৯ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে যত সংকট

-আলী আহমাদ মাবরুর

বাংলাদেশ এবং ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক উত্তেজনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। উত্তেজনা হ্রাস পাওয়ার কোনো লক্ষণও এখনও দেখা যাচ্ছে না। বরং পরিস্থিতির টালমাটাল রূপ দিনে দিনে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে আজ ঢাকায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক। দুদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত হয় গত ২ ডিসেম্বর, যখন ৫০ জনের বেশি উগ্র হিন্দু সদস্য ত্রিপুরার আগরতলার বাংলাদেশ মিশনে প্রবেশ করে মিশনটি ভাঙচুর করে। একটি দেশের অভ্যন্তরে অন্য আরেকটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে হামলার এই ঘটনা স্পষ্টভাবে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এরই মধ্যে ভারতের কলকাতা ও আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের প্রধানদের সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের দূতাবাস অফিসে হামলার এই ঘটনাকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছে এবং দেশজুড়ে বাংলাদেশ মিশনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে; তবে, দুদেশের ভবিষ্যত নিয়ে এখনো অনেকটাই অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। কেননা, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটু ইতিবাচক ভূমিকা দেখানোর চেষ্টা করলেও গত ৩ ডিসেম্বর, অল ত্রিপুরা হোটেলস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশী পর্যটকদের ওপর একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের অভিযোগ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। এর আগে, আইএলএস নামের একটি মাল্টি-স্পেশালিটি প্রাইভেট হাসপাতাল ঘোষণা করেছে যে এটি বাংলাদেশি রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করবে না। যদিও কলকাতার হাসপাতালগুলো ব্যবসায় মন্দাভাবের আশংকায় পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে তবে সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো ইংগিত করে যে, বাংলাদেশের প্রতি ভারতের রাগ ও বিদ্বেষ ক্রমাগত বাড়ছে। ভারতের বেশ কিছু মিডিয়া এবং সরকারের একটি অংশের মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মাসের শেষদিকে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং সাবেক ইস্কন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আটক করার পর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রামে দাসকে জামিন না দেওয়া নিয়ে প্রতিবাদে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের একজন আইনজীবী এবং সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর চিন্ময় সমর্থকদের হামলায় নিহত হন। এর পরপরই অর্নব গোস্বামীর রিপাবলিক টিভি মিথ্যা খবর প্রকাশ করে দাবি করেছিল যে, ইস্কন নেতা চিন্ময় দাসের পক্ষে লড়াই করা মুসলিম আইনজীবী নিহত হয়েছে। মুহূর্তের ভেতর এ খবর ভাইরাল হয়ে যায়, যা ভারতীয়দের মাঝে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরও ঘৃণা ছড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সাথে সাথেই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, নিহত আলিফ হিন্দু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী ছিলেন না। বরং দাসের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সুভাশিস শর্মা। আলিফ হত্যায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে, দুইজন হলেন জিয়া উদ্দিন ফাহিম এবং রাজীব ভট্টাচার্য- যারা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য।

ভারতের দিক থেকে আরেকটি বড়ো অনিয়ম যা করা হয় তাহলো, দেশটিতে নির্বাহী আদেশে আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশের পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং শতাধিক হত্যা মামলার আসামী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি বিবৃতি প্রকাশের সুযোগ দেওয়া। শেখ হাসিনা সরকার নিযুক্ত সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটরের মৃত্যুর ঘটনার রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইউনুস সরকার এই সন্ত্রাসীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার বড়ো একটি অংশ শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের মিথ্যাচারের সঙ্গে তাল দিয়ে এসব অপপ্রচারে ভূমিকা রাখে।

