১০ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ১০:৩৫

ধর্ষণ মামলাগুলোর দ্রুত বিচার চান আইনবিদরা

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা নিয়ে অভিমত

দেশে সম্প্রতি ধর্ষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কর্তৃক গৃহবধূকে গণধর্ষণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বর্বর ও অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে দেশ। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। এই অবস্থায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে অতিদ্রুত গতিতে ধর্ষণ মামলাগুলো তদন্ত করে, ত্বরিত বিচার চান আইনবিদরা। তাদের মতে, এসব মামলায় অতিদ্রুত গতিতে চার্জশিট দেয়া উচিত। দ্রুতগতিতে বিচার হওয়া উচিত। বিচারে যে সাজা হয় সেই সাজাটা ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া দরকার, যাতে অপরাধীরা বুঝতে পারে এখন থেকে অপরাধ করে আর ক্ষমা পাওয়া যাবে না। আইনবিদদের অনেকের অভিমত- সাজা বাড়িয়েই ধর্ষণের মতো মানোবতাবিরোধী অপরাধ দমন করা যাবে না। বর্তমানে যে যাবজ্জীবন সাজা আছে এই সাজা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিষয়ে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ আইনবিদ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাজা বাড়িয়েই অপরাধ দমন করা যায় না। বর্তমানে যাবজ্জীবন সাজা আছে; এই সাজা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং দ্রুত গতিতে ধর্ষণ মামলাগুলোর বিচার হয় তা হলে এই অপরাধ কমে আসবে। তিনি আরো বলেন, মামলাগুলোর যাতে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। এটা নির্ভর করে দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তার ওপর। আধুনিক পদ্ধতিতে অতিদ্রুত গতিতে প্রকৃত যারা অপরাধী তাদের শনাক্ত করে এসব মামলায় অতিদ্রুত গতিতে চার্জশিট দেয়া উচিত। দ্রুতগতিতে বিচার হওয়া উচিত। বিচারে যে সাজা হয় সেই সাজাটা ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া দরকার, যাতে অপরাধীরা বুঝতে পারে যে এখন থেকে আর প্রশাসনের আওতায় থেকে বা প্রশাসনের শুভ দৃষ্টিতে থেকে অপরাধ করে আর ক্ষমা পাওয়া যাবে না।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই ধর্ষণ মামলাগুলো বেড়ে যাওয়ার কারণ যারা স্থায়ীভাবে ক্ষমতাসীন দলের সাথে থাকেন এবং যাদের ক্যাডার রয়েছে তারা মনে করে তারা সবধরনের আইনের ঊর্ধ্বে। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। দুঃখজনকভাবে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও যেকোনো কারণেই হোক তাদের প্রতি নমনীয়। এ কারণে তারা ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না এবং সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারে না। মূল বিষয় হলো আইনে যে সাজাটাই থাকুক না কেন, সেই সাজা যাতে বাস্তবায়ন হয়। ত্বরিত গতিতে যাতে বিচার হয়, আইনের আওতায় যাতে আপরাধীদের আনা হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থিত করতে পারেন, সে জন্য দক্ষ কর্মকর্তা দরকার এবং মামলাগুলো যদি সঠিক তদন্ত হয়, তাহলে অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসবে। তাই এই মুহূর্তে ধর্ষণ মামলাগুলো দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করে ত্বরিত বিচার করা দরকার।
খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, এই আইন যদি পরিবর্তন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়, সেই পরিবর্তিত আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান, যারা ইতোমধ্যে অপরাধ করে ফেলেছে তারা এই আইনের আওতায় আসবে না। এখন থেকে যারা অপরাধ করবে এবং যদি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ইতোমধ্যে যারা অপরাধ করে ফেলেছে তারা নতুন আইনের আওতায় আসবে না। তিনি বলেন, আমার একই কথা মামলাগুলো দ্রুতগতিতে সঠিকভাবে তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হোক এবং ত্বরিত গতিতে বিচার করা হোক।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও প্রবীণ আইনবিদ ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে আইন সংশোধনের সরকারের উদ্যোগ সঠিক বলে মনে করেন। তিনি বলেন, আইন করার সাথে সাথে তো আইন মোতাবেক বিচার শুরু হওয়ার আগে অনেক ডেট পার হয়ে যায়। তদন্ত হবে, রিপোর্ট দেবে, সাক্ষীসাবুত হবে। তারপর আদালতে যাবে দুই পক্ষে মামলা করবে। এরপর সরকার আপিল বিভাগেও যেতে পারবে। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা আমি বলব সঠিক।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে একটি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’-এর খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হচ্ছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের জন্য একটি প্রস্তাব আগামী মন্ত্রিসভা বৈঠকে যাচ্ছে। মূলত আইনের ৯(১) ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ধারায় ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করে প্রস্তাব দেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আইনের আরো কয়েকটি স্থানেও ছোট ছোট পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/534257