১৫ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৫:৪৪

হুমকিতে গ্রামীণ অর্থনীতি

ভারতের মহিষের গোশত আমদানি বন্ধের দাবি

দেশে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও ভারত থেকে মহিষের গোশত আমদানিতে হুমকিতে পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষি, গৃহস্থ ও খামারিরা। গত ১৫ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে এসেছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মহিষের গোশত। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি না করে স্থানীয়ভাবে এ পরিমাণ গোশত সংগ্রহ করা হলে পুরো টাকাই যেত গ্রামে।

এতে কৃষি অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হতো। করোনা মহামারিতে অর্থনীতির সব খাতে প্রচন্ড ধাক্কা লেগেছে। তবে এদেশের কৃষকরা তাদের শ্রমে-ঘামে কৃষিখাত সচল রেখেছেন। অথচ দেশ প্রাণিসম্পদে স্বাবলম্বী হওয়ার পরও গোশত আমদানির মাধ্যমে তাদের মেরুদন্ড ভেঙে দেয়ার আয়োজন চলছে। আমদানি বন্ধ না হলে হতাশ কৃষক ও খামারিরা পশুপালন বন্ধ করে দিলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আপত্তি উপেক্ষা করেই আমদানি হচ্ছে ভারতীয় মহিষের গোশত।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মু. সিকান্দার খান বলেন, করোনা দুর্যোগেও এদেশের কৃষকরা গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। ফল, ফসলের সাথে সাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে দেশকে তারা সমৃদ্ধ করছে। কিন্তু প্রয়োজন না থাকার পরও গোশত আমদানি করে তাদের লোকসানের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সরকারের উচিত এসব বিষয় ভেবে দেখা। কারণ গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখা না হলে সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়বে।

খামারিরা জানান, গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ব্যাপকহারে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ গবাদি পশু লালন-পালন শুরু হয়েছে। খামারিদের পাশাপাশি কৃষক এবং গৃহস্থরাও গবাদিপশু পালনে উৎসাহী হয়ে উঠেন। বিশেষ করে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধের পর এই খাতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। অনেক প্রান্তিক চাষী গরু ছাগল লালন-পালন করেই তাদের সংসার এবং ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খচর জোগাড় করছেন। কিন্তু আমদানির নামে ভারতীয় মহিষের গোশতের ডাম্পিংয়ের ফলে এখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। উচ্চমূল্যে নিম্নমানের ভারতীয় গোশত আমদানি হচ্ছে। অথচ কৃষক-খামারিরা তাদের গবাদিপশুর ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে কৃষক খামারিরা পশুপালন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এতে গ্রামীণ তথা কৃষি অর্থনীতিতে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভারত থেকে আনা মহিষের গোশত গরুর বলে বিক্রি করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোঁরা এবং সুপার শপগুলোতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে মহিষের গোশত আমদানির খবরে মানুষের মধ্যে হিমায়িত গোশতের প্রতি অনীহা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে হারাম-হালালের প্রশ্নে অনেক ভোক্তা হিমায়িত গোশত এড়িয়ে চলছেন। এ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের গোশত আনা বন্ধ করা না হলে এ খাতে আস্থার সঙ্কট আরও বাড়বে। আর তাতে দেশি গোশতের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নগরীর ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, তিনি প্রায় সুপার মার্কেট থেকে হিমায়িত গোশত কেনেন। কিন্তু ভারত থেকে মহিষের গোশত বিক্রি হচ্ছে এমন খবরে তিনি গোশত কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। অন্য ক্রেতারাও যদি এভাবে গোশত কেনা বন্ধ করেন তাহলে দেশি গোশতের বাজারেও মন্দা নেমে আসবে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত ভারতীয় গোশতের আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া।

এদিকে ভারত থেকে গোশত আমদানির এমন আত্মঘাতি কর্মকান্ড বন্ধের দাবিতে অনেকে সোচ্চার হচ্ছেন। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন ভারত থেকে গোশত আমদানি বন্ধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে। একই দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলনসহ আরো কিছু কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন এসোসিয়েশনের নেতারা।

এসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. শাহ এমরান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা জাতীয় স্বার্থে শুরু থেকেই ভারতীয় গোশত আমদানির প্রতিবাদ করে আসছি। সম্প্রতি আমদানি বন্ধের দাবিতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। এরপরও আমদানি বন্ধের ঘোষণা না দেয়া হলে চলতি মাসের শেষ নাগাদ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর ভারতের গোশতে সর্বনাশ শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে। দেশে পর্যাপ্ত মজুদের পরও ভারত থেকে মহিষের গোশত আমদানি এবং তা গরুর গোশত বলে বাজারে বিক্রির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহল বিশেষ করে ভোক্তাদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। ইনকিলাব অনলাইনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোক্তারা গোশত আমদানি বন্ধের দাবি জানান।

https://www.dailyinqilab.com/article/329003