যেদিন আগরতলায় হামলা হয়, সেদিনই ইন্ডিয়া টুডে একটি সংবাদ প্রকাশ করে যার শিরোনাম ছিল, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের আহ্বান জানিয়েছেন।” বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের মিডিয়া ও রাজনীতিবীদদের অতিরঞ্জিত এই ক্যাম্পেইনটি জোরেশোরে শুরু হয় শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই। তেমন কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই ভারতীয় মিডিয়াগুলো দাবি করতে শুরু করে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ইউনুস সরকারের আমলে আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। একই ধরনের কথা আওয়ামী মহল থেকেও প্রচারণা করা হয়। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতির প্রত্যাখ্যাত দল। পরপর তিনটি তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে ছিল এবং ফ্যাসিবাদী একটি শাসন কায়েম করেছিল। আর প্রতিটি নির্বাচনের পরপরই ভারত সবার আগে হাসিনা সরকারকে বৈধতা ও স্বীকৃতি দিয়েছিল। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতার শেষদিকে শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গুলি চালিয়ে দেশজুড়ে দুই হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করলেও ভারত তখন চুপ ছিল। আজকে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ভারতীয় মিডিয়া ও রাজনীতিবিদেরা যেভাবে সরব হয়েছেন, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে হওয়া গণহত্যার সময়ে তারা ততটাই প্রতিক্রিয়াহীন ছিলেন। আওয়ামী লীগকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ভারতীয়দের এই ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি।

২ ডিসেম্বর উগ্রহিন্দুরা বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশন অফিসে শুধু হামলা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। একইসাথে বাংলাদেশের পতাকায় আগুন দেওয়া হয়েছে। ভবনের সামনে থাকা সাইনবোর্ড ভেঙেও তাতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ভিসা অফিসের সামনে থেকে হিন্দু সংঘ সমিতির আন্দোলনকারীরা হঠাৎ নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। একই ঘটনায় বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের কোচবিহারেও। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় সনাতনী হিন্দু মঞ্চ। সংগঠনটির সদস্যরা বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া চ্যাংড়াবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিলও করে। এই কর্মসূচি ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ছিল সীমান্ত এলাকায়। এদিকে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের পেট্টাপোল সীমান্তেও। সেখানে সমাবেশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে। সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এটি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ দেওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।
এ অবস্থায় প্রতিবেশি দুদেশের সম্পর্ক মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। ভারতীয় সরকারের একটি অংশ থেকে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের বিষয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে গাজা ও ইউক্রেনের সঙ্গে তুলনা দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা আরও বাড়াচ্ছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া যেহেতু বৈশি^ক রাজনীতিতে বড়ো ভূমিকা পালন করে, আর সেক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্যের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হল যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো ধরনের ফ্যাক্ট চেকিং ছাড়াই এ তথ্যগুলো শেয়ার করা হয়। ভারত সরকার এ বিষয়টি বোঝার পরও পরিস্থিতি উত্তরণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ভারতীয় জনগণের এসব মিথ্যা ক্যাম্পেইনের ফাঁদে অন্য দেশের রাজনীতিবিদেরাও পড়ে যাচ্ছেন। গত ২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের লেবার দলীয় এমপি ব্যারি গার্ডিনার আওয়ামী লীগ ও ভারতের বয়াণের আলোকে বৃটিশ পার্লামেন্টে একটি বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে “দাঙ্গা” হিসেবে অভিহিত করেন এবং বাংলাদেশকে “ইসলামিক রাষ্ট্র” হিসেবে উপস্থাপন করেন- যা তথ্যগত ও বাস্তবতা উভয় বিবেচনায়ই ভুল।

ভারত সরকারের এখন সিন্ডিকেট মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় হয়েছে। কেননা, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০২৪ সালের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট অনুযায়ী, মিসইনফরমেশন এবং ডিসইনফরমেশন- উভয় ধরনের তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে ভারত শীর্ষস্থানে রয়েছে। গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কেও গবেষণায় আরো জানা যায়, যত বেশি মানুষ মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের সম্মুখীন হয়, তত বেশি তারা তা বিশ্বাস করতে শুরু করে, এমনকি তা বাস্তবতার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণও যদি হয় তারপরও তাদের বিশ^াসের ক্ষেত্রে তা তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না।” আর বলাই বাহুল্য যে, এসব মিথ্যাচারের বিস্তার ভারতীয় রাজনীতি, ধর্ম এবং সমাজে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।

