১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ১:২৬

দীর্ঘদিন পানিসঙ্কটে দনিয়া পাটেরবাগের বাসিন্দারা

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : ‘রাজধানীতে পানির কোনো সমস্যা নেই। এমনকি চাহিদার তুলনায় বেশী পানি উৎপাদন হচ্ছে’। এমন বক্তব্য ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্তার এমন বক্তব্যের সাথে মিল নেই এমন এলাকার সংখ্যা অনেক। পানি নিয়ে হাহাকারের চিত্র নিত্যদিনকার ঘটনা। এর মধ্যে দীর্ঘ প্রায় একবছর ধরে পানির সংকটে ভুগছে রাজধানীর দনিয়া এলাকার পাটেরবাগের বাসিন্দারা। সংকট সমাধানে সম্প্রতি নতুন পাম্প ও লাইন স্থাপন করলেও সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পানযোগ্য পানি পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। পুরোনো লাইন দিয়ে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা নোংরা, কালো ও দুর্গন্ধ। এ পানি পান করাসহ কোনো কাজেই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এ ব্যাপারে দ্রুতই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু কাজ শুরু হয়েছে বলে তারা জানান। এক কর্মকর্তা বলেন, পানির পাম্প থেকে এলাকাটির দূরত্ব বেশি। এছাড়া এলাকাটি একটু উচুঁতে হওয়ায় পানি সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।

প্রায় ৫০ হাজার লোকের বাসস্থান কদমতলির দক্ষিণ দনিয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওই এলাকার পাটেরবাগ ইতালি মার্কেট থেকে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এবং আহলে হাদীস মসজিদ থেকে মুনসাইন স্কুল পর্যন্ত এলাকার বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা গত এক বছর ধরে পানির সংকটে রয়েছেন। ওয়াসার মডস জোন-৭ এর পাম্প থেকে এ পানি সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি জোনে নতুন পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। একইসাথে পুরাতন পাম্প দিয়েও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নতুন পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ করলেও এলাকার মানুষ নিয়মিত পানি পাচ্ছেন না।

এজন্য অনেকে পাম্পে স্থাপিত ওয়াসার এটিএম বুথ থেকে পানি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাম্পের এটিএম বুথ থেকে পানি নিতে আসেন ওই এলাকার বাসিন্দা নুর এ আলম। তিনি বলেন, ওয়াসা বলছে, পানি সরবরাহ নিশ্চিৎ করতে নতুন পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তো বাসায় পানি পাইনা। প্রায়শ পাম্প থেকে পানি নিয়ে যেতে হয়। এছাড়া মাঝেমাঝে বাসায় যে পানি আসে তা সরাসরি খাওয়া যায় না। এজন্য টাকা দিয়ে কার্ড করে নিয়েছি। এ কার্ড দিয়ে পানি কিনে পান করি। এজন্য মাসে কয়েকশ টাকা খরচ হচ্ছে। পানির জন্য আমাদের দুই দিক থেকে খরচ করতে হচ্ছে। বাসায় যে পানি দেয়া হচ্ছে আগে ১১ টাকা করে নেয়া হলেও এখন প্রায় ১৫ টাকা করে দিতে হচ্ছে।

এই এলাকায় যে পানির সংকট তীব্র সেটি ওয়াসার কর্মকান্ডেই ফুটে উঠেছে। ওয়াসার মডস জোন-৭ এর পাটেরবাগ পানির পাম্পের গেটে একটি কাগজে পানি ছাড়ার সময়সূচী তুলে ধরেছে কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়েছে ‘পূর্ব দিকের লাইন ছাড়া হবে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত, নতুন লাইন খালপাড় ও পাটেরবাগ জামে মসজিদ এলাকায় বিকেল ৪ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এবং পশ্চিম দিকের লাইন দিয়ে ইতালি মার্কেট এলাকায় রাত ১০ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত পানি সরবরাহ করা হবে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসেবে- পানির যেকোন সমস্যার জন্য পাম্প অপারেটরের সাথে খারাপ আচরণ না করে ওয়াসার অফিসে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে’। ওয়াসার এই বিজ্ঞপ্তিতেই প্রমাণ করে, এই এলাকায় পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওই এলাকার ৪ এবং ৩ নম্বর রোডের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন। এলাকার ১৬০৫ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মিডিয়া কর্মী শরীফ হাসান বলেন, নতুন লাইন দিয়ে ঠিকমত পানি আসে না। পুরাতন লাইন দিয়ে যে পানি আসে তা কালো, নোংরা ও দুর্গন্ধ। এ পানি কোনো কাজে লাগানো যায় না। এলাকার মানুষ খাওয়ার জন্য মুক্তধারা আবাসিক এলাকার মসজিদ থেকে পানি নিয়ে আসেন। এজন্য সেখানে কিছু টাকাও দিতে হয়। মসজিদের জিম্মাদার আতাউর রহমান বলেন, আমাদের ডীপ টিউবওয়েল থেকে পানি তুলতে বিদ্যুত খরচ হয়। এজন্য অল্প কিছু টাকা নেই আমরা। মূলত এলাকার মানুষের খাবার পানির চাহিদা মেটাতে আমরা এ পানি দিয়ে থাকি। এলাকার বাসিন্দা শিমুল বলেন, নতুন লাইন স্থাপনের সময় আমরা বাড়িওয়ালারা সবাই মিলে ঠিকাদারকে এক লাখ টাকা দিয়েছি। কেউ এক হাজার আবার কেউ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু এখন পানি পাইনা। পুরাতন লাইন দিয়ে নোংরা পানি আসে। মানুষ পানির অভাবে খুব কষ্টে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কায়সার রহমানি বলেন, এক বছর আগে গ্যাসরোড থেকে ঝিলপাড় পর্যন্ত সাড়ে সাতশ ফুটের মত ওয়াসার নতুন পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষ ঠিকমত পানি পাচ্ছেনা। বাসিন্দারা খাবার পানির সংকটে রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা ওয়াসার স্থানীয় কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা বলছেন লাইনটি উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানি যাচ্ছে না।

ওয়াসার কাওরানবাজারের প্রধান অফিসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি গত জুলাই মাসে। কিন্তু গত দেড় মাসেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ওয়াসার মডস জোন-৭ এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাম্প থেকে তিনদিকে পানি দেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে পানি সরবরাহ করতে গিয়ে কিছুটা সংকট দেখা দেয়। আর ৪ নম্বর রোডে নতুন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি সেখানে নতুন পাম্প থেকে আলাদাভাবে তাদের সংযোগ দেয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

এ ব্যাপারে ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম শহীদ উদ্দিন বলেন, পানির সংকট সমাধানে সেখানে নতুন পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তবে কি কারণে মানুষ পানি পাচ্ছে না তা স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে দ্রুতই সমাধান করা হবে।

https://dailysangram.com/post/427200