সরকারি আর ব্যক্তি খাতের ঋণ মিলিয়ে এখন মাথাপিছু ঋণ বেড়ে হয়েছে সোয়া লাখ টাকা। বিগত আওয়ামী সরকারের নেওয়া অপচয়ের প্রকল্পের বাড়তি ব্যয় মেটাতে নেওয়া ঋণ আর ব্যক্তি খাতের ঋণ মিলিয়ে এত বড় ঋণের বোঝা পড়েছে ব্যক্তির ঘাড়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে আরো জানা যায়, সরকারি খাতের মাথাপিছু ঋণ এখন এক লাখ সাত হাজার টাকা।
তবে এক বছর আগে ছিল ৯৫ হাজার ২০ টাকা। বছরের ব্যবধানে ওই ঋণ ১১ হাজার ৯৮০ টাকা বেড়েছে। আর ব্যক্তি খাতের মাথাপিছু ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে একজন ব্যক্তির মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা।
মাথাপিছু ঋণ হলো, বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশ ও বিদেশ থেকে নেওয়া সরকারি ও বেসরকারি ঋণ। একজন নাগরিকের সেই ঋণের দায়ের অংশই গড় ঋণ। কারণ জনগণ দেশের মালিক। এই ঋণ জনগণকে প্রত্যক্ষভাবে চাপে না ফেললেও পরোক্ষভাবে ফেলে।
জনগণের কাছ থেকে নেওয়া করের টাকায় এসব ঋণ শোধ করতে হয়। যত ঋণ, সরকারের তত দায়। আর এ দায় মেটাতে করের হারও বাড়াতে হয়। যার বহুমুখী প্রভাব পড়ে ভোক্তার ওপর।
অর্থ বিভাগের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
মার্চ ও জুন মাসের হিসাব এখনো প্রতিবেদন আকারে তৈরি করা হয়নি। তবে অর্থবিভাগ ধারণা করছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে দেশীয় ঋণ ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণ আট লাখ এক হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনার সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জন।
মোট স্থিতি ঋণের সঙ্গে মোট জনসংখ্যা ভাগ দিলে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ছয় হাজার ৯৯৯ টাকা। এটি সরকারের ঋণের মাথাপিছু হিসাব।
এ ছাড়া বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পরিবারের খরচ মেটাতে একজন ব্যক্তি গড়ে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা ঋণ নিয়ে থাকে। ঋণগ্রস্ত পরিবারের গড় ঋণ এক লাখ ৮৭ হাজার ৩০৮ টাকা। এসব পরিবারের মানুষের গড়ে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ৯৬৯ টাকা। সে হিসাবে যদি সরকারের মাথাপিছু ঋণ এবং ব্যক্তিগত গড় ঋণের হিসাব একত্র করা হয়, তবে একজন ব্যক্তির গড় ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা।
২০২৩ সালের জুন মাসের বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণ মিলিয়ে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছিল ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে গত বছর মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৯ টাকা। অর্থাৎ সরকারি ঋণের বিপরীতে বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১১ হাজার ৯৮০ টাকা।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঋণের এই বোঝা মূলত দেশের মানুষকেই শোধ করতে হবে। এই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে বাজেটের মাধ্যমে। আর বাজেটের অর্থায়ন হয় করদাতার অর্থে। ভবিষ্যৎ করদাতাকেই এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। কাজেই দিন শেষে দেশের মানুষকেই এটার অর্থায়ন করতে হবে। বাজেটের ওপর বোঝা মানেই আমার আপনার ওপর বোঝা বৃদ্ধি। কারণ আপনার আমার আয় থেকে কর দিয়েই তো এগুলো বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে পরিশোধ করতে হবে।’
মাথাপিছু ঋণ বাড়লেও তা আয়ের তুলনায় এখনো কম। বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৮৪ ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় তিন লাখ ছয় হাজার ১৪৪ টাকা, যা গত অর্থবছরে ছিল দুই লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা।