১০ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ১০:৩২

‘ডাল আলুভর্তার দিনও আপাতত শেষ’

মাছ-গোশত আর সবজির দাম চড়ার পর মানুষের মুখে মুখে ছিল, ‘সমস্যা নেই, আলুভর্তা আর ডাল তো আছে।’ এখন আর তাও নেই। ভর্তা করার সেই আলুর কেজি এখন ৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম তো সেই যে শতক ছাড়িয়েছে তা আর দুই অঙ্কে নামার কোনো সম্ভাবনা নেই আপাতত। মরিচের কেজি মাঝে কিছুটা কমলেও এখন আবার ৩০০ টাকার ওপরে। সব মিলিয়ে ডাল আলুভর্তা খাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই আপাতত এই সময়ে। এমনটাই বলছিলেন বাজারের সাধারণ ক্রেতারা।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে গোল আলুও এখন নাগালের বাইরে। ১৮-২০ টাকার আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর গোপীবাগ বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রকারভেদে তিন দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার লাল রঙের গোলাকৃতির আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। রাজশাহী বা ওই অঞ্চলের লাল লম্বা আকৃতির আলুর কেজি ৪৫ টাকা এবং মুন্সীগঞ্জসহ আশপাশের আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বিক্রেতা শামসুল ইসলাম জানালেন, তাদের যেভাবে কেনা সেভাবেই বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ আর এক শ’ টাকার নিচে নামছে না। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এক শ’ টাকায়। ভালো উৎকৃষ্টমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এক শ’ ১০ টাকায়। এই পেঁয়াজটা বাছাই করা। রাজধানীর মানিকনগর বাজারের একাধিক বিক্রেতা বলেন, তারা যেভাবে কিনছেন সেভাবেই বিক্রি করছেন। তবে পাইকারি বাজারে খবর নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি যে দামে বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি দাম রাখছেন খুচরা বিক্রেতারা। টঙ্গীর পাইকারি আড়তদার জাহাঙ্গীর হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, পাইকারি পেঁয়াজ ৭৫-৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, খুচরা বাজারে এত বেশি হওয়ার কথা নয়। আলুর ব্যাপারে তিনি বলেন, আলুর দামটা আসলেই চড়া। বগুড়া বা রাজশাহীর আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর মুন্সীগঞ্জের আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। হাবিবুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, মানুষ যে এখন আলুভর্তা দিয়ে ভাত খাবে তারও সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ৩০ টাকায় এক শ’ গ্রাম মরিচ কিনেছেন। আবার কোথাও কোথাও মরিচের কেজি ৩২০ টাকা। কামরুজ্জামান নামে এক ক্রেতা জানালেন, ১০ টাকার মরিচ কিনতে গেলে দোকানদার সরাসরি বলে দিলেন, ১০ টাকার মরিচ দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, পরে ২০ টাকার মরিচ দিলে দোকানি তার হাতে ১২টি মরিচ তুলে দিলেন। তার মধ্যেও দু’টি মরিচ পচা। মাস চারেক ধরেই কাঁচামরিচের দাম বেশ চড়া। প্রথম দিকে ৩০০ টাকা উঠলেও সপ্তাহ দু’য়েক আগে ১৬০ টাকা কেজিতে মরিচ মিলেছে। কিন্তু এখন আবার তা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

বাজারে সবজির দাম চড়াই আছে। মাঝে কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা কমলেও এই সপ্তাহে তা আবারো বেড়েছে। বাজারে শীতের সবজিই নয়, সব ধরনের সবজির দামই বেশি। প্রতি কেজি ৫০ টাকায় শুধু পেঁপে এবং কচুরছরাই মিলছে। এর বাইরে ৮০ টাকার নিচে ভালো কোনো সবজি পাওয়া যায় না। শিমের কেজি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। ছোট আকারের ফুলকপি, বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। এক হালি কাঁচাকলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি। করলা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকায়। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। পটোল, ঝিঙা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, বেগুন ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ দিকে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকা। দু’দিনে প্রতি পিস ডিমে বেড়েছে ৪০ পয়সা। সেই হিসাবে ডজনে বেড়েছে প্রায় ৫ টাকা। আগে যে ডিমের ডজন ছিল ১১০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা। চালের দাম সেই বাড়তিই আছে। বস্তায় ২০০-৩০০ টাকা যে বেড়েছে তা আর কমার কোনো লক্ষণ আপাতত নেই বলে জানালেন একাধিক বিক্রেতা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/534254