৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ১:০১

পেঁয়াজের বাজারে আবারও সক্রিয় সিন্ডিকেট

পেঁয়াজের বাজারে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও অস্থির পেঁয়াজের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানেই এই নিত্যপণ্যের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। লাগামহীন এই ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। আর বিক্রেতারা বলছেন, এই ঊর্ধ্বগতি আরও কিছুদিন থাকতে পারে।

পেঁয়াজের বাজারের এই অস্থিরতার চিত্র উঠে এসেছে খোদ বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তৈরি দৈনন্দিন প্রতিবেদনেও। এখানে রাজধানীর ২২টি বাজারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা, এই সপ্তাহে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

আমদানিকারক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দেশের অনেক জেলায় বন্যার কারণে নদীতে ফেরি ও সড়কে স্বাভাবিক যান চলাচল করতে পারেনি। এতে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হতে যাওয়া, সিন্ডিকেটের কারসাজি ও বাড়তি দাম পেতে বিভিন্ন স্তরে পেঁয়াজ মজুদ রাখা হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভারতেও পেঁয়াজ উৎপাদন অঞ্চলগুলোতে বন্যা চলছে। অন্ধ্রপ্রদেশে পেঁয়াজের মোকামে শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণেও দেশটিতে পেঁয়াজের বাড়তে পারে বলে তারা জানান।

বিক্রেতারা বলছেন, বন্যার কারণে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই ওই দেশের বাজারেই পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। ফলে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের বাড়তি দামে তা কিনতে হচ্ছে। এতে আমদানির পরিমাণও কমেছে। আগে হিলি বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো। বর্তমানে আসছে ২০-২৫ ট্রাক।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সহিদ উল্লাহ বলেন, দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অনেক মোকামেই পেঁয়াজ মজুদ করে রাখা হচ্ছে। এই কারণে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে।

মালিবাগ কাঁচাবাজারের খুচরা-বিক্রেতা আলমাস মোল্লা বলেন, পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা সুযোগ খোঁজেন। এক মৌসুমে লোকসান দিলে তা আরেক মৌসুমে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি আরও বলেন, বাড়তি দামের আশায় অনেকেই গত বছর পেঁয়াজ মজুদ করেছিলেন। কিন্তু তখন দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুম চলে আসায় অনেককেই লোকসান দিতে হয়েছে। এবার মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে চলে এসেছে। তাই সময় থাকতেই আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

পেঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যে আনতে হলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা ও সুষ্ঠু মনিটরিংয়েই প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা, বিক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার যৌক্তিকতা কতটুকু, কতদিন তা ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে, কিভাবে দাম কমানো যায়, সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত সুষ্ঠু মনিটরিং ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমদানি হচ্ছে। এছাড়া, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। দাম স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, যারা মজুদ করবেন বা বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।

https://dailysangram.com/post/426416