মূলত, মিথ্যা তথ্য, রাজনৈতিক স্বার্থ এবং মিডিয়ার অপব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অবনতি ঘটছে। অল্প কিছু বাম ঘরানার ভারতীয় রাজনীতিবীদ এখনো পর্যন্ত ভারতীয় সরকার ও মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিশেষ করে ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি, ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই ঘরানার রাজনীতিবীদ ও বুদ্ধিজীবীরা মনে করছেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় একটি উগ্র ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী দল থাকার কারণে দেশের অভ্যন্তরে যেমন ধর্মীয় বিভাজন বাড়ছে এবং গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে ঠিক একইভাবে আঞ্চলিক পরিসরেও ভারত ক্রমশ একা হয়ে যাচ্ছে।

বিজেপি সরকারের বিভাজন নীতিকে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে দেশটির মিডিয়াগুলো। মিডিয়াগুলো যেহেতু জনমতকে প্রভাবিত করে তাই মিডিয়ার অতিরিক্ত পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ জনগণের মননকে নেতিবাচকভাবে গঠন করে। ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ব্যাপারে বরাবরই অতিরঞ্জন করেছে, যদিও এর পক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ নেই। মিডিয়ার এই মিথ্যা প্রচারণা কেবল ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই প্রভাব ফেলছে তাই নয়, বরং বাংলাদেশের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। ভারতীয় মিডিয়ার ভূমিকাকে এখন গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। কেননা তারা বিশ্বব্যাপী কাজ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডিজইনফো ল্যাব ২০১৯ সালে এমন একটি নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে, যা ভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত ২৬৫টি স্থানীয় ভুয়া মিডিয়া আউটলেট পরিচালনা করছে, এবং ২০২০ সালের মধ্যে এই নেটওয়ার্কটি ৭৫০টি ভুয়া নিউজ ওয়েবসাইটে পরিণত হয়েছে।

ভারতের এই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ সমস্যা কেবল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি রাজনৈতিক পরিমন্ডলেও প্রভাব বিস্তার করছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমিলও রয়েছে অনেক। অভিন্ন নদীর পানি বন্টন নিয়ে ভারত বাংলাদেশকে নিয়মিতভাবে বঞ্চিত করে যাচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। দুদেশের মধ্যকার বাণিজ্য ভারসাম্য বরাবরই ভারতের পক্ষেই থাকে। সীমান্তে বাংলাদেশিদের প্রায় নিয়মিতভাবেই হত্যা করা হচ্ছে। আবার ভারত নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ আদায়ের জন্য আদানী পাওয়ার প্ল্যান্টের মতো একটি আধিপত্যবাদী জ¦ালানি প্রকল্প বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে তিনটি নির্বাচনসহ বেশ কিছু স্পর্শকাতর ঘটনা, হত্যাকান্ড ও বিচারেও ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ভারতের দীর্ঘ অনেক বছরের বিনিয়োগ কার্যত বিফলে চলে গিয়েছে। বাংলাদেশে হাসিনা ছাড়া যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, ভারত তাকে নিয়ে আতংকে থাকে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা না থাকলে আর কোনো শক্তি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে পারবে এমনটাও তারা বিশ^াস করে না। এরকম কিছু মুখস্ত চিন্তা ও ধারণা থেকে ভারত বরাবরই আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় জোর দিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে নয়। ফলে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে আস্থা-বিশ^াস ও নিরাপত্তার সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। যতদিন না পর্যন্ত ভারত একটি দলের প্রতি একমুখী অন্ধবিশ^াস থেকে বেরিয়ে না আসতে পারবে, বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ও বিশ^াসকে মুল্যায়ন করতে না পারবে; ততদিন পর্যন্ত এ দুটো দেশের সম্পর্কে প্রত্যাশিত উন্নতি ঘটবে না।

https://dailysangram.info/post/575402