছাড়াই বিরোধীদলের সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রার্থীদেরকে দ্রুত সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিসহ বিরোধীদলের ১২ শতাধিক নেতাকর্মীকে কারাদ- দেয়া হয়েছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার এবং কারাগারে আটক রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মামলায় ঘন ঘন তারিখ দিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি করার বিচারিক প্রহসন চলছে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ বিচারের নামে এইসব অন্যায় ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে আরও লক্ষ্য করছে যে, ফ্যাসিস্ট সরকার সারা দেশে গণতন্ত্রকামী ও শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর মামলা-হামলা, জুলুম-নির্যাতন ও গণগ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। সরকার শান্তিপ্রিয় মানুষের কণ্ঠরোধ করার জন্য নির্যাতনের পথ বেঁছে নিয়েছে। সংবিধান স্বীকৃত নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিরোধীদলকে মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সরকারের কতিপয় অতি উৎসাহী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে গুলি ও হামলা চালাচ্ছে। শত শত নেতাকর্মীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। অনেকে গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। আওয়ামী সরকারের গত ১৫ বছরের শাসনামলে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অভিমত ব্যক্ত করছে যে, ফ্যাসিবাদী এ সরকার মুখে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কথা বলে। প্রকৃতপক্ষে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। তারা বাকশালী ধ্যান-ধারণা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা হুঙ্কার ছেড়েছেন, ‘দেশকে বিএনপি-জামায়াত মুক্ত করতে হবে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিরোধীদলকে রাজনীতি থেকে মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। বেশ কিছু দিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতকে নির্মূল করার ঘোষণা দিয়ে ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এসব ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ মূলত দেশকে একদলীয় বাকশালী শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আওয়ামী লীগ বেপরোয়া ও অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। তারা হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে বেফাঁস কথাবার্তা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী আচরণ দেশ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অবিলম্বে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান, বায়বীয় মামলা-হামলা, জুলুম-নিপীড়ন, গুম, খুন, হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি দেশবাসীকে সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছে।”