রেলের ব্যয় সংকোচন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। তাই চলমান প্রকল্পগুলো নতুন করে পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। অন্তত ৫টি প্রকল্প থেকে ব্যয় কমছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ঠিক রেখে আপাতত প্রয়োজন নেই এমন কাজগুলো বাদ দেয়া হচ্ছে। ব্যয় কমানো হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন, পূর্ত প্যাকেজ, পূর্নভরণযোগ্য সিডি-ভ্যাট, কনসালটেন্সি সার্ভিস ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনাসহ আনুষঙ্গিক খাত থেকে।
রেলওয়ে সূত্রমতে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথের ব্যয় সবচেয়ে বেশি কমছে। অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মোট প্রকল্প ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার অংশের জন্য ব্যয়ের সংস্থান ছিল ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা এবং রামু-ঘুনধুম অংশের জন্য ব্যয়ের সংস্থান ছিল ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মোট প্রকল্প ব্যয় ১১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার অংশের জন্য ৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা সাশ্রয় করে ১১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে এবং রামু-ঘুনধুম অংশটি প্রকল্পের সংস্থান হতে বাদ দেয়ার কারণে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। অর্থাৎ অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপি’র তুলনায় ৬ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা সাশ্রয় করে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে ১ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা, পূর্ত প্যাকেজে ৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, পুনর্ভরণযোগ্য সিডি-ভ্যাট ৫৯৬ কোটি টাকা, কনসালটেন্সি সার্ভিসে ২৩৫ কোটি টাকা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় ১১ কোটি টাকা কমছে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। তবে এই প্রকল্পে ১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা ব্যয় কমছে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে ১০০০ কোটি টাকা ও থোক বরাদ্দ থেকেই ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় কমতে পারে। ব্যয় কমার প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ বাদ দেয়া হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে পুনর্বাসন বাদ দেয়া হয়েছে। কিছু জায়গায় রিভার ট্রেনিং বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে এই কৃচ্ছ্রসাধন করা সহজ হয়েছে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক। এছাড়া আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্পে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা, খুলনা-মংলা প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা কমছে। আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্পের পিডি মো. সুবক্তগীন বলেন, এই প্রকল্প থেকে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা কমেছে। এটার ডিপিপি সংশোধন করে এডিবি’র (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) কাছে পাঠানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, আমাদের প্রকল্পে ব্যয় কমানোর সুযোগ কম। তবে আমাদের একটা ব্রিজ মিউজিয়ামের একটা টেন্ডার করা হয়েছিল। ব্রিজ মিউজিয়ামটা বাদ দেয়া হয়েছে। ডিপিপি অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকা। এছাড়া আমাদের পুরো প্রকল্প থেকেও কিছু অর্থ সাশ্রয় হতে পারে। এসব বড় প্রকল্পের বাইরেও কিছু প্রকল্প থেকে ব্যয় সংকোচন করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মানবজমিনকে বলেন, আমরা প্রকল্পগুলো অর্থ যোগানদাতাদের ঋণে করে থাকি তাই আমাদের লক্ষ্য থাকে সেই ঋণের টাকা উঠবে কি না। আর মানুষ এই প্রকল্প থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে কি না; এই বিষয় নিয়ে আগানো হচ্ছে। যেসব প্রকল্পে মানুষের সেবা পাওয়ার প্রবণতা কম সেই প্রকল্পে ব্যয় কমানো হচ্ছে।