১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার

‘উধাও’ হওয়া ভোজ্য তেল বাজারে ফিরেছে

গত কয়েকদিন ধরে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দেয়। ধীরে ধীরে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় বোতলজাত সয়াবিন। ক্রেতারা তেলের জন্য হন্যে হয়ে ছুটেন দোকান থেকে দোকানে। এই অবস্থার মধ্যে সোমবার বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেন। দাম বাড়ানোর পর বদলে গেছে বাজারের চিত্র। এখন প্রায় সব দোকানেই মিলছে তেল। দাম নেয়া হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। উধাও হওয়া সয়াবিন এত দ্রুত কীভাবে বাজারে আসলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ক্রেতাদের।

সিন্ডিকেট না ভেঙে এভাবে দাম বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর ডিলাররা বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে। বোতলের গায়ে আগের মূল্য লেখা থাকলেও দোকানদাররা নতুন মূল্যে বিক্রি করছেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে চার দিনের ব্যবধানে এসেছে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের চারটি জাহাজ। ৫২ হাজার টন সয়াবিন তেল আনা হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে।

সরজমিন মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার, মিরপুর, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া ও মোহাম্মদপুর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাওরান বাজারে দেখা গেছে সব দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের। বিক্রি হচ্ছে আগের মূল্যের থেকে বেশি দামে। মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত মূল্য। শোয়াইব নামে একজন ক্রেতা জানান, তিনি ৫ লিটার সয়াবিন তেল কিনেছেন। বোতলের গায়ে মূল্য ৮১৮ টাকা থাকলেও তার কাছ থেকে রাখা হয়েছে ৮৮০ টাকা। তিনি বলেন, এভাবে সিন্ডিকেটের কাছে সরকার নতি স্বীকার করলে পরিবর্তনটা আসবে কীভাবে। সিন্ডিকেট না ভেঙে দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। দেখেন না দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজারে এখন প্রচুর তেল দেখা যাচ্ছে। এগুলো তো আগে থেকেই স্টক করে রেখেছেন তারা।

পূর্ব রাজাবাজার এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী জলিলুর রহমান বলেন, প্রতি বছরই শীত মৌসুমে ডিলার ও মালিকরা এমন কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন দাম বাড়ানোর অজুহাতে। এই সিন্ডিকেট ভাঙাটা জরুরি, কয়েক দিন হলো তেল পাচ্ছি না। কেউ অর্ডার কাটতে আসছে না। আজকে থেকে সবাই অর্ডার কাটতে আসছেন। এর মানে তাদের কাছে তেল আগে থেকেই ছিল।

অন্যান্য সকল বাজারে তেলের সরবরাহ বেশি দেখা গেলেও গুলিস্তান কাঁচা বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এখানে বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা যায়নি। দুই চারটি দোকানে রয়েছে অল্পকিছু তেল। মুদি দোকানি লিটন বলেন, আমাদের বাজারে এখনো তেলের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। আজকেও কোনো কোম্পানি অর্ডার কাটতে আসেনি।

মিরপুর-১০ কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী সাগর হোসেন বলেন, আজকে আমাদের বাজারে তেলের সরবরাহ মোটামুটি রয়েছে। এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তবে অর্ডার কাটতে এসেছে কোম্পানির কর্মকর্তারা। মিরপুরের পল্লবী এলাকার বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে এসব দোকানে বিভিন্ন ব্রান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ানোর এক দিনের কম সময়ে এই তেল কোথা থেকে আসলো এই প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারছেন না দোকানিরা।

উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

https://mzamin.com/news.php?news=139450#gsc.tab=0