২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ৫:৩৯

ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মুখে চরম দরিদ্ররা

ব্রিটেনের ৩২ বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার হানা; কুয়েতে চাকরি হারাচ্ছেন প্রবাসীরা; বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৯ লাখ ৯২ হাজার; টিকা নিতে ইচ্ছুক নন অর্ধেক মার্কিনি

কোভিড-১৯-এর কারণে এবারের অর্থনৈতিক মন্দার আঘাত কিছু দেশের জন্য আরো বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। চলতি বছর বিশ্বের ৭ কোটি থেকে ১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের শিকার হবেন। মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সেই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয় উঠেছে। এর কারণে গত তিন বছরের অগ্রগতি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

১৯৯০ সালে বিশ্বজুড়ে চরম দরিদ্র মানুষ ছিল ২০০ কোটির মতো, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৬ শতাংশ। গত বছর সেই সংখ্যা নেমে এসেছিল ৬৩ কোটিতে, যা মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ মাত্র। এসব চরম দরিদ্র লোকের বেশির ভাগই আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের বাসিন্দা। তবে এবারের মহামারীতে চরম দারিদ্র্য হতে যাওয়া অর্ধেকের বেশি মানুষই দক্ষিণ এশিয়ার। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাথে এক যৌথ গবেষণা শেষে জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীতে ৭০টি দেশের ৪৯ কোটি মানুষ দরিদ্র হচ্ছেন। যাদের বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ, পর্যাপ্ত খাবার নেই, সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর মতো পরিস্থিতি নেই। এর কারণে বিশ্ব অন্তত এক দশক পিছিয়ে যাবে। আগের যেকোনো মন্দার তুলনায় এবারের সঙ্কটে অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে অনেক বেশি। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, মহামারীর কারণে বিদেশে কর্মরত অনেকেই আগের মতো অর্থ পাঠাতে পারছেন না। ফলে চলতি বছর প্রবাসী আয় কমে যেতে পারে এক-পঞ্চমাংশ পর্যন্ত, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সম্ভবত জীবিকার জন্য শহরনির্ভর মানুষেরা। ভারতেই অন্তত এক কোটি মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। সব মিলিয়ে ভয়াবহ এক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন নতুন দরিদ্ররা। খবর দ্য ইকোনমিস্ট, স্কাই নিউজ, ফক্স ৬, এনডিটিভি, রয়টার্স, বিবিসি, আরব টাইমস, সিএনএন, ওয়ার্ল্ডোমিটারস ও এএফপির।

ব্রিটেনের ৩২ বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার হানা : যুক্তরাজ্যের অন্তত ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা সংক্রমণ সন্দেহ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে ১২৭ জন শিক্ষার্থীর শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। ম্যানচেস্টারের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে আইসোলেশনে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বারলে ক্যাম্পাস এবং কেমব্রিজ হলের প্রায় এক হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে, আগামী ১৪ দিন রুমের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একই রকম ব্যবস্থা নিয়েছে গ্লাসগো এবং এডিনবার্গ ন্যাপিয়েরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

করোনায় সরকারের ভুল দেশে দেশে : আগের মতো এখনো করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ গণহারে নমুনা পরীক্ষা, রোগী শনাক্তকরণ, সামাজিক দূরত্ব ও সরকারের পরিষ্কার নির্দেশনা। এর পরও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, স্পেনের মতো বেশ কিছু দেশ এ মহামারীকে ঠিকভাবে বুঝতে পারেনি। সুইডেন সব খোলা রেখে স্বাভাবিক নিয়মে চলতে দিয়েছিল, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও নাগরিক স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর পথে হেঁটে ছিল নিউজিল্যান্ড।

