বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মীর কাসেম আলীকে হত্যার সরকারী ষড়যন্ত্রের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনিসহ আটক সকল জামায়াত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচী ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ আজ ৮ মার্চ ২০১৬ নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেনঃ-
“সরকার ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যা করছে। সরকারী ষড়যন্ত্রের শিকার জনাব মীর কাসেম আলী। সরকার মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে জনাব মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে নিজেদের দলীয় লোকদের দ্বারা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায়ে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্র করছে।
মাননীয় আদালত সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে আজ তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের যে রায় ঘোষণা করেছেন তা একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। এ রায়ে মীর কাসেম আলী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি রিভিউ আবেদন করবেন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে তিনি খালাস পাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
জনাব মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আনীত সরকারের অভিযোগের সাথে তার ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতাও নেই। সরকার পক্ষ আদালতে জনাব মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যে সব ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন সেখানে জনাব মীর কাসেম আলীর নাম নেই। অভিযোগে ঘটনার স্থান, সময় এবং যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে সরকারের দাখিল করা ডকুমেণ্ট অনুযায়ী ঐ সময়ে জনাব মীর কাসেম আলী ঐ স্থানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি তখন ঢাকায় ছিলেন। জনাব মীর কাসেম আলী তার ঢাকায় অবস্থানের প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করেছেন। ঐ সময়ে জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত খবরসমূহ প্রমাণ হিসেবে সরকার পক্ষ আদালতে পেশ করেছেন। সরকারের দাখিল করা জাতীয় সকল পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জনাব মীর কাসেম আলীর ঢাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখার খবর ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে। পক্ষান্তরে ঐ সময়ে জাতীয় দৈনিকগুলোতে চট্টগ্রামের যে সব খবর প্রকাশিত হয়েছে তার কোনটিতেই জনাব মীর কাসেম আলীর নাম নেই। এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, অভিযোগ সংঘটনকালীন সময়ে জনাব মীর কাসেম আলী ঢাকায় ছিলেন, চট্টগ্রামে ছিলেন না। চট্টগ্রামের ঘটনাস্থলে তার অনুপস্থিতির প্রমাণ থাকা সত্তে¡ও সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার ব্যবস্থা করেছে। জনগণ সরকারের দায়ের করা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলার রায় প্রত্যাখান করছে।
সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বিচারের নামে যে প্রহসনের আয়োজন করেছে দেশে-বিদেশে তার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। সরকারের মন্ত্রী ও সরকার দলীয় নেতাগণ গত কয়েক দিন যাবত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের লক্ষ্য করে যে বক্তব্য রেখেছেন তা আদালতের ওপর এক নগ্ন চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছু নয় বলে দেশের জনগণ মনে করে। মন্ত্রীদের এ বক্তব্যে জনাব মীর কাসেম আলী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছিল। ট্রাইবুনালের বিচার থেকে শুরু করে আপীল বিভাগ পর্যন্ত এ মামলার বিভিন্ন স্তরে সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বিচারকে প্রভাবিত করার জন্য যে অবাঞ্ছিত ভূমিকা পালন করা হয়েছে তা বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দেশবাসী অবগত আছেন যে, সরকারী পৃষ্ঠপোকতায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ স্থাপিত হওয়ার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ‘সমাবেশের দাবি বিবেচনায় নিয়ে রায় দেয়ার’ জন্য বিচারপতিদের প্রতি আহবান জানান। ২০১৩ সালে তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিশরে সফরে গিয়ে আল্লামা সাঈদী ও আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় রায়ের দিন ও তারিখ ঘোষণা করে বক্তব্য দেন। অতি সম্প্রতি সরকারের দুইজন মন্ত্রী জনাব মীর কাসেম আলীর মামলা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রমাণিত হয় সরকার জনাব মীর কাসেম আলীকে হত্যা করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। আমরা সরকারের এ জঘন্য ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আমরা জনাব মীর কাসেম আলীকে হত্যার সরকারী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিতে ৯ মার্চ বুধবার সারা দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করছিঃ
উপরোক্ত হরতাল কর্মসূচী সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সফল করে তোলার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা এবং কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজ ও পেশাজীবীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তথা দেশের আপামর জনতার প্রতি আমি উদাত্ত আহবানন জানাচ্ছি।”
বিঃদ্রঃ এ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ী, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও সংবাদপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।