ইসরাইলের দেশব্যাপী লকডাউন অনেকটাই ব্যর্থ। জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানের মতো অঞ্চলগুলো হটস্পট খুঁজে পেতে গণহারে পরীক্ষা চালিয়েছে, আক্রান্তদের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পরীক্ষার গতি কম থাকায় তা ব্যর্থ হয়েছে ফ্রান্সে। নিয়ন্ত্রণ-শনাক্তকরণের দায়িত্ব গোয়েন্দা সংস্থার হাতে দেয়ায় মানুষ ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেছে ইসরাইলে। ডেনমার্ক-জার্মানি স্কুল খোলা রাখাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। যুক্তরাজ্য বেশ কিছু কার্যকর নির্দেশনা দিলেও সেগুলো অমান্য করেছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারাই। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে তাড়াহুড়ো করে সুরক্ষা ব্যবস্থায় ভাঙন ধরিয়েছে স্পেন।

করোনায় দেশী পর্যটকেই রক্ষা সৌদির : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় সাত মাস বন্ধ ছিল সৌদি আরবের সীমান্ত। তার পরও পর্যটন শিল্পে যতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি হওয়ার কথা, ততটা হয়নি। বিদেশীদের আগমন বন্ধ থাকলেও দেশী পর্যটকদের ওপর ভরসা করেই এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছে সৌদি আরবের পর্যটন খাত। সৌদির পর্যটনমন্ত্রী আহমেদ আল-খতিব জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বা ভ্যাকসিনের সুখবর এলে হয়তো নতুন বছরের আগেই সব দেশের জন্য পর্যটক ভিসা উন্মুক্ত করতে পারে সৌদি আরব। জানুয়ারি-মে লকডাউনের পর বেশ ভালো অবস্থা ছিল। আমরা অভ্যন্তরীণ পর্যটন ৩০ শতাংশ বাড়তে দেখেছি, যা আশাতীত। এ বছর সৌদির গ্রীষ্মকালীন প্রচারণায় বিদেশে না গিয়ে নিজেদের সমুদ্রসৈকত, জঙ্গল, পাহাড় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। নাগরিকরা এতে ব্যাপক সাড়া দেয়ায় হোটেলগুলো গড়ে ৮০ শতাংশ পূর্ণ থাকতে দেখা গেছে।

মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠছেন চীনা ব্যবসায়ীরা : করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর অবস্থা যখন নাজেহাল, সেখানে ভাইরাসটির উৎস হয়েও টানা চতুর্থ মাসে মুনাফা বেড়েছে চীনা ব্যবসায়ীদের। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) জানিয়েছে, গত বছরের চেয়ে এবারের আগস্টে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা বেড়েছে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ বা ৬১২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ইউয়ান (৮৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। গত জুলাইয়ে চীনের শিল্প খাতে বার্ষিক মুনাফা বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ আগস্টে এর পরিমাণ সামান্য কমলেও বার্ষিক হিসেবে টানা চতুর্থ মাসে মুনাফা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। গত জুলাইয়ে চীনের কাঁচামাল প্রস্তুতকারকদের মুনাফা বৃদ্ধির হার ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। আগস্টে সেটি আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সময়ে সাধারণ যন্ত্রাংশ প্রস্তুত খাতে লাভ বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ শিল্পের মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

করোনার চিকিৎসায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে ফ্লোরিডা : যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওকালায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ওপর নতুন এক ধরনের চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। আইসিএএম নামের একটি নতুন চিকিৎসা শুরু করেছেন চিকিৎসকরা। অ্যাডভেন্টহেলথ ওকালার ফার্মেসি বিভাগের পরিচালক ড. কারলেট নরউড উইলিয়ামস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আইসিএএম প্রোটোকলটি দেশে আবার চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। আইসিএএম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ থেকে ফুসফুসকে সুরক্ষা দেয়। এই চিকিৎসায় ভেন্টিলেশনের কোনো প্রয়োজন নেই। অ্যাডভেন্টহেলথ ওকালা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী।

ভারতে সংক্রমণ ৬০ লাখ ছুঁই ছুঁই : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো এক হাজার ১২৪ জন মারা গেছেন। একই সময়ে ৮৮ হাজার ৬০০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ রোগে মারা গেছেন ৯৪ হাজার ৫০৩ জন। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৫৩২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৯ লাখ ৪১ হাজার ৬২৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৯২ হাজার ৪৩ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহারাষ্ট্রে মারা গেছেন মোট ৩৫ হাজার ১৯১ জন। তামিলনাড়ুতে ৯ হাজার ২৩৩ জন, কর্ণাটকে ৮ হাজার ৫০৩ জন, অন্ধ্রপ্রদেশে ৫ হাজার ৬৬৩ জন, উত্তরপ্রদেশে ৫ হাজার ৫১৭ জন, দিল্লিতে ৫ হাজার ১৯৩ জন এবং পশ্চিমবঙ্গে ৪ হাজার ৭২১ জন। দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩ হাজার ৩৭২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে আরো ৪৬ জনের।

টিকা নিয়ে মানবজাতির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস : বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা প্রস্তুতকারক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গোটা মানবজাতির পাশে দাঁড়ানোর বড় ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে। শনিবার প্রচারিত রেকর্ড করা সেই বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে আজ আমি বিশ্ব সম্প্রদায়কে আশ্বাস দিচ্ছি যে, ভারতের টিকা উৎপাদন ও বিতরণের ক্ষমতাকে এই সঙ্কট মোকাবেলায় গোটা মানবজাতির সহায়তায় ব্যবহার করা হবে। ভারত টিকার তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে এগোচ্ছে এবং টিকা সরবরাহের জন্য বিশ্বের সব দেশকেই টিকা রাখার হিমঘর তৈরি এবং মজুদ বাড়াতে ভারত সহযোগিতা করবে।’

করোনা ঠেকাতে বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লন্ডনে বিক্ষোভ : করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্রিটিশ সরকারের আরোপ করা নতুন বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লন্ডনে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ত্রাফালগার স্কয়ারে জড়ো হওয়া হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ভিড় নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করা হয় বলে দাবি পুলিশের। এতে অন্তত তিন বিক্ষোভকারী ও চার পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। দ্বিতীয় দফা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশটির সরকারের আরোপ করা নতুন বিধিনিষেধ-নিয়মকানুন মানতে রাজি নয় দেশটির অনেক নাগরিক। গত সপ্তাহেও ‘আমাদের সম্মতি নেই’ শীর্ষক রথ্যালিতে যোগ দেয় বেশ কয়েক হাজার মানুষ। সেখান থেকে ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারের নতুন নিয়মের প্রতিবাদে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই মাস্ক পরে ছিলেন।

করোনামুক্তর ব্যাপারে যা বললেন ট্রুডো : কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশে কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) নির্মূল করা না গেলে এককভাবে কোনো দেশ কোভিডমুক্ত হতে পারবে না। তিনি কানাডিয়ানদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। কেননা শ্বাসকষ্টের সংক্রমণের সংখ্যা কানাডায় ক্রমাগত বাড়ছে। অন্টারিও ও কিউবিকের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ট্রুডো জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা নির্দেশিকা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা এখন যা করব তা আগত সপ্তাহ এবং মাসের জন্য সমালোচিত হবে।’ কানাডায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৫১ হাজার ৬৭১ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ হাজার ২৬২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৩০ হাজার ৩২৮ জন।

বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৯ লাখ ৯২ হাজার : কোভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৯ লাখ ৯২ হাজার ৯৮৪ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭৪ জনে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ কোটি ২৬ লাখ ১৫ হাজার ৪৯৪ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ৪৮৬ জন, আক্রান্ত হয়েছে ৭০ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮৫ জন। ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪১ হাজার ৪০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ লাখ ১৮ হাজার ৯৯১ জন। মেক্সিকোতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭৬ হাজার ২৪৩ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৪৩১ জন। যুক্তরাজ্যে করোনায় মারা গেছে ৪২ হাজার ৬০ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৮১৭ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইন্সে ছাঁটাই ৫১ সহস্রাধিক : করোনায় বিধ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইন্সগুলোর আরো ৫১ হাজার ৩০০ কর্মচারী ছাঁটাই করা হচ্ছে। সামনের বৃহস্পতিবার থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে যাবেন। এর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ১৬ হাজার ৩০০ এবং অন্যান্য এয়ারলাইন্সের রয়েছেন ৩৫ হাজার কর্মচারী। করোনায় এয়ারলাইন্স সেক্টরের এক লাখ কর্মচারীকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মার্চে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর সময় থেকেই এয়ারলাইন্সে যাত্রী কমেছে ৮০ শতাংশ। বেশ কটি এয়ারলাইন্স তার ফ্লাইট কমিয়েছে। কেউ কেউ দেউলিয়া ঘোষণা করে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করেছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের অফিস চালানোর সামর্থ্য নেই। এই এয়ারলাইন্সের কর্মচারী সংখ্যা ৭৯ হাজার।

যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের প্রতাপ কমেছে : একদা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ট্রাভেল ডকুমেন্টসধারী যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের সেই প্রতাপ কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখন অনেকটাই কমে গেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তো এ মহাদেশে ভ্রমণের নিষিদ্ধ দেশগুলোর তালিকায় এখনো রেখে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আমেরিকানরা এখনো উত্তরের প্রিয় গন্তব্য কানাডা কিংবা এশিয়ার প্রিয় গন্তব্যগুলো, যেমন থাইল্যান্ডের মতো দেশে ভ্রমণ করতে পারছেন না। অধিকাংশ আমেরিকান এখন অল্প দূরত্বের ভ্রমণে যান, যেখানে গাড়ি নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

কুয়েতে চাকরি হারাচ্ছেন প্রবাসীরা : করোনা সঙ্কটকালীন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে কর্মরত ৪০০ প্রবাসীকে তাদের কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দেশটির গণপূর্তমন্ত্রী ও আবাসনবিষয়ক রাজ্যমন্ত্রী ডা: রানা আল-ফারেস মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন খাতে কর্মরত ৪০০ জন প্রবাসী কর্মচারীর চাকরি বাতিলের কাজটি সম্পন্ন করবেন। প্রথম দিকে ১৫০ জন কর্মচারীকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। মন্ত্রী আল-ফারিস কুয়েতিকরণ নীতিমালার অংশ হিসেবে দেশটির নাগরিকদের প্রতিস্থাপনের জন্য সব প্রবাসী কর্মচারীর চাকরি থেকে বাতিল করতে চান।

জাপানে টিকার দিকনির্দেশনার খসড়া প্রণয়ন : জাপান সরকার করোনাভাইরাসের টিকাসংক্রান্ত এক অগ্রিম দিকনির্দেশনার খসড়া প্রণয়ন করেছে। খসড়ায় চিকিৎসা পেশাদার এবং প্রবীণ ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন। বলা হয়েছে, চিকিৎসকরা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকির মুখে আছেন এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে মারাত্মক উপসর্গ সহজেই দেখা দিতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং প্রবীণদের সেবা প্রদান কর্মীদের কোন পর্যায় পর্যন্ত অগ্রাধিকার দেয়া উচিত, তা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। সরকার এই টিকার সম্ভাব্য নেতিবাচক স্বাস্থ্যগত প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবজনিত যেকোনো ক্ষতির জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার উদ্দেশ্যে সরকার আইনগত ব্যবস্থাপনাও প্রস্তুত রাখবে।

টিকা নিতে ইচ্ছুক নন প্রায় অর্ধেক মার্কিনি : চলতি মাসের ৮-১৩ তারিখের মধ্যে আমেরিকার ১০ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে সমীক্ষা করেছে ওয়াশিংটনের পিউ রিসার্চ সেন্টার। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, আজই করোনার টিকা আবিষ্কার হলে, তা নিতে চান ৫১ শতাংশ মার্কিন। অর্থাৎ বাকি ৪৯ শতাংশ তা নিতে চান না। টিকা নিয়ে অনেকের মনে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ২১ শতাংশ নিশ্চিতভাবে জানিয়েছেন, তারা টিকা নিতে ইচ্ছুক। অথচ মে মাসে এই সংস্থার সমীক্ষা জানিয়েছিল, ৭২ শতাংশ মার্কিন নাগরিক করোনার টিকা নিতে আগ্রহী। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ৭৬ শতাংশ মার্কিনি শঙ্কিত। ৭২ শতাংশ জানিয়েছে, তারা টিকার সম্পর্কে আরো বেশি খোঁজখবর নিয়ে তবে তা প্রয়োগ করবেন। ৩১ শতাংশের মতে, তাদের টিকার প্রয়োজন নেই।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